জন্মনিবন্ধন সনদ, শিক্ষা সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্রে নামের ভুল : শিক্ষকের দায়িত্বই বেশি - দৈনিকশিক্ষা

জন্মনিবন্ধন সনদ, শিক্ষা সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্রে নামের ভুল : শিক্ষকের দায়িত্বই বেশি

মো. রহমত উল্লাহ্‌ |

জন্মনিবন্ধনের সময় শিশুর নিজের নাম, পিতার নাম ও মাতার নাম লিখতে হয়। নিবন্ধন সনদে লিখিত এই তিনটি নামই শিশুর পারিবারিক পরিচিতির বাহন। পরবর্তীতে এই নামেই তৈরি হয় তার জীবনের সব সনদ। তাই এই তিনটি নাম ও নামের বানান সঠিক হওয়া অত্যন্ত জরুরি। কেননা এই নিবন্ধন সনদ অনুসারেই শিশুদের নিজের নাম, পিতার নাম ও মাতার নাম লেখা হয় তার স্কুলের খাতায়। এই নামেই তৈরি হয় তার পিইসি পরীক্ষা পাসের সনদসহ জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি, স্নাতক, স্নাতকোত্তর এমনকি ডক্টরেট ডিগ্রির সনদ। জন্মনিবন্ধন সনদে কারো নামে কোনো রকম ভুল থাকলে সে ভুল থেকে যেতে পারে তার সব সনদে।

আমাদের দেশে বর্তমানে জন্মনিবন্ধন সনদে যে ধরণের ভুল বেশি পরিলক্ষিত হয়ে থাকে তা হচ্ছে প্রচলিত ভুল। যেমন- প্রায় সব শিশুর, শিশুর পিতার ও মাতার নামের আগেই ‘মোহাম্মদ’কে ‘মোঃ/মো:’ বা ‘মোহাঃ/মো:’, ‘মুহাম্মদ’কে ‘মুঃ’ বা ‘মুহাঃ’, ‘মোসাম্মৎ’কে ‘মোসাঃ’ ইত্যাদি লেখা হয়। এভাবে বিসর্গ (ঃ)/ কোলন (:) দিয়ে শব্দ সংক্ষেপ সঠিক নয়। বিসর্গ যতিচিহ্ন নয়, বর্ণ। বিসর্গের (ঃ) আছে উচ্চারণ ধ্বনি। আছে সঠিক ব্যবহারের নিয়মকানুন।

অথচ আমরা অনেকেই না জেনে, না বুঝে এই বিসর্গ (ঃ) ধ্বনিকে ব্যবহার করছি যতিচিহ্ন হিসেবে। শব্দ সংক্ষেপ করার জন্য ব্যবহার করতে হবে যতিচিহ্ন। কোলন (:) যতিচিহ্ন। তবে এটি সংক্ষিপ্তকরণ চিহ্ন নয়। একমাত্র দাঁড়ি (।) ব্যতীত সব যতিচিহ্নই আমরা পেয়েছি / নিয়েছি ইংরেজি ভাষা থেকে। তাই ব্যবহারও হচ্ছে ইংরেজি ভাষার রীতি অনুসারেই। সে মতে শব্দ সংক্ষেপ করার জন্য ব্যবহৃত হবে ডট (.)। বাংলায় আমরা এর নাম দিয়েছি একবিন্দু (.) বা শব্দ সংক্ষেপণ চিহ্ন। তাই উল্লিখিত শব্দগুলো সংক্ষেপে লিখতে চাইলে ‘মোহাম্মদ’কে ‘মো.’ বা ‘মোহা.’, ‘মুহাম্মদ’কে ‘মু.’ বা ‘মুহা.’, ‘মোসাম্মৎ’কে ‘মোসা.’ এভাবে লিখতে হবে। তবে এভাবে সংক্ষিপ্ত না লিখে প্রতিটি নামের অন্তর্গত সব শব্দের পূর্ণ রূপ লেখাই উত্তম। এছাড়াও অধিকাংশ শিশুর জন্ম সনদে তার পিতার ও মাতার নামের আগে/পরে হাজি, আলহাজ, ডক্টর, ডাক্তার, মাওলানা, মৌলভি, পণ্ডিত, এডভোকেট, অধ্যক্ষ/অধ্যক্ষা, আধ্যাপক/অধ্যাপিকা, বিএ, এমএ, বিএসসি, এমএসসি ইত্যাদি লেখা হয়। যা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে ঢাকা-এর বিদ্যালয় পরিদর্শক কর্তৃক গত ১৪ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে স্বাক্ষরিত আদেশ অনুসারে শিক্ষার্থীর শিক্ষা সনদে লেখা নিষেধ।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরাধীন থানা/উপজেলা শিক্ষা অফিসের আদেশ মোতাবেক শিশুর জন্মনিবন্ধন সনদে যেভাবে তার নাম, তার পিতা ও তার মাতার নাম লেখা থাকে সেভাবেই তাদের পিইসি পরীক্ষার জন্য নাম রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। ফলে জন্মনিবন্ধনে কারো নাম ভুল থাকলে সে ভুল থেকে যায় শিশুর পিইসি পাসের সনদে। আবার সেই শিক্ষার্থীর জেএসসি পরীক্ষার জন্য নাম রেজিস্ট্রেশন করার সময় দেখা যায় কোনো নামের আগে ‘হাজি/মাওলানা, ডঃ/ড:/ড., মোঃ/মো:’ এবং পরে ‘বিএ/এমএ,’ ইত্যাদি লিখতে গেলে ভুল ধরা হয় অন-লাইন সিস্টেমে। বিপাকে পড়তে হয় তখন। কেননা, কোনো নামের আগে ‘মোহাম্মদ/মোসাম্মৎ’ সংক্ষেপে লিখতে গেলে ‘মো./মোসা.’ লেখার নিয়ম মানতে হয় এবং নামের আগে/পরে ‘হাজি, আলহাজ, ডক্টর, ডাক্তার, মাওলানা, মৌলভি, পণ্ডিত, এডভোকেট, অধ্যক্ষ/অধ্যক্ষা, আধ্যাপক/অধ্যাপিকা, বিএ, এমএ, বিএসসি, এমএসসি’ ইত্যাদি লেখা যায় না। শিক্ষা বোর্ডের নিয়ম মানতে গেলে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর জন্মনিবন্ধন সনদ ও পিইসি পরীক্ষা পাসের সনদ সংশোধন প্রয়োজন হয়। প্রথমত, অভিভাবকরা এ দু’টি সনদ সংশোধন করতে চান না। তারা বুঝতে চান না যে, ‘মৃত/হাজি/ডাক্তার/পণ্ডিত’, ‘স্মর্গীয়/শ্রী/শ্রী শ্রী/শ্রী যুক্ত’ ইত্যাদি তাদের নামের অংশ নয়। তিনি নিজে জন্মগ্রহণের পর পর যে নাম রাখা হয়েছিল সেটিই তার নাম। তখন তিন ‘মৃত/হাজি/ডাক্তার/পণ্ডিত’, ‘স্মর্গীয়/শ্রী/শ্রী শ্রী/শ্রী যুক্ত’ ইত্যাদি ছিলেন না। সুতরাং এসব তার নামের অংশ হতে পারে না।

বাস্তবতা হচ্ছে, জন্মনিবন্ধন সনদ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে অত্যন্ত অজ্ঞ ও চরম উদাসীন। এই কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ অফিস, ওয়ার্ড কাউন্সিল অফিস, পৌরসভা অফিস ও সিটি কর্পোরেশন অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের এই বিষয়ে আরো দক্ষ ও মনোযোগী হওয়া অত্যাবশ্যক। তাদের দপ্তরে একাজে সংশ্লিষ্ট কম্পিউটারের সফটওয়ার এমনভাবে তৈরি করা/আপডেট করা জরুরি যাতে কারো নাম-ঠিকানা লেখার সময় এ ধরনের ভুল (বাই-ডিফল্ট) ইনপুট দেয়ার কোনো সুযোগ না থাকে। এছাড়া কোনো শিক্ষক, ডাক্তার, অফিসার ও জনপ্রতিনিধি যখন কারো জন্মনিবন্ধনের আবেদন ফরম ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়নের আবেদন ফরম সত্যায়ন করেন; তখন তাদেরও আরো জেনে, বুঝে, সতর্ক হয়ে এই কাজটি করা উচিত। যাতে আলোচিত ভুলগুলো না থাকে। অপরদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এমন একটি আদেশ জারি করা জরুরি যাতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়-মাদ্রাসার শিক্ষকগণ এবং থানা/উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারগণ কোনো শিক্ষার্থীর নাম রেজিস্ট্রেশনের সময় আলোচিত ভুলগুলো (যদি কারো জন্মনিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্রে থেকে থাকে) অবশ্যই সংশোধন করে দিতে বাধ্য হন। প্রয়োজনে জন্মনিবন্ধন সনদ ও/বা জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করিয়ে নেন।

এ কাজে সংশ্লিষ্ট সবাই জেনে, বুঝে, সচেতন ও দায়িত্ববান হয়ে সমন্বিত পদক্ষেপ নিয়ে কাজ করলে সহজেই বেরিয়ে আসা সম্ভব উল্লিখিত ভুলের বেড়াজাল থেকে এবং তা এখনই করা অত্যন্ত জরুরি।

মো. রহমত উল্লাহ্ : অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।

মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি - dainik shiksha মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! - dainik shiksha খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ - dainik shiksha এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা - dainik shiksha মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! - dainik shiksha মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037150382995605