ঢাকা মহানগরীর প্রায় সব বেসরকারি স্কুলে নিয়োগবোর্ডে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের প্রতিনিধি হিসেবে মনোনয়ন পেয়ে আসছেন সরকারি হাইস্কুলের একজন মাত্র প্রধান শিক্ষক। মহানগরীর ৬ শতাধিক স্কুলে গত ১ বছরে কমপক্ষে পাঁচশ প্রধানশিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ হয়েছে। এর প্রায় প্রতিটিতেই মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিনিধি হিসেবে মনোনয়ন পাওয়া সেই ভাগ্যবান সরকারি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকের নাম মো: শফিকুর রহমান। তিনি শেরেবাংলা নগর সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। সেই শফিককেই মিরপুর বাংলা স্কুল এন্ড কলেজে প্রধান শিক্ষক নিয়োগে ডিজির প্রতিনিধি মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। আগামী ১৫ মার্চ পরীক্ষা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। তবে, এবার ফেঁসে যাচ্ছেন শফিক ও তাকে বারবার মনোনয়নদাতা ঢাকা জেলার শিক্ষা কর্মকর্তা মো: বেনজীর আহমেদ। প্রতিটি নিয়োগে জেলা শিক্ষা অফিসার ও ডিজির প্রতিনিধি হিসেবে কিছু সুবিধা পেয়ে থাকেন।
অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মতে, বাংলা স্কুল এন্ড কলেজে প্রধান শিক্ষক নয়, অধ্যক্ষ নিয়োগ দিতে হবে। ঢাকাবোর্ডের নির্দেশ মতে, পদখালি থাকা স্কুল এন্ড কলেজ ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় ও সমজাতীয় সব প্রতিষ্ঠানে আগামী তিন মাসের মধ্যে অধ্যক্ষ নিয়োগ দিতে হবে। গত ৫ মার্চ জারি করা আদেশ এ কথা বলা হয়েছে। ওই আদেশ দেখার পরও প্রধান শিক্ষক হিসেবে পছন্দের একজনকে নিয়োগ দেয়ার জন্য বাংলা স্কুল এন্ড কলেজ কর্তৃপক্ষের একাংশের সাথে যুক্ত হয়েছেন শফিকুর ও বেনজীর। প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জন্য তড়িঘড়ি করে ডিজির প্রতিনিধিও মনোনয়ন দিয়েছেন। অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তার মতে, নিয়োগের বিধানের ভুল ব্যাখ্যাও দিচ্ছেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।
শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন উপ-পরিচালক দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ এর যে ধারার বরাত দিয়ে স্কুল এন্ড কলেজে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিতে চাইছেন তা ভুল। কারণ, স্কুল এন্ড কলেজের যদি কলেজ অংশ ননএমপিও হয়, তবে সেখানে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হবে। এছাড়াও গত জুনে জারি করা এমপিও নীতিমালার যেসব অংশ কার্যকর আর যেসব অংশ সংশোধনের অপেক্ষায় তা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ভালোভাবেই জানেন।
‘তবু প্রধান শিক্ষক নিয়োগে ডিজির প্রতিনিধি মনোনয়ন দেয়া বিস্ময়কর,’ যোগ করেন তিনি। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার এমন উদ্যোগ সন্দেহজনক ও অবৈধ অ্যাখ্যা দেন তিনি।
এদিকে গত একবছরে মহানগরীর সরকারি হাইস্কুলের কয়জন প্রধান শিক্ষককে কতটি বেসরকারি হাইস্কুলে নিয়োগবোর্ডে ডিজির প্রতিনিধি হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তার হিসেব চাওয়া হয়েছে ঢাকা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। রোববার ১০ মার্চ বিকেলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক ড. মো. আবদুল মান্নান জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে এ হিসেব জানতে চেয়েছেন। আগামীকালের (সোমবারের) মধ্যে এ হিসেব দিতে বলা হয়েছে। পরিচালক (মাধ্যমিক) রোববার দৈনিক শিক্ষাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি তেজগাঁও মডেল স্কুলের একটি তদন্ত প্রতিবেদনেও শেরে বাংলা হাইস্কেুলের প্রধান শিক্ষককে বারবার ডিজির প্রতিনিধি মনোনয়ন দেয়ায় নেতিবাচক মন্তব্য করা হয়েছে। ডেমরা, উত্তরা, মিরপুর, ধানমন্ডি সবখানেই শফিকুরকে পাওয়া যায়!
এছাড়া অবৈধভাবে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়া বন্ধ করতে গত ২০ ফেব্রুয়ারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক ও অভিভাবকরা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর অভিযোগ জমা দেন।
অভিযোগে বলা হয়, দীর্ঘদিনের পুরনো মাধ্যমিক পর্যায়ের এই প্রতিষ্ঠানে ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে উচ্চ মাধ্যমিক শাখা খোলা হয়। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠানটিকে স্কুল অ্যান্ড কলেজ হিসেবে অনুমোদন দেয়। ২০১৭ থেকে প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক এ বি এম আবদুছ ছালাম ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। কিন্তু সব বিধি-বিধান ভঙ্গ করে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠানটির জন্য প্রধান শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।
চেষ্টা করেও ঢাকা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মতামত পাওয়া যায়নি। শফিকুর ফোন রিসিভ করেনি।