ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় কিশোরগঞ্জ সদরের হাসমত উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের দপ্তরি হেলাল উদ্দিনের (৪৫) পা ভেঙে দিয়েছে বখাটেরা। এ ঘটনায় থানায় মামলা করায় গত বুধবার রাতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বাসায়ও হামলা চালায় ওই বখাটে ও তার সহযোগীরা।
হামলার প্রতিবাদে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের আখড়াবাজার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করে সদরের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা। তারা দ্রুত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানায়।
সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হাসমত উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক (দপ্তরি) সদর উপজেলার নগুয়া মহল্লার বাসিন্দা মো. হেলাল উদ্দিন বুধবার ক্লাস চলার সময়ে প্রধান ফটকে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
ওই সময় নগুয়ার বাসিন্দা মো. শাহজাহান মিয়ার বখাটে ছেলে সিদরাতুল আল আমিন (১৭) ও তার কয়েকজন সহযোগী বিদ্যালয়ে ঢুকতে গেলে তিনি বাধা দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা লাঠি দিয়ে পিটিয়ে হেলালের ডান পা ভেঙে ফেলে।
পরে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আহত হেলালকে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে পাঠানো হয় ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। বর্তমানে সেখানে তার চিকিৎসা চলছে।
প্রধান শিক্ষক মো. মোস্তাফিজুর রহমান ভূঞা বলেন, ‘বুধবার সন্ধ্যায় আমার সহযোগিতায় থানায় মামলা করেন দপ্তরির স্ত্রী খুকি আক্তার। থানা থেকে বের হতে না হতেই খবর আসে আমার বাসাতেও নাকি সন্ত্রাসীরা কয়েকটি মোটরসাইকেলে গিয়ে হামলা চালিয়েছে। তারা বাসার গেট কুপিয়ে তছনছ করে। তখন বাসার অন্য সদস্যরা ছিল না। এ অবস্থায় আমিসহ পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’
স্কুল পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি শরীফ আহমেদ সাদী জানান, হামলাকারীরা কিশোর বয়সী সন্ত্রাসী। ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করাসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে বেড়ায়। এ কারণে বিদ্যালয় চলাকালীন ফটক বন্ধ রাখা হয়। এদের নিয়ন্ত্রণ বা দমন করা না গেলে স্কুলে শিক্ষার পরিবেশ থাকবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ছাত্র-ছাত্রীরা জানায়, মানববন্ধনে যোগ দিলে উচিত শিক্ষা দেয়া হবে বলে গতকাল সকাল থেকে নানাভাবে তাদের হুমকি দিয়ে আসছিল বখাটেরা। তবে এসব অগ্রাহ্য করে বিভিন্ন স্কুলের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী মানববন্ধনে অংশ নেয়।
জেলা শিক্ষক সমিতি ও কর্মচারী ফেডারেশন আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশ থেকে দ্রুত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়। দুই ঘণ্টাব্যাপী কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন শিক্ষক নেতা রাবেয়া আক্তার খাতুন, আফাজুর রহমান খান, এ কে ফজলুল হক, মোকারম হোসেন শোকরানা, আবু বকর সিদ্দিক, আব্দুল বাতেন ফারুকী, কামাল উদ্দিন, হুমায়ুন কবির প্রমুখ।
পরে শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে মিছিল করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যান তারা। সেখানে জেলা প্রশাসকের কাছে একটি স্মারকলিপি দেন শিক্ষক নেতারা।
কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ওসি আবুবকর সিদ্দিক জানান, মামলার আগেই পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। দপ্তরিকে মারধর ও প্রধান শিক্ষকের বাসায় হামলাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে পুলিশ তৎপর রয়েছে।