১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। এ দিনটি বাংলাদেশে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালিত হয়। বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন আজকের শিশুরা আগামী পৃথিবীর কর্ণধার এবং শিশুদের মধ্যেই ঘুমিয়ে আছে ভবিষৎ পৃথিবীর বিপুল সম্ভাবনা। তিনি শিশুদের অনেক ভালোবাসতেন এবং শিশুদের সার্বিক মানোন্নয়নের নিমিত্তে যে কোনো প্রকারের কর্মসূচি গ্রহণে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিতেন। শিশুদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য এবং বিশ্বমানের নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। শিশুরা যেন সৃজনশীল মুক্তমনের মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে তিনি সব সময়ই সেটা চাইতেন। বাঙালি জাতির দুর্ভাগ্য ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতকের বুলেটের আঘাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা মনে করেন বাংলাদেশের শিশুরা শিক্ষা ও সুস্থ বিনোদনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত। তাই তাঁর সুদক্ষ নেতৃত্বে পরিচালিত বাংলাদেশের মানুষ জাতির পিতার জম্মদিনটিকে ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। জাতির পিতার জন্মদিনকে শিশু দিবস হিসেবে পালন খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
১৭ মার্চ এমন এক মহান নেতার জন্মদিন, যার জন্ম না হলে আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব হতো না। গভীর দেশপ্রেম, সীমাহীন আত্মত্যাগ ও অতুলনীয় নেতৃত্বে তিনি হয়ে ওঠেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা। তার বীরত্বপূর্ণ নেতৃত্বে একটি দেশ স্বাধীন হয়েছে। বাংলার শোষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ে নেতৃত্বের জন্য জনগণ তাকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করেন। বাঙালির স্বাধীনতা অর্জনে তার সীমাহীন ত্যাগ-তিতিক্ষা, জেল-জুলুম, নির্যাতন-কারাবন্দির কারণে ইতিহাসে তাকে জাতির পিতার অভিধায় অভিষিক্ত করা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শেখ লুৎফর রহমান ও মোসাম্মৎ সাহারা খাতুনের চার কন্যা ও দুই পুত্রের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয় সন্তান। ছোট বেলায় তিনি খোকা নামেই সকলের কাছে পরিচিত ছিলেন। কালক্রমে এই খোকা হয়ে ওঠেন বাংলার মহানায়ক। তিনি গিমাডাঙ্গা প্রাইমারি স্কুল, গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুল ও গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুলে অধ্যয়ন করেন। স্কুলের ছাত্রত্বকালীন তিনি দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পাশে থাকতেন। মুষ্টি ভিক্ষার চাল উঠিয়ে গরিব ছেলেদের বই এবং পরীক্ষার খরচ বহন করা, বস্ত্রহীন পথচারী শিশুকে নিজের নতুন জামা পরিয়ে দিতেও তিনি কার্পণ্য করতেন না। সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের দায়িত্ব নেয়ার মতো মহৎ গুণ শক্তভাবেই ধারণ করেছিলেন সেই শৈশবেই।
মিশনারি স্কুলে পড়াকালীন ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী তাঁর স্কুল পরিদর্শনে এলে বঙ্গবন্ধু সাহস করে অতিথীদের সামনে গিয়ে স্কুলের ছাঁদ দিয়ে পানি পড়ে তা মেরামতের জন্য ছাত্রদের পক্ষ থেকে জোর দাবি জানান। ছাত্রের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, সৎ সাহস আর স্পষ্টবাদিতায় মুগ্ধ হয়ে মন্ত্রীমহোদয় অবিলম্বে ছাদ সংস্কারের জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিলেন। এ ঘটনার সময় বঙ্গবন্ধু মাত্র অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। অল্পবয়স থেকেই তাঁর রাজনৈতিক প্রতিভার প্রকাশ ঘটে। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেন এবং পরে বেঙ্গল মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি গোপালগঞ্জ মুসলিম ডিফেন্স কমিটির সেক্রেটারি নিযুক্ত হন। ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে এন্ট্রান্স পাস করে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে ইন্টারমিডিয়েট ক্লাসে ভর্তি হন এবং বেকার হোস্টেলে থাকতে শুরু করেন। সেই সময়ে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন জোরদার হলে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশিমের মতো কিংবদন্তি রাজনীতিবিদদের সাথে যোগাযোগ করেন। ঐ বছরেই বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান আন্দোলনের সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়ে পড়েন। ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রগতিশীল সংগঠন বেঙ্গল মুসলিম লীগে যোগ দেন ও কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে কুষ্টিয়ায় অনুষ্ঠিত নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন ও কলিকাতার ‘ফরিদপুরস্থ ডিসট্রিক্ট এসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এর দুই বছর পর ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের মহাসচিব নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএ পাস করেন।