জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকের ৪ বছরের শিক্ষাজীবনে যেখানে ঠিকমতো ক্লাস করতে পারি না, শিক্ষার্জন করতে পারি না সেখানে গ্র্যাজুয়েশনের পর সমাবর্তন দাবি করাটা কতটুকু যৌক্তিক? না আমি সমাবর্তনের বিরোধিতা করছি না, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি অর্জন শেষে সমাবর্তন অবশ্যই আমাদেরও প্রাপ্য। কিন্তু সমাবর্তন চাওয়ার আগে আমাদের উচিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নের দাবি নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলা।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত ক্লাস রুম নেই, নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক। পরীক্ষার খাতার সঠিক মূল্যায়ন হয় না। আমাদের উচিত সমাবর্তনের আগে এসব বিষয় নিয়ে আন্দোলন করা।
আজ কয়েকদিন ধরে, বিশেষ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের পর থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সমাবর্তন দাবি করে যেভাবে এক্টিভ, ক্লাসের দাবিতে কিংবা পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে কিন্তু কখনোই তাদেরকে এরকম এক্টিভ হতে দেখিনি। তাহলে কি ভেবে নেব, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্লাস করার ইচ্ছে নেই?
আসলে আমরা যারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি তাদেরকে শিক্ষার্থী না বলে পরীক্ষার্থী বলাটাই শ্রেয় বলে মনে করি। কারণ আমরা ভর্তি হই, ফরম পূরণ করি, আর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি। এর মাঝে ক্লাস না করলেও চলে। এই প্রক্রিয়ায় প্রতিবছর ক্লাস না করিয়ে শুধুমাত্র পরীক্ষা নিয়ে হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দিচ্ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
শিক্ষার্থীদেরও এসব নিয়ে কোনো মাথা ব্যাথা নেই। কারণ খুব সহজেই ডিগ্রি পেয়ে যাচ্ছেন। বিশ্বের অন্য কোনো দেশে এত সহজে স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করা যায় কিনা আমার জানা নেই।
আজ যারা সমাবর্তনের দাবি জানাচ্ছেন, আমি তাদের সেই দাবিকে স্বাগত জানাচ্ছি। কিন্তু আমি মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য সবার সম্মিলিতভাবে দাবি জানানো উচিত। ৪ বছরে আমি যদি ঠিকমতো শিক্ষার্জন করতে না পারি তাহলে বছর শেষে কালো টুপি কিংবা গাউন পরিধান করে আমার কোনো লাভই হবে না। সুতরাং সমাবর্তনের সাথে সাথে পর্যাপ্ত ক্লাসের ব্যবস্থা, শিক্ষক নিয়োগ, পরীক্ষার খাতা সঠিকভাবে মূল্যায়ন এসবের জন্যও দাবি জানাতে হবে।
বিকাশ সরকার : শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন]