শুরু হয়েছে নতুন অর্থবছর। এরই মধ্যে একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। প্রকাশিত ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ থাকবে ১৭২ দিন। অর্থাৎ বছরে ৪৭.১২ শতাংশ দিন বন্ধ থাকবে ক্যাম্পাস। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, সেমিস্টার পদ্ধতিতে ক্লাস ও পরীক্ষা নিতে প্রায় ৯ মাস সময় লাগার কথা। বিগত সময়ে বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষকরা নিয়মমাফিক ক্লাস না নিয়েই পরীক্ষা নিয়েছেন বলে দাবি শিক্ষার্থীদের। এ বছরও এমনটি আশঙ্কা তাদের।
ক্যালেন্ডার বিশ্লেষণ করে জানা যায়, এ বছরের ১৭২ দিন বন্ধ থাকবে ক্লাস, যা মোট দিনের ৪৭ শতাংশ। এর মধ্যে সাপ্তাহিক ছুটি ভোগ করবে ১০২ দিন। এ ছাড়া বাকি ৭০ দিন বন্ধ থাকবে ঈদুল আজহা, দুর্গাপূজা, গ্রীষ্মকালীন, শীতকালীনসহ অন্যান্য দিবস উপলক্ষে। অর্থাৎ এক বছরে ক্লাস ও পরীক্ষা নেয়ার জন্য সময় মাত্র ১৯৩ দিন। এর মধ্যে উপাচার্য তিন দিন ক্যাম্পাস ছুটি দেয়ার ক্ষমতা রাখেন।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকেই সব বিভাগে সেমিস্টার পদ্ধতি চালু করেছে। সে হিসাবে সব বিভাগের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষ এবং মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার পদ্ধতি চালু আছে।
অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, প্রতি সেমিস্টারে শিক্ষকরা কমপক্ষে সাড়ে তিন মাস ক্লাস নেবেন। আর ক্লাস শেষে ১৫ দিন বিরতি দিয়ে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নিতে হবে। বিভাগ ভেদে এক সেমিস্টারের পরীক্ষা সম্পন্ন করতে কমপক্ষে এক থেকে দেড় মাস সময় লাগে। সে হিসাবে বছরে দুই সেমিস্টারের কোর্স ও পরীক্ষা সম্পন্ন করতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ৯ মাস সময় লাগার কথা। অথচ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সময় পাচ্ছে মাত্র ১৯৩ দিন।
এদিকে প্রকৌশল, বিজ্ঞান ও জীববিজ্ঞান অনুষদের অধীনে রয়েছে ১১টি বিভাগ। এর প্রতিটিতে মূল পরীক্ষার পাশাপাশি রয়েছে ল্যাব পরীক্ষা। এসব বিভাগের তত্ত্বীয় পরীক্ষা শেষ হতে এক মাসেরও বেশি সময় লেগে যায় বলে জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে মূল পরীক্ষা শেষে ল্যাব পরীক্ষা শেষ করতে লেগে যায় আরো ১৫ দিন। এক সেমিস্টারের বেশির ভাগ সময় পরীক্ষা থাকায় ঠিকমতো কোর্স সম্পন্ন হচ্ছে না। এতে এসব বিভাগের শিক্ষার্থীরা সব থেকে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ফার্মেসি বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলে, এত কম সময়ে একটি ফাইনাল পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হওয়া সম্ভব না। আবার ক্লাস পূর্ণ করতে গেলে সেশনজটে পড়তে হবে।
এ বিষয়ে পরিসংখ্যান বিভাগের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. আলতাফ হোসেন রাসেল বলেন, ‘আমাদের ক্যালেন্ডারের সময় ও কোর্স কারিকুলামের সময় দুটি বিপরীতমুখী। এ সময়ের মধ্যে কোর্স কম্পিলিট করে পরীক্ষা নেয়া কষ্টকর।’
এদিকে শিক্ষকরা কোর্স শেষ না করেই পরীক্ষা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে শিক্ষার্থীরা জানায়, কিছু শিক্ষক কোর্স শেষ করছেন না। তাঁরা দু-একটি ক্লাস নিয়েই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সুতরাং ওই কোর্স সম্পর্কে কোনো ধারণাই পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। ফলে অনেকের মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এ ব্যাপারে ইতিহাস বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সুমাইয়া পারভীন বলেন, ‘ক্লাস না হওয়ার কারণে আমাদের মেধার বিকাশ ঘটছে না। আমরা বই থেকে মুখ ফিরিয়ে নোটকেন্দ্রিক জ্ঞান চর্চা করছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-উর-রশিদ আসকারী বলেন, ‘ক্রমান্বয়ে আমরা ছুটি কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি। এক দিনে তো ছুটি কমিয়ে আনা সম্ভব নয়। তবে নিজ নিজ বিভাগ চাইলে ছুটির দিনেও ক্লাস-পরীক্ষা নেও=য়া যেতে পারে। এ ব্যাপারে আমরা তাদের সহযোগিতা করছি।’