জাতীয় কবিতা উৎসব শুরু কাল - দৈনিকশিক্ষা

জাতীয় কবিতা উৎসব শুরু কাল

নিজস্ব প্রতিবেদক |

শুরুটা সেই ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে। স্বৈরাচারের বুটের তলায় পিষ্ট যখন দেশ তখন কবিতার আশ্রয়ে সংঘবদ্ধ হয়েছিলেন কবিরা। শৃঙ্খল মুক্তির ডাক দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল প্রথম জাতীয় কবিতা উৎসব। সেই সূচনার পর প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রাম ও সঙ্কটে উৎসবকে হাতিয়ার করে দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় সোচ্চার ভূমিকা রেখেছে কবিরা। অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে সম্প্রীতির স্বদেশের বিনির্মাণে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে উৎসবের আয়োজক জাতীয় কবিতা পরিষদ।

এবার ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের কারণে ১ ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে ২ ফেব্রুয়ারি রবিবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৩৪তম জাতীয় কবিতা উৎসব। মুজিববর্ষের প্রতিধ্বনিময় হয়ে উঠবে এবারের উৎসব। কবিতা উৎসবের মাধ্যমে উদযাপিত হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। ‘মুজিব আমার স্বাধীনতার অমর কাব্যের কবি’ প্রতিপাদ্যে ২ ফেব্রুয়ারি সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার চত্বরে দুই দিনব্যাপী উৎসবের উদ্বোধন করবেন প্রখ্যাত কবি মহাদেব সাহা। এবারের উৎসবে তিন ভাষাসংগ্রামী কবিকে দেয়া হবে ‘জাতীয় কবিতা পরিষদ সম্মাননা’। তারা হলেন- কবি আহমদ রফিক, গীতিকবি আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ও কবি বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর। স্বদেশের কবিদের সঙ্গে উৎসবের অংশ নিচ্ছেন ভারত, সুইডেন, উজবেকিস্তান ও নেপালের অতিথি কবিবৃন্দ। বাংলাদেশসহ পাঁচ দেশের তিন শতাধিক কবি অংশগ্রহণ করবেন এবারের উৎসবে। ঢাকার পাশাপাশি বিভিন্ন জেলাসহ বিদেশের মাটিতেও অনুষ্ঠিত হবে ৩৪তম উৎসবটি। মুজিববর্ষ উপলক্ষে নেয়া হয়েছে বছরব্যাপী উৎসব কর্মসূচি।

পরিষদের সভাপতি মুহাম্মদ সামাদের একটি কবিতার পঙ্ক্তি থেকে নির্ধারিত হয়েছে এবারের স্লোগান। দুই দিনব্যাপী ঢাবি গ্রন্থাগার চত্বরের উৎসবে কবিদের স্বরচিত কবিতাপাঠ, নিবেদিত কবিতা, সেমিনার ও সঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে উদ্ভাসিত হবে মুজিববর্ষ। এবারের উৎসবে যুক্ত হয়েছে বছরব্যাপী আয়োজন। দেশব্যাপী নেয়া হয়েছে ‘মুজিববর্ষ কবিতাবর্ষ’ শীর্ষক বছরব্যাপী কর্মসূচি। সেই কর্মসূচিতে ঢাকার পাশাপাশি টুঙ্গিপাড়া, মুজিবনগরসহ কয়েকটি জেলা শহরে ছড়িয়ে যাবে কবিতা উৎসব। সেইসঙ্গে দেশের বাইরে লন্ডন, ম্যানচেস্টার, কলখাতা, শান্তিনিকেতনের বাংলাদেশ ভবন ও আগরতলায় অনুষ্ঠিত হবে উৎসবের অন্তর্ভুক্ত মুজিববর্ষের আয়োজন। এ আয়োজনে সক্রিয়ভাবে কাজ করবে কবিতা পরিষদের জেলা ও আন্তর্জাতিক শাখাগুলো।

শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে ৩৪তম জাতীয় কবিতা উৎসবের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়। উৎসবের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন পরিষদের সাধারণ কবি তারিক সুজাত। বক্তব্য রাখেন পরিষদের সভাপতি কবি মুহাম্মদ সামাদ, উৎসবের আহ্বায়ক কবি শিহাব সরকার, পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান সুলতান, কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়, বুলবুল মহলানবীশ, দিলারা হাফিজ, আনোয়ারা সৈয়দ প্রবাসী কবি শামীম আজাদসহ উৎসব ও পরিষদের বিভিন্ন নেতারা। অতিথি কবি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উজবেকিস্তানের কবি নাদিরা আবদুল্লায়েভ। সংবাদ সম্মেলনে উৎসবের প্রয়োজনী নিরাপত্তা এবং আজ শনিবার নির্বাচনের দিন বিদেশী কবিরা যেন সহজে ঢাকায় প্রবেশ করতে পারেন সেই ব্যবস্থার নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। 

মুহাম্মদ সামাদ বলেন, একাত্তরের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে লাখ লাখ মানুষকে অনুপ্রাণিত করে বজ্রকণ্ঠে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। ওই ভাষণটি ছিল বাঙালীর হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ কবিতা। মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানের মাধ্যমে পৃথিবীর বুকে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করে বাঙালির মুক্তিদাতা হিসেব ও জাতির পিতায় ভূষিত হন বঙ্গবন্ধু। তাই আমাদের স্বাধীনতার অমর কাব্যের কবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আজ থেকে চার দশক আগে রচিত ‘আমার মুজিব’ কবিতা থেকে এবারের উৎসবের মর্মবাণী এবং কবিতাটিকে উৎসব সঙ্গীত হিসেবে নির্বাচন করায় আমি অভিভূত হয়েছি। 

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবারের কবিতা উৎসবের মাধ্যমে উদযাপিত হবে বঙ্গবন্ধু জন্মশতবর্ষ। আর আগামী বছর ৩৫তম উৎসবে উদযাপিত স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। এ বছর দুই দিনের উৎসবে থাকবে কবিদের কবিতাপাঠ, সেমিনার, কবিতার গান, ছড়াপাঠ, আবৃত্তিসহ একাধিক অধিবেশন। ইতোমধ্যে দেশের নানা প্রান্তের দুই শতাধিক কবি নিবন্ধনের মাধ্যমে উৎসবের স্বরচিত কবিতা পাঠ নিশ্চিত করেছেন। আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে আরও শতাধিক কবিকে। এছাড়া উৎসবের প্রথম রোববার অনেকে নিবন্ধন করবেন। এবারের উৎসবের ভারত, সুইডেন, উজবেকিস্তান ও নেপালের প্রায় ১৫ জন কবি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন সুইডেনের কবি ও সঙ্গীতশিল্পী বেঙত সোদারহল এবং উজবেকিস্তানের কবি নাদিরা আবদুল্লাহয়েভে। ভারতের কবিদের মধ্যে রয়েছেন কলকাতার বীথি চট্টোপাধ্যায়, সেবন্তী ঘোষ, নীলাঞ্জনা বন্দ্যোপাধ্যায়, অমিত গোস্বামী, দীধিতি চক্রবতী, আবৃত্তিশিল্পী সৌমিত্র মিত্র। অংশ নিচ্ছেন দেশটির অসমের কবি অনুভব তুলাসি, এবং আগরতলার রাতুল দেব বর্মণ, অর্পিতা আচার্য্য ও তমাল শেখর দে। নেপাল থেকে অংশ নিচ্ছেন কবি ড. তুলাসি দিওয়াসা। উৎসবের সমাপনী দিন সোমবার গত উৎসবে ঘোষিত জাতীয় কবিতা উৎসব সম্মাননা তুলে দেয়া কবি মহাদেব সাহার হাতে। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় এই সম্মাননা প্রদান করা হবে। এদিন সন্ধ্যা ৬টায় ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের জাতীয় কবিতা পুরস্কারজয়ী কবির নাম ঘোষণা করা হবে। এদিন সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে ‘কবিতায় বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক সেমিনার। কামাল চৌধুরীর সভাপতিত্ব মূলপ্রবন্ধ পাঠ করবেন কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়। 

দোসরা ফেব্রুয়ারি সকালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, শিল্পী কামরুল হাসানের সমাধি এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সঙ্গে জাতীয় সঙ্গীত, একুশের গান এবং উৎসব সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে উৎসব শুরু হবে।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035519599914551