প্রতি বছর একুশে গ্রন্থমেলায় চার থেকে পাঁচ হাজার বই প্রকাশ হয়। এর মধ্যে মানসম্মত বই খুব বেশি নয় বলে অনেকেরই অভিযোগ। আবার অনেকের বক্তব্য- মানের বিষয়টি আপেক্ষিক।
কারণ, পাঠকের শ্রেণীবিভাগ যেমন আছে ঠিক একইভাবে মানের দিকটিও পাঠক ভেদে আলাদা। তবে লেখার মান, ভাষার ব্যবহার, চিত্রকল্প, পটভূমি, প্রুফ রিডিং, ছাপা, বাঁধাই- এসব দিক বিবেচনায় মেলায় প্রকাশিত অনেক বইই পিছিয়ে। অবশ্য ভালো বইয়ের সংখ্যাও একেবারে কম নয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ও সময় প্রকাশনীর প্রকাশক ফরিদ আহমেদ বলেন, বইমেলা এখন বইয়ের উৎসবে পরিণত হয়েছে।
তাই যারাই লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত তারা সবাই চান একটি করে বই প্রকাশ হোক। হয়তো তখনও সেই লেখকের পাণ্ডুলিপিটি ছাপার জন্য তৈরি নয়। কিন্তু বইটি ঠিকই প্রকাশ হচ্ছে। আর এ কারণেই বই প্রকাশের সংখ্যা বাড়ছে। বেশি বই প্রকাশ হচ্ছে বলেই অনেক সময় ভালো বই চাপা পড়ে যাচ্ছে। তবে প্রতি বছরই মেলায় মানসম্মত কিছু বই প্রকাশ হয়।
ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের প্রকাশক আদিত্য অন্তর বলেন, অপেশাদার প্রকাশনীগুলো থেকে প্রকাশিত মানসম্মত বইয়ের সংখ্যা কম। কিন্তু পেশাদার প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বইগুলো মোটামুটি মানসম্মত। তাই মেলায় অপেশাদার প্রকাশকের অংশগ্রহণ কমাতে হবে।
এবার মেলায় আসা নতুন কিছু ভালো বইয়ের খবর পাঠকদের জন্য :
বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘আমার দেখা নয়াচীন’র প্রথম সংস্করণ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। নতুন সংস্করণে আরও বিশ হাজার বই মঙ্গলবারই প্রকাশ হয়েছে।
অবসর থেকে প্রকাশ হয়েছে গোলাম মুরশিদের ‘রবীন্দ্রনাথের নারী ভাবনা’ বিষয়ক প্রবন্ধের বই। এতে রবিঠাকুরের নারী ভাবনা ও তার চিন্তার বিবর্তন তুলে ধরা হয়েছে।
পাঞ্জেরী থেকে প্রকাশ হয়েছে সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের ‘উপন্যাস ত্রয়ী’। এতে লেখকের ‘কানাগলির মানুষেরা’, ‘আজগুবি রাত’, ‘তিন পর্বের জীবন’ উপন্যাস এক মলাটে বন্দি হয়েছে। জার্নিম্যান বুকস প্রকাশ করেছে মুর্তজা বশীরের বই ‘চিত্রচর্চা’। সময় থেকে প্রকাশ হয়েছে মুহম্মদ জাফর ইকবালের বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ‘গ্লিনা’।
প্রথমা থেকে প্রকাশ হয়েছে আনিসুজ্জামানের ‘সমাজ-সংস্কৃতি-রাজনীতি : দশটি বক্তৃতা’, একই প্রকাশনী থেকে এসেছে আনিসুল হকের ‘এখানে থেমো না’। শোভা থেকে প্রকাশ হয়েছে সন্জীদা খাতুনের গবেষণাধর্মী গ্রন্থ ‘রবীন্দ্রকবিতার গহনে’, একই প্রকাশনা থেকে এসেছে আবুল আহসান চৌধুরীর ‘বঙ্গবন্ধু : অন্নদাশংকর রায়ের স্মৃতি অনুধ্যানে’, ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ থেকে এসেছে হাসান আজিজুল হকের ‘আমার রবীন্দ্রযাপন’।
তরুণ লেখদের মধ্যে অন্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশ হওয়া সুমন্ত আসলামের ‘যদি কখনো’ ও সাদাত হোসাইনের ‘মেঘেদের দিন’ মেলায় সাড়া ফেলেছে। জার্নিম্যান বুকস ও অন্যপ্রকাশ যৌথভাবে এনেছে আনা ইসলামের লেখা দেশের প্রথম নারী ভাস্কর নভেরা আহমেদ নিয়ে ‘নভেরা : বিভুঁইয়ে স্বভূমে’।
নতুন বই : মঙ্গলবার মেলার দশম দিনে ১৫২টি নতুন বই এসেছে। ঐতিহ্য থেকে প্রকাশিত হয়েছে আবদুল মান্নান সৈয়দের ‘নজরুল জীবনী’, পার্ল পাবলিকেশন্স এনেছে রামেল ইয়ামীনের কাব্যগ্রন্থ ‘এখানে কেউ নেই’, খেয়া প্রকাশনী এনেছে কর্নেল মো. রাব্বি আহসানের ‘কসমিক লাইফ’, শিশু গ্রন্থকুটির এনেছে ঝর্ণা দাশ পুরকায়স্থের ‘হ্যালো মি. গাবলু’, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স এনেছে শাহরিয়ারের ‘বেসিক আলী-১২’, সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের ‘উপন্যাস ত্রয়ী’, বদিউর রহমানের ‘ড্রিম গার্লস’, অবসর এনেছে নাবিল মুহতাসিমের ‘জুয়নবিদ্যা’, মহি মুহাম্মদের ‘ভাড়াবউ’, সাত ভাই চম্পা প্রকাশনী এনেছে খালেক বিন জয়েন উদ্দীনের ‘বঙ্গবন্ধু ও শেখ রাসেল’, ঐতিহ্য থেকে এসেছে মিজান মালিকের কাব্যগ্রন্থ ‘গল্প ছাড়া মলাট’, কথাপ্রকাশ এনেছে কাওছার মাহমুদের ‘প্রবাদের সঙ্গে কৌতুক ফ্রি’।
মেলামঞ্চের অনুষ্ঠান : গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় মোহাম্মদ আলী খান রচিত ‘ডাকটিকিট ও মুদ্রায় বঙ্গবন্ধ’ শীর্ষক গ্রন্থের আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডাক বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক আতাউর রহমান।
আলোচনায় অংশ নেন সাবেক সচিব শ্যামসুন্দর সিকদার ও কবি নজরুল ইন্সটিটিউটের প্রাক্তন নির্বাহী পরিচালক ইকরাম আহমেদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।
কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি সোহরাব পাশা, রহিমা আখতার কল্পনা, শিহাব শাহরিয়ার ও অনিকেত শামীম। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী মাহফুজুর রহমান, অনন্যা লাবণী পুতুল ও শহিদুল ইসলাম নাজু।
সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, রথীন্দ্রনাথ রায়, শফি মণ্ডল, সালমা চৌধুরী, রেজাউল করিম ও শুভ্রা দেবনাথ। সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় ছিল সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সমস্বর’।
লেখক বলছি : লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন সুহিতা সুলতানা, তাপস রায়, মাহবুব ময়ূখ রিশাদ ও সাঈদ আজাদ।