ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ভাষা সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর বিলুপ্তি আমাদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন করবে। প্রথমত, বিভাগগুলোতে কর্মরত শিক্ষক ও কর্মচারীরা কর্মসংস্থান হারাবেন। দ্বিতীয়ত, এইসব বিভাগে অধ্যয়নরত বা সদ্য শেষ করেছে এমন ছাত্ররা বেশি দুর্ভোগের শিকার হবে। অধ্যয়নরতরা না পারবে অন্য কোথাও ভর্তি হতে, না পারবে এটা চালিয়ে যেতে। তৃতীয়ত, বিভিন্ন ভাষা আমাদের আন্তর্জাতিক সম্পর্কগুলোকে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। ওআইসিভুক্ত দেশ হিসেবে আমরা আরবি ভাষা বাদ দিতে পারব না। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ককে ধরে রাখতেও আরবি ভাষার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। চতুর্থত, বর্তমানে আমাদের সিনেমাশিল্প দেশের গণ্ডি পেরিয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে—এক্ষেত্রে ফারসি ভাষার প্রয়োজনীয়তাও লক্ষণীয়। তাছাড়া আমাদের দূতাবাস সংশ্লিষ্ট কাজগুলো পরিচালনার জন্য যেসব কর্মীর প্রয়োজন হয়, সেই প্রয়োজন মেটাতেও আরবি, ফারসি ও উর্দু বিভাগের প্রয়োজন রয়েছে। রোববার (২৯ ডিসেম্বর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানা যায়।
চিঠিতে আরও জানা যায়, এবার আসি ভিন্ন কথায়, তাহলে সমাধানটা কী? সমাধান হলো ছাত্রসংখ্যা কমানো। আমরা এইসব ভাষা সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো বন্ধ না করে আসনসংখ্যা কমিয়ে দিলে শিক্ষার মান যেমন বাড়বে, তেমনি কমবে বেকারত্বের হার। কর্মসংস্থান হবে প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থীর। অনেক গবেষণাধর্মী বিভাগ রয়েছে যেগুলোতে তুলনামূলক বেশি ছাত্র ভর্তি হওয়ায় তাদের গবেষণা ব্যাহত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, তাদের নির্দিষ্ট কর্মক্ষেত্র থাকা সত্ত্বেও চাকরির জন্য পড়তে হচ্ছে আলাদা পড়া যা তাদের গবেষণার চরম অন্তরায়। এসব বিভাগে ছাত্রসংখ্যা কমিয়ে ১৫/২০ জনে নিয়ে এলে তাদের গবেষণার মান বাড়ার পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রও নির্দিষ্ট থাকবে। আরবি, ফারসি, উর্দু এসব বিভাগে ১০০/১৫০ করে ছাত্র ভর্তি না করে ৩০/৪০ জন ছাত্র নেওয়া হলে দূতাবাসসহ ভাষাকেন্দ্রিক সকল সেক্টরের প্রয়োজন যেমন পূরণ হবে তেমনি বাড়বে ভাষা শিক্ষার মান। সর্বোপরি বিভাগের সংখ্যা না কমিয়ে ছাত্রসংখ্যা কমালেই শিক্ষার মানোন্নয়নের প্রকৃত উদ্দেশ্য সফল হবে বলে আমি মনে করি।
তানভীর আহমেদ : শিক্ষার্থী ও বিতার্কিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।