জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়: অদম্য তেরো বছর - দৈনিকশিক্ষা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়: অদম্য তেরো বছর

অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান |

প্রকৃতিতে এখন হেমন্তকাল। এখনও শরতের আমেজ কাটেনি। তাই চারপাশে শরতের সেই চিরচেনা রূপ দৃষ্টিগ্রাহ্য না হলেও কেটে যাচ্ছে সময়। বছর ঘুরে ফের উপস্থিত ২০ অক্টোবর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শুভ জন্মদিন। ১৪ তম বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ২০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় ২২ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় দিবস বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপন করা হচ্ছে।

১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ১১ দিন আগে ৯ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সুখবর বয়ে আনে। এদিন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেকের ১৪৬তম সভায় ১ হাজার ৯২০ কোটি ৯৪ লাখ ৩৯ হাজার টাকা ব্যয়ে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন : ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্প অনুমোদিত হয়। এর আগে বিগত ৩ অক্টোবর ভূমিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় ভূমি বরাদ্দ কমিটির ১১৭তম সভায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়নের পশ্চিমদি মৌজায় প্রায় ২০০ একর ভূমি বরাদ্দ করা হয়। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবর্গসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করছি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, শুভাকাক্সক্ষীসহ সব সদস্যকে; যাদের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ অবদানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির সাফল্যের সূচক এই বার্তাই দেয় যে, আগামীতে স্বল্প সময়ের মধ্যে দেশ-বিদেশে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার একটি রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। এ লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টি সমস্ত শর্ত বাস্তবায়নের দিকে ধাবমান। ১৩ বছর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতির জন্য যথেষ্ট সময় নয়। তারপরও স্বল্প সময়ে নানা সঙ্কট এবং সমস্যা পেরিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সব ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে চলছে। উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় বলতে প্রকৃত অর্থে যা বোঝানো হয়, তার সমস্ত কিছুই পরিপূর্ণ করবে প্রতিষ্ঠানটি। একটি কলেজ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতিতে আনয়নের মতো কঠিন কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে সত্যিকার অর্থেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান তৈরি, অনুসন্ধান, বিতরণ করছে।

এগিয়ে চলছে এমফিল, পিএইচডি প্রোগ্রামের মধ্যদিয়ে গবেষণা কার্যক্রম। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ এমফিল, পিএইচডি গবেষণা তত্ত্বাবধানের বাইরেও ইউজিসি ও সরকারী অর্থায়নে গবেষণা প্রকল্প পরিচালনা করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ গবেষণা। আর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা কাজে ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছে। অর্থের অভাবে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না, এমনটি বলার সুযোগ নেই। গবেষণা প্রকল্প থেকে বিশ্বমানের প্রকাশনা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি অনুষদের জার্নাল নিয়মিত বের হচ্ছে। কয়েকটি বিভাগও নিজস্ব জার্নাল বের করছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির যাবতীয় প্রকাশনা নিয়ে এবারই প্রথম অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অংশ নেয়। এর মাধ্যমে প্রকাশনা অঙ্গনে সবার নজরে আসে প্রতিষ্ঠানটি। আর অধিকতর গবেষণাধর্মী বই প্রকাশের লক্ষ্যে কাজ চলছে।

এটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় মাইলফলক। অবকাঠামোগত এবং আবাসিক সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য কেরানীগঞ্জে ইতোমধ্যে নতুন ক্যাম্পাস তৈরির সব পদক্ষেপ এগিয়ে যাচ্ছে। সেখানে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ক্যাম্পাসের সমস্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। বর্তমানে ক্যাম্পাসে অবকাঠামোগত সুবিধা বাড়ানোর সুযোগ নেই, তবু নতুন ভবনের কাজ সম্পন্ন হলে অবকাঠামোগত সমস্যা কিছুটা সমাধান হবে। বাংলাবাজারে মেয়েদের আবাসিক হলের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। বর্তমানে পরিবহন খাতে নতুন নতুন গাড়ি সংযুক্ত হয়েছে। বিভিন্ন রুটে গাড়ি যাতায়াত করছে। এ মাসেই বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহনে ছাত্রদের জন্য তিনটি ও শিক্ষকদের জন্য একটি বাস যুক্ত হবে। আরও নতুন গাড়ি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণে নানা ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়েছে।

ই-লাইব্রেরিতে ২০টি নতুন কম্পিউটার (ই-বুক) যুক্ত হয়েছে, আরও ৪০টির অর্ডার প্রক্রিয়াধীন আছে। ওয়াইফাইসহ সবাইকে বিশ্বপরিম-লে যুক্ত করতে আরও অধিকতর ইন্টারনেট যুক্ত করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের ফলাফল দ্রুত তৈরির জন্য বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে। আর্থিক লেনদেনও ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। এবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়টির আর একটি বড় অর্জন মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভর্তির লক্ষ্যে এমসিকিউ পদ্ধতি বাতিল করে বর্ণনামূলক লিখিত ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ; যা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বিরল দৃষ্টান্ত। কোন বিড়ম্বনা ছাড়াই লিখিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ডিজিটাল জালিয়াতি শতভাগ ঠেকানো গেছে বলে আমরা মনে করি। বর্তমানে শিক্ষার মান নিশ্চিত করা কঠিন কাজ। নানা সঙ্কটপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদান করছে। একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা, সবচেয়ে মেধাবী এবং যোগ্যতাসম্পন্নরাই এখানে শিক্ষক হিসেবে আছেন।

শিক্ষকরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উচ্চ শিক্ষাসম্পন্ন করছেন। অর্থাৎ মেধাবী শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। আমাদের শিক্ষার্থীরা ভাল ফল করছে, কর্মসংস্থানের দিক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। বিসিএসসহ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলোতে দেশের অনেক পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়কে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। মানসম্মত লেখাপড়া, পরীক্ষা ও ফলাফল নিয়মিতকরণ এবং শিক্ষকদের জ্ঞান অন্বেষী মনোভাব জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে গৌরবময় স্থানে উপনীত করছে। পুরান ঢাকার সাংস্কৃতিক পরিম-ল জোরদার করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। প্রতিদিন ক্যাম্পাসে কোন না কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েই থাকে। সুকুমারবৃত্তি চর্চার জন্য খোলা হয়েছে চারুকলা, নাট্যকলা, সঙ্গীতের মতো বিভাগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিধিও প্রসারিত হচ্ছে। আরও অধিকতর মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য যেসব শর্তের প্রয়োজন আমরা শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই মিলে তা পূরণ করছি। এক্ষেত্রে সরকার আমাদের যথেষ্ট সাহায্য-সহযোগিতা করছে। আগামীতেও সবার সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করি।

লেখক : উপাচার্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.008357048034668