ছুটিতে ৩ হাজার শিক্ষক, ১৩ লাখ আসন শূন্য, শিক্ষা কার্যক্রম বিপর্যস্ত - Dainikshiksha

ছুটিতে ৩ হাজার শিক্ষক, ১৩ লাখ আসন শূন্য, শিক্ষা কার্যক্রম বিপর্যস্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সারাদেশের ৩৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় তিন হাজার শিক্ষক ছুটিতে আছেন। ছুটিতে যাওয়া শিক্ষকদের বড় একট অংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে খ্যাপ মারেন। যেটাকে তাদের ভাষায় ‘খণ্ডকালীন কাজ’ বলা হয়। অনেকে ছুটি নিয়ে উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশে গেছেন, যাদের কেউ কেউ ছুটি শেষে আর দেশে ফিরছেন না। অননুমোদিত ছুটিতে থাকা এসব শিক্ষকের অনেকের খোঁজও নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে। ছুটির তালিকায় প্রেষণ ও লিয়েনে অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা শিক্ষকও আছেন। এ ছাড়া শিক্ষকদের বড় একটি অংশ ছুটি না নিয়েই বিভিন্ন এনজিওতে পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন। কোনো রকমে ক্লাসে হাজিরা দিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিতে বা পরামর্শ দিতে কিংবা শেয়ার ব্যবসায় যাওয়া শিক্ষকও অনেক আছেন। শিক্ষকদের এমন মানসিকতায় বিঘ্নিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম। বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

এদিকে ‍জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে উচ্চশিক্ষায় প্রতিবছর শূন্য থাকে প্রায় ১৩ লাখ আসন। ইউজিসি বলছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে আসন সংখ্যা ১৯ লাখ ১৪ হাজার ৪২০টি। এর মধ্যে ভর্তি হয় মাত্র ৬ লাখ ৩১ হাজার ৬৩ শিক্ষার্থী। ফলে প্রতিবছর আসন শূন্য থাকে ১২ লাখ ৮৩ হাজার ৩৫৭টি। আর স্নাতকোত্তর স্তরে আসন ১ লাখ ৭৭ হাজার ৭৪০টি। ভর্তি হয় ১ লাখ ১৯ হাজার ২৮২ জন। আসন শূন্য থাকে ৫৮ হাজার ৪৮৫টি। এই তথ্য বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু পাস কোর্স নয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য কোর্সেও ভর্তির সংখ্যা কাঙ্ক্ষিত নয়।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩৪ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩ হাজার শিক্ষক অন্তত পাঁচ ধরনের ছুটিতে আছেন। এর মধ্যে ২১০১ জন আছেন শিক্ষাছুটিতে, প্রেষণ ও লিয়েনে ৮৪ জন, বিনা বেতনে ৫৮ জন, অননুমোদিত ছুটিতে ১৭ জন। এ ছাড়া খণ্ডকালীন চাকরি বা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে অন্যত্র আছেন ৬৮০ জন। গত সপ্তাহে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। 

ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় প্রয়োজন বা সরকারি কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ বা সেবা নেয়ার প্রয়োজন আছে। সিনিয়র শিক্ষকদের একটি অংশ এমন সেবা দিয়ে থাকেন। ৩৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১৪ হাজার শিক্ষকের মধ্যে এমন ৮৪ জন আছেন। সেটা উদ্বেগের বিষয় নয়। সমস্যা হয় যখন কোনো শিক্ষক শিক্ষাছুটি নিয়ে বিদেশে গিয়ে লেখাপড়া শেষে দেশে না ফেরেন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় যখন কাউকে ছুটি দেয়, তখন প্রত্যাশা থাকে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা শেষে ফিরে দেশ-জাতিকে সেবা দেবেন। বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী সেভাবে চুক্তিও থাকে। কিন্তু অনেকে গিয়ে লাপাত্তা হয়ে যান। উন্নত জীবনের লোভে দেশকে ভুলে যান। এ ক্ষেত্রে কেউ কেউ ৫ বছরে নেয়া বেতন ও পাওনা ফেরত পর্যন্ত দেন না। অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাওনাদি পরিশোধ করেন। কিন্তু পাওনা পরিশোধই শেষকথা নয়। ওই শিক্ষক বেআইনি ও অনৈতিক কাজ করেছেন। এ ধরনের শিক্ষকদের শাস্তি হওয়া উচিত।

ইউজিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ হাজার ২৬৮ জন শিক্ষকের মধ্যে ২৯৪ জনই আছেন শিক্ষাছুটিতে। প্রেষণ ও লিয়েনে আছেন ১৪ জন, বিনা বেতনে ছুটিতে ১৯ জন, অননুমোদিত ছুটিতে ১ জন এবং খণ্ডকালীন ও চুক্তিভিত্তিক চাকরিতে আছেন ৩১৮ জন। এরপরই অবস্থান বুয়েটের। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৫১ জনের মধ্যে ১৭৮ জন শিক্ষাছুটিতে আছেন। এ ছাড়া প্রেষণ ও লিয়েনে ৩ জন, বিনা বেতনে ছুটিতে ১ জন এবং খণ্ডকালীন বা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে বাইরে চাকরি করছেন ৯৫ জন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, শিক্ষকদের উচ্চশিক্ষার প্রয়োজন আছে। সে জন্য আমরা শিক্ষাছুটি উৎসাহিত করি। এ ছাড়া জাতীয় প্রয়োজনে অনেকে সরকারি প্রতিষ্ঠানে বড় পদে যোগ দেন। সেটারও প্রয়োজন আছে। কিন্তু যে বা যারা ছুটি নিয়ে তার অপব্যবহার করেন, তারা অনৈতিক কাজ করেন। সে ক্ষেত্রে আমরা অত্যন্ত কঠোর। অননুমোদিত ছুটিতে থাকা শিক্ষকদের আমরা কয়েক দফায় চাকরিচ্যুত করেছি। খণ্ডকালীন বা চুক্তিভিত্তিক চাকরির জন্য আমরা নীতিমালা করেছি। এ ক্ষেত্রে নবীন শিক্ষকদের নিরুৎসাহিত করা হয়ে থাকে। কেননা, চাকরিতে যোগদানের পরের সময়টা নিজেকে গড়া এবং গবেষণার মাধ্যমে দেশকে উপকৃত করাই তাদের প্রধান কাজ হওয়া উচিত।

ইউজিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, কর্তব্যরত শিক্ষকদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপস্থিতির ক্ষেত্রে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) এগিয়ে। জবিতে মোট শিক্ষকের ২১ এবং বাকৃতিতে ২০ শতাংশই শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে। জবির মোট ৬২৬ জন শিক্ষকের মধ্যে ১১৯ জন শিক্ষাছুটিতে। ১৩ জন বিনা বেতনে এবং ১ জন প্রেষণে আছেন। বাকৃবিতে মোট ৫৯৯ জনের মধ্যে ১১৯ জনই বিভিন্ন ধরনের ছুটিতে আছেন। নতুন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থাও করুণ। ১৭৩ জনের মধ্যে ২৮ জন আছেন শিক্ষাছুটিতে।

অপেক্ষাকৃত নবীন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক বা সহযোগী অধ্যাপক পদে ব্যাপক স্বল্পতা আছে। ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের স্থায়ী পদও তেমন সৃষ্টি হয়নি। এ কারণে উচ্চশিক্ষা দারুণভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে আছে, অপেক্ষাকৃত কম প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে আকর্ষণীয় সুবিধা দিয়ে অধ্যাপক বা সহযোগী অধ্যাপকদের প্রেষণে পাঠানো। ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উন্নত চিকিৎসাসেবা ও মেডিকেল সেন্টার প্রতিষ্ঠা এবং ছেলেমেয়েদের মানসম্মত শিক্ষার জন্য স্কুল-কলেজ স্থাপন। এ ছাড়া অবসরপ্রাপ্তদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে বা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকদের লিয়েনে পাঠাতে নীতিমালা ও বিশেষ উদ্যোগ দরকার।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0044741630554199