সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় ছয় আসামির ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পুলিশি পাহারায় বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) ল্যাবে ছয়জনের নমুনা নেয়া হয়।
এদিকে চিঠি পেয়েই ধর্ষণের ঘটনার দায় নিরূপণে কাজ শুরু করেছে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি। বৃহস্পতিবার তদন্ত কমিটির সদস্যরা মামলার বাদী ও ধর্ষিতার স্বামীকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং কলেজ অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলেন।
অপরদিকে এ ঘটনায় সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। তিনি বলেন, এমসি কলেজের ঘটনায় যে বা যারা জড়িত, তারা যে দলেরই হোক না কেন তাদের ছাড় দেয়া হবে না।
সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বৃহস্পতিবার কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
এদিকে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ধর্ষণের ঘটনায় কলেজ প্রশাসনের তদারকিতে ঘাটতির প্রমাণ পেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি।
বৃহস্পতিবার রাতে তদন্ত কমিটির প্রধান মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দেন।
তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনে ক্যাম্পাস নিরাপদ রাখতে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ, পর্যাপ্ত বাতি স্থাপন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্যাম্প স্থাপনসহ ৬ দফা সুপারিশ করেছে। তবে কলেজ প্রশাসনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো সুপারিশ করেনি।
জানা গেছে, মামলার এজাহারভুক্ত চার আসামি ও সন্দেহভাজন দুই আসামি ডিএনএ নমুনা দিয়েছেন। তারা হলেন- প্রধান আসামি ছাত্রলীগ নেতা সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, অর্জুন লস্কর, রবিউল ইসলাম এবং সন্দেহভাজন আসামি আইনুদ্দিন ও রাজন মিয়া।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) জ্যোতির্ময় সরকার এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, আদালতের অনুমতিসাপেক্ষে এজাহারভুক্ত দুই আসামি তারেকুল ইসলাম তারেক ও মাহফুজুর রহমান মাসুমেরও নমুনা সংগ্রহ করা হবে।
বিচার বিভাগীয় কমিটির তদন্ত শুরুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা খোরশেদ আলম।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার সকালে সিলেটের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ বজলুর রহমানকে প্রধান করে চার সদস্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের চিঠি আসে।
কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মমিনুন নেছা খানম, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবুল কাশেম ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শারমিন সুলতানা।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের শিকার হন এক গৃহবধূ। খবর পেয়ে রাতে গৃহবধূকে উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করে শাহপরান থানা পুলিশ।
এ ঘটনায় ছয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও তিনজনকে আসামি করে শনিবার সকালে নগরীর শাহপরান থানায় মামলা করেছিলেন ভুক্তভোগীর স্বামী।
এজাহারভুক্ত ছয় আসামিসহ মোট আটজনকে গ্রেফতার করে প্রত্যেককে পাঁচদিন করে রিমান্ডে নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।