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে শেখ মুজিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ৪ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন যার মাধ্যমে তিনি উক্ত প্রদেশের অন্যতম প্রধান ছাত্রনেতায় পরিণত হন। ঐ বছরই ১৯ মার্চ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন পরিচালনা করেন। ফলে ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ১১ সেপ্টেম্বর তাঁকে আটক করা হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। (উল্লেখ্য যে, ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ আগস্ট তাঁকে পুনরায় ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেয়া হয়)। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে ভাষার প্রশ্নে তাঁর নেতৃত্বেই প্রথম প্রতিবাদ এবং ছাত্র ধর্মঘট শুরু হয় যার চূড়ান্ত রূপ নেয় ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারিতে। ধীরে ধীরে তিনি দূরদর্শী মহান এক রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আর্বিভূত হন। এসময় তিনি মুসলিম লীগ ছেড়ে সোহরাওয়ার্দী ও মাওলানা ভাসানীর সাথে মিলে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করেন এবং দলের প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দলের সাধারণ সম্পাদক এবং একই সালের ৯ জুলাই তিনি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে দলের সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত হন। ১৪ নভেম্বর নির্বাচনে অংশ গ্রহণের জন্য অন্যান্য দল নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ১০ মার্চ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং এই নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট ২৩৭টি আসনের মধ্যে ২২৩টিতে বিজয় অর্জন করে। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে যুক্তফ্রন্ট সরকারের কৃষি ও বন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব এবং ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং পূর্ব পাকিস্তানী রাজনীতিতে একজন আদর্শিক নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন।
১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ জানুয়ারি শেখ মুজিবের বাসায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে আওয়ামী লীগকে পুনরায় সুসংহত করার সিদ্ধান্ত হয় এবং শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের মহাসচিব ও মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ সভাপতি মনোনীত হন। ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী দলগুলোর জাতীয় সম্মেলনে তিনি ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন যা ছিল পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্ব¡শাসনের রূপরেখা। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ ফেব্রয়ারি ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে লাখো মানুষের জমায়াতে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের পর থেকে বিভিন্ন জাতীয় আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকার কারণে তিনি প্রায় এক দশকের ও বেশি সময় ধরে জেলখানায় ছিলেন।
১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ৫ ডিসেম্বর আয়োজিত এক জনসভায় বঙ্গবন্ধু পূর্ব বাংলার নামকরণ করেন ‘বাংলাদেশ’। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের ৭ ডিসেম্বরে সাধারণ নির্বাচনে শেখ মুজিবের নের্তৃত্বে আওয়ামী লীগ প্রাদেশিক আইনসভায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। আওয়ামী লীগ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে জাতীয় পরিষদের ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি এবং প্রাদেশিক পরিষদের ৩১০টি আসনের মধ্যে ৩০৫টি আসন লাভ করে। আওয়ামী লীগের সরকার গঠন ঠেকাতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সংসদের অধিবেশন ডাকা নিয়ে টালবাহানা শুরু করেন। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে এক ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু দেশের মানুষের মুক্তি ও স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রস্তুতির ডাক দেন। রেসকোর্সের জনসমুদ্রে ঘোষণা করেন “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”। বঙ্গবন্ধুর নের্তৃত্বে বাঙ্গালি জাতির এই জাগরণে ভিত ইয়াহিয়া খান সামরিক আইন জারি করেন, নিষিদ্ধ করেন আওয়ামী লীগকে এবং শেখ মুজিবকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। এরপর আসে ২৫ মার্চ, কালো রাত্রি। রাতের অন্ধকারে নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালির ওপর হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনারা, শুরু করে ‘‘অপারেশন সার্চলাইট” নামে ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকান্ড। পাকিস্তান সামরিক জান্তা তাঁকে আটক করে কারাগারে বন্দি করে। অবশ্য তার আগেই, পাক বাহিনীর অভিযান শুরু হলে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে তিঁনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং ইপিআর বার্তার মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ঘোষণা দেন।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই এপ্রিল শেখ মুজিবকে রাষ্ট্রপতি রেখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হয়। এ সরকারের অধীনেই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর ৩০ লাখ বাঙালির প্রাণের বিনিময়ে অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম নেয় বাংলাদেশ নামের একটি নতুন রাষ্ট্র। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু ফিরে আসেন তাঁর প্রিয় মাতৃভূমিতে। দেশে ফিরেই যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং শুরু করেন বাংলাদেশ পুনর্গঠনের কাজ। বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে স্বীকৃতি লাভ করার পর বঙ্গবন্ধু ওআইসি, জাতিসংঘ ও জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলনে বাংলাদেশের সদস্যপদ নিশ্চিত করেন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশে ভ্রমণ করে বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য সহযোগিতা চান। তিনি চারটি মূলনীতি যেমন “জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র” বিবেচনায় নিয়ে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ একটি সংবিধান রচনা করেন। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর থেকে নতুন সংবিধান কার্যকর করা হয় এবং ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে শেখ মুজিব ও তাঁর দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে প্রথম নির্বাচিত সরকার গঠন করে। তিনি প্রাথমিক শিক্ষা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা, খাদ্য, পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতকল্পে রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ডের বিস্তৃৃতি ঘটান। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রণীত বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় কৃষি, গ্রামীণ অবকাঠামো ও কুটির শিল্প উন্নয়নে অগ্রাধিকারমূলক সরকারি অর্থ বরাদ্দের নির্দেশ দেন।
দেশ যখন ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল, ঠিক তখনই আসে আরেকটি আঘাত। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্টের ভয়াবহ রাত্রে তাঁর পরিবারের সদস্যদের অধিকাংশের সঙ্গে তাঁকে হত্যা করা হয়। কেবল তাঁর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সেই সময় দেশের বাইরে ড. ওয়াজেদ মিয়া কর্মস্থলে অবস্থান করায় জীবনে বেঁচে যান। এই জঘন্য হত্যাকান্ডের ফলে তৈরি হয় রাজনৈতিক শূণ্যতা, ব্যাহত হয় গণতান্ত্রিক উন্নয়নের ধারা। বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে তিন বছর দেশ পরিচালনা করেন। একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সমসাময়িক ইতিহাস তাঁকে হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে বিবিসি'র বাংলা রেডিও সার্ভিসের পক্ষ থেকে সারা বিশ্বে যে জরিপ চালানো হয়, তাতে শেখ মুজিব সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে বিবেচিত হন। বঙ্গবন্ধু শুধু বাঙালিই নন, বিশ্বের নিপীড়িত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে অগ্রদূত ছিলেন।
১৭ মার্চ দিনটি জাতীয় শিশু দিবস। এ দিনটি লাখ লাখ শিশুর প্রিয় মানুষ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন । বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ২২ জুন শিশুদের কল্যাণে জাতীয় শিশু আইন জারি করেন। এই আইনের মাধ্যমে শিশুদের অধিকারের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে, সব ধরনের অবহেলা, শোষণ, নিষ্ঠুরতা, নির্যাতন ইত্যাদি থেকে নিরাপত্তার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর পাঁচ ছেলে-মেয়ের মধ্যে শেখ রাসেল সর্বকনিষ্ঠ। শেখ রাসেল ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্ট প্রত্যুষে তাঁর পরিবার এবং ব্যক্তিগত কর্মচারীদের সাথে তাঁকেও হত্যা করা হয়। শেখ রাসেলের স্মৃতিকে জাগরূক রাখার জন্য শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। বঙ্গবন্ধু কচি কাঁচার মেলা, খেলাঘরসহ অন্যান্য সংগঠনের শিশুবন্ধুদের অনুষ্ঠান ও সমাবেশে যেতেন। বঙ্গবন্ধু অতি সহজে শিশুদের সাথে মিশে যেতেন এবং শিশুরা ও তাঁকে আপন করে গ্রহণ করতো। বঙ্গবন্ধু তাঁর জন্মদিনে শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শিশুদের সঙ্গে জন্মদিনটি পালন করতেন। জন্মদিনে আজ আমরা তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসহায় ও অবহেলিত শিশুদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ধনাঢ্য ও বিত্তশালী ব্যক্তিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তাছাড়া শিশুদের অধিকার রক্ষায় এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অগ্রগতির জন্য আমাদের বর্তমানকে উৎসর্গ করতে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি এই শিশু দিবসে শিশুদের উদ্দেশে বলেন, আমি আজ তোমাদেরকে উৎসাহিত করছি যাতে তোমরা সবাই উচ্চশিক্ষিত হতে পারো, মাথা উঁচু করে বিশ্বদরবারে দাড়াতে পার। তিনি বলেন, আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যত নিশ্চিত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে যাতে তারা বিশ্বমানের নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।
লেখক : অধ্যাপক ড. মো. লোকমান হোসেন, পরিচালক, জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম), শিক্ষা মন্ত্রণালয়।