জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) মাল্টিমিডিয়ার সাহায্যে একাডেমিক কার্যক্রমে সিন্ডিকেটের নিষেধাজ্ঞা থাকায় দুর্ভোগে পড়েছে শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৭তম সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, শিক্ষকরা মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে কোন ক্লাস নিতে পারবেন না। তবে কোর্সের প্রয়োজনে কোন ভিডিও অথবা সচিত্র কনটেন্ট শিক্ষার্থীদের দেখানোর প্রয়োজন হলে সেক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনায় মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া প্রতিটি কোর্সের জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা সুলভ মূল্যে বাজারে পাওয়া যায় এমন একটি বিশ্বমানের টেক্সট বই নির্ধারণ করে দেবেন। প্রয়োজনে একাধিক রেফারেন্স বইও ব্যবহার করা যাবে। কোন অবস্থাতেই শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের ক্লাসে নোট, গাইড বা লেকচার শিট দিতে পারবেন না।
জানা গেছে, মাল্টিমিডিয়ায় ক্লাস নেবার ক্ষেত্রে অধিকাংশ শিক্ষক নিজস্ব কন্টেন্ট বা স্লাইড ব্যবহার না করে অন্যের স্লাইড বা ইন্টারনেট থেকে স্লাইড ডাউনলোড করে নিজের বলে চালিয়ে দেন এবং একই স্লাইড দিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়ান। কিন্তু বেশিরভাগ সময় সিলিবাসের সাথে স্লাইডের টপিক্সের কোন মিল থাকে না। ফলে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে অমনোযোগী হয়ে পড়ে। তারা জানে, বাসায় গিয়ে হুবহু স্লাইড ডাউনলোড করা যাবে। শিক্ষকরা যেন ক্লাসে নিজের তৈরি লেকচার শিক্ষার্থীদের কাছে তুলে ধরতে এবং বোঝাতে পারেন, সে লক্ষ্যেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মাল্টিমিডিয়ায় ক্লাস বন্ধ করায় বুঝতে ও দেখতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাদের। ক্লাসের আকার বড় ও শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় পেছনের বেঞ্চের শিক্ষার্থীরা শুনতে পায় না। ক্লাসে টিচার হোয়াইট বোর্ডে লিখলেও দূর থেকে লেখা বুঝতে পারে না। প্রতিটি বিষয়ের জন্য সুলভ মূল্যে বাজারে পাওয়া যায়, এমন বিশ্বমানের টেক্সট বই নির্ধারণ করে দেবার কথা থাকলেও সেটা বাস্তবায়িত হয়নি।
অন্য দিকে লাইব্রেরি ও সেমিনারে পর্যাপ্ত বই না থাকায় আরো বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাদের। সেমিনারে বই থাকলেও একজন লেখকের একটির বেশি বই থাকে না । ওদিকে বই নির্ধারণ করা হলেও নির্ধারিত বই পাওয়া যায় না, কিংবা পাওয়া গেলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা এত কম যে, দরকারের সময় শিক্ষার্থীদের মধ্যে কাড়াকাড়ি শুরু হয়ে যায়। নির্ধারিত বই বাইরে সহজলভ্য নয়, আবার সেমিনার থেকে বই বাইরে নেওয়ায় নিষেধ থাকায় আরো সমস্যায় পড়েছে তারা।
ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফয়সাল আরেফিন বলেন, ‘মাল্টিমিডিয়ায় ক্লাস বন্ধ হওয়ায় যে কোনো বিষয় আয়ত্ত করতে বেগ পেতে হচ্ছে। স্লাইডের মাধ্যমে ছবি ব্যবহার করে যে কোনো জটিল বিষয় সহজে বোঝা যেত। বিজনেস স্ট্যাটিস্টিক, পি চার্ট ইত্যাদি হাতে এঁকে বোঝানোর চেয়ে স্লাইডের মাধ্যমে সহজ হতো।’
মনোবিজ্ঞান বিভাগের ১৩তম আবর্তনের শিক্ষার্থী মোঃ বাবু বলেন, ‘গতানুগতিক ধারায় লেকচার না দিয়ে প্রাকটিক্যালি ক্লাস নিলে শিক্ষার্থীদের সুবিধা হয়। এছাড়া সেমিনার ও লাইব্রেরিতে বই স্বল্পতার কারণে আমরা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি।’
এ বিষয়ে একাডেমিক কাউন্সিলের মনোনীত সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘মাল্টিমিডিয়ায় ক্লাস নিলে টিচাররা অনলাইন থেকে স্লাইড নিয়ে শো করেন। ফলে শিক্ষার্থীদের অর্জিনাল শিক্ষা দেওয়া সম্ভব হয় না। তবে বিশেষ প্রয়োজনে শিক্ষকরা অবশ্যই ব্যবহার করতে পারবেন।’