জাতীয়করণ হতে যাওয়া বেসরকারি কলেজের শিক্ষকরা শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত হতে পারবেন, আবার ননক্যাডার হিসেবেও থাকতে পারবেন। এই দুই ব্যবস্থা রেখেই নতুন আত্তীকরণ বিধিমালা প্রায় চূড়ান্ত করেছে সরকার। এর ভিত্তিতেই দেশের ২৮৩টি বেসরকারি কলেজকে জাতীয়করণ করার আদেশ জারি করতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর ফলে দুই বছর ধরে কলেজশিক্ষকদের মধ্যে ক্যাডার ও ননক্যাডার নিয়ে যে দ্বন্দ্ব চলছে, সেটা নিরসন হবে বলে মনে করছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। নতুন বিধিমালা আইন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। দৈনিক শিক্ষার হাতেও রয়েছে খসড়ার কপি।
তবে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে সরকারি কলেজে (শিক্ষা ক্যাডার) চাকরি পাওয়া শিক্ষক ও কর্মকর্তারা বলছেন, জাতীয়করণ হওয়া কলেজশিক্ষকদের ননক্যাডারই করতে হবে। অন্যথায় তাঁরা মানবেন না। যারা এ দাবি করছেন তাদের মধ্যে অনেকেই ১০০ নম্বরের বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ আবার কেউ কেউ ১০ শতাংশ কোটায় কোনও পরীক্ষা ছাড়াই শিক্ষা ক্যাডারে চাকরি পেয়েছেন।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, কলেজগুলোর জাতীয়করণের আদেশ দ্রুত যাতে জারি করা যায়, সে চেষ্টা চলছে। এ জন্য প্রয়োজনীয় যে ধাপগুলো শেষ করা দরকার, এখন তা করা হচ্ছে।
যেসব উপজেলায় সরকারি কলেজ নেই, সেগুলোতে একটি করে কলেজ জাতীয়করণের জন্য ২০১৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে তালিকাভুক্তির কাজ শুরু করে সরকার। বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে ২৮৩টি কলেজ জাতীয়করণের জন্য ঠিক করে ওই সব কলেজের সব সম্পত্তি ইতিমধ্যে সরকারের নামে দান (ডিড অব গিফট) করা হয়েছে। জাতীয়করণের তলিকায় থাকা কলেজগুলোতে ৮ থেকে ১০ হাজার শিক্ষক আছেন। নিয়মানুযায়ী কাঠামোভুক্ত (প্যাটার্ন) শিক্ষকেরা সরকারি হবেন। কিন্তু এসব শিক্ষকের অবস্থান, মর্যাদা এবং বদলি ও পদোন্নতি কীভাবে হবে, তা দুই বছরেরও ঠিক না হওয়ায় সরকারি আদেশ জারি হয়নি। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দাবি, ওই সব কলেজের শিক্ষকদের নন-ক্যাডারের রাখতে হবে। এ জন্য তাঁরা দীর্ঘদিন আন্দোলন করেছেন। আর জাতীয়করণ হতে যাওয়া কলেজশিক্ষকেরা চান পুরোনো নিয়মে তাঁদেরও ক্যাডারভুক্ত করতে হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বাস্তবতা ও দুই পক্ষের সম্মানের বিষয়টি মাথায় রেখে আত্তীকৃত বিধিমালা প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। বিধিমালা অনুযায়ী, জাতীয়করণ হতে যাওয়া কলেজশিক্ষকদের মধ্যে যাঁদের বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার যোগ্যতা আছে , তাঁরা সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) অধীনে পরীক্ষা দিয়ে বিসিএস ক্যাডারভুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবেন। যারা ক্যাডারভুক্ত হবেন, তাঁরা হওয়ার সুযোগ পাবেন। আর যাঁরা পরীক্ষা দেবেন না, তাাঁরা নন-ক্যাডার কর্মকর্তা হিসেবে নিজ নিজ কলেজেই থাকবেন। তাঁরা বদলি হতে পারবেন না। অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষরাও নিজ নিজ পদে থাকতে পারবেন।
তবে মন্ত্রণালয় যেভাবে আত্তীকরণ বিধিমালা করতে চলেছে, তাতেও আপত্তি তুলেছে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি। শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের এই সংগঠনটির মহাসচিব ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সচিব শাহেদুল খবীর চৌধুরী বলেন, জাতীয়করণ হওয়া কলেজশিক্ষকদের পৃথক বিধিমালায় নন-ক্যাডার রাখতে হবে এবং ওই সব কলেজের অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষসহ সব শিক্ষকের চাকরিকাল গণনা হবে যেদিন থেকে সরকারি হবে সেদিন থেকে। শুধু আর্থিক সুরক্ষার জন্য আগের চাকরির নির্ধারিত একটি অংশ গণনা করা যেতে পারে। তাঁদের আশঙ্কা, বিশেষ বিধানের মাধ্যমে ক্যাডারভুক্তির সুযোগ রাখা হলে কার্যত প্রায় সবাই ক্যাডারভুক্ত হয়ে যাবেন, এতে সমস্যা বাড়বে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, এত দিন যেসব কলেজ জাতীয়করণ হয়েছে, সেগুলোর শিক্ষকেরাও ক্যাডারভুক্ত হয়েছেন। এখন যেহেতু একসঙ্গে এতগুলো কলেজ জাতীয়করণ হচ্ছে, সেখানে সবাইকে ক্যাডারভুক্ত করলে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে ক্যাডারভুক্ত হওয়া কর্মকর্তারা বৈষম্যের শিকার হবেন।
আবার যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে ক্যাডারভুক্ত করা হয়েছে, তাই এই সুযোগ একেবারে বন্ধ করলে মামলার মুখে পড়ার আশঙ্কা আছে। জাতীয়করণ হতে যাওয়া কলেজশিক্ষকদের অনেকের চাকরির বয়স ১০ থেকে ১৫ বছর হয়ে গেছে। ক্যাডারভুক্ত হলে তাঁদের চাকরি হবে সর্বশেষ বিসিএসে উত্তীর্ণ ক্যাডার কর্মকর্তাদের নিচে। দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করা অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষদের অনেকে এটি চান না। আবার অনেকেই পিএসসির অধীনে পরীক্ষা দিতে চাইবেন না। হয়তো প্রভাষকদের অনেকে ক্যাডারভুক্ত হওয়ার চেষ্টা করবেন।
জাতীয়করণের তালিকায় থাকা নেত্রকোনা জেলার একটি কলেজের শিক্ষক কামরুল হাসান পাঠান বলেন, দুই পক্ষেরই যাতে সম্মান থাকে, সেভাবেই আত্তীকরণ বিধিমালা করে দ্রুত আদেশ জারি করা হোক।