আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন জাতীয়করণের দাবিতে তৃতীয় ধাপে বাদপড়া প্রাথমিকের শিক্ষকরা। বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির ব্যানারে গত ২১শে জানুয়ারি থেকে প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষকরা। দুই দিন অবস্থান ও প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করেন তারা। এরপর ২৩শে জানুয়ারি থেকে অনশন কর্মসূচি শুরু করেন। এরপরও সরকারের কাছ থেকে দাবি আদায়ে ইতিবাচক সাড়া মিলছে না শিক্ষকদের। গত কয়েকদিন ধরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন প্রাথমিকের শিক্ষক নেতৃবৃন্দ।
বাংলাদেশ বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির মহাসচিব মোঃ কামাল হোসেন দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে বলেন, ‘আমরা প্রধানন্ত্রীর কার্যালয়ে বেশ কয়েকবার গিয়েছি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে। সেখান থেকেও আমরা কোন সাড়া পায়নি। তবে আমরা আশা করছি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আগামী রোববার অথবা সোমবারের মধ্যে জাতীয়করণের নির্দেশনা আসবে।
তিনি আরও বলেন, মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুসারে ২৭ মে ২০১২ তারিখের আগে যে সব বিদ্যালয়ের নিজ নামে জমি অধিগ্রহণ করা হয় সেসব বিদ্যালয় জাতীয়করণের আওতায় আনা হবে। এখানে আমাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। অবিলম্বে এসব বিদ্যালয়গুলো জাতীয়করণের আওতায় আনতে হবে।
সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক আসম জাফর ইকবাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি ঘোষণার মাধ্যমে দেশের ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা মতে সব শর্ত পূরণ করলেও ৪ হাজার ১৫৯টি বিদ্যালয় জাতীয়করণের আওতায় আনা হয়নি।
দিনাজপুর ফুলবাড়ীর আলদাতপুর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবু রায়হান বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৭৯ জন। প্রাথমিক সমাপনীতে ২০১৫, ২০১৬ ও ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে ভাল ফলাফল ছিল। এর মধ্যে ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে ফুলবাড়ী উপজেলার সব বেসরকারি বিদ্যালয়ের মধ্যে আমাদের বিদ্যালয় ফলাফলের দিক থেকে প্রথম হয়। অধিকাংশ শিক্ষার্থীই পাস করেছে। জিপিএ পাঁচও পেয়েছে বেশ কয়েকজন। এছাড়া জাতীয়করণে যে ধরনের অবকাঠামো থাকার শর্ত রয়েছে তার অধিকাংশই আমরা পূরণ করেছি। তাই আমাদের এ বিদ্যালয় জাতীয়করণের দাবি রাখে। জাতীয়করণ হলে এখানে শিক্ষার মান আরও বাড়বে।
শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত অনশনে ১৯১ জন শিক্ষক অসুস্থ হয়েছে পড়েছেন। ৩৫ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া অনেকেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে আবারও অনশনে যোগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষক নেতৃবৃন্দ।
বাংলাদেশ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সিনিয়র সহ সভাপতি শাহজাহান আলী (সাজু) বলেন, ‘জাতীয়করণ বঞ্চিত সারাদেশে এরকম কতটি স্কুল রয়েছে এটা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বলতে পারবে। কারণ প্রধানমন্ত্রীর জাতীয়করণের ঘোষণার তালিকা থেকে আমলারা কৌশলে তাদের বাদ দিয়েছিলেন। এ জন্য তারা বঞ্চিত হন।’ তিনি বলেন, ‘তাদের কর্মসূচিতে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা যোগ দিয়েছেন।
শুক্রবার অনশন কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক আ.স.ম জাফর ইকবাল, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক কল্যাণ সমিতির মহাসচিব আলহাজ্ব মুনসুর আলী, বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য সালেউদ্দিন বদরূল,আমিন ফরহাদ ফিরোজ উদ্দিন, মিজানুর রহমান, শাহনাজ পারভীন, আশরাফুল ইসলাম, নীলা রানী দাস, সুমন কুমার চাকী, শেখ রাজু আহমেদ, হারূনর রশিদ, বক্তিয়ার আহমেদ প্রমুখ।