জাতীয়করণ: হঠকারী আন্দোলন ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা - দৈনিকশিক্ষা

জাতীয়করণ: হঠকারী আন্দোলন ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা

অধ্যক্ষ মোঃ সাজিদুল ইসলাম |

শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের এক দফা দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কথিত অনশনরত একটি সংগঠন তাদের কর্মসূচি বাতিল করে যার যার বাড়ীতে চলে গেছেন। তাদের দাবি, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাঁর প্রতিনিধি বৈশাখী ভাতা ও ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে এবং আগামী বাজেটে জাতীয়করণের অর্থ বরাদ্দ করা হবে আশ্বাসের ভিত্তিতে তারা অনশন ভেঙ্গেছেন।’

প্রথম কথা হলো তাদের দাবি ছিল এক দফা জাতীয়করণ। ৫ শতাংশ কিংবা বৈশাখী ভাতার কোন দাবি তাদের ছিল না। বরং স্বাধীনতা শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনসহ অন্য কয়েকটি সংগঠন যখন শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে আসন্ন বৈশাখের আগেই বৈশাখী ভাতা ও ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রদানের দাবি জানিয়েছে তখন ঐ সংগঠনের নেতা কর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অকথ্য ভাষায় স্বাশিপ, শিক্ষক সমিতি, বাকশিসসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দকে গালমন্দ করেছেন। এমনকি সরকারের ‘দালাল’ আখ্যায়িত করেছে যা শুধু দৃষ্টিকটুই নয় গোটা শিক্ষক সমাজকে সাধারণ মানুষ তথা সাংবাদিকদের কাছে হেয় করেছে। শিক্ষকদের মর্যাদাকে ক্ষুন্ন করেছে।

হঠাৎ করে গজিয়ে ওঠা ফেইসবুক-ভিত্তিক এই শিক্ষক সংগঠনটির নেতা কর্মীদের হিংস্র ও অশিক্ষক সুলভ আচরণ প্রথম থেকেই প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। তাদের ফেইসবুক পেইজে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, জাতীয় শিক্ষক নেতৃবৃন্দ সম্পর্কে অত্যন্ত আপত্তিজনক বক্তব্য দেয়া হচ্ছে। তাদের আন্দোলন ছিল এক দফা জাতীয়করণ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে ঘোষণা দিয়েছেন একটি নীতিমালার ভিত্তিতে জাতীয়করণ করা হবে। যে মুহূর্তে সরকার ৮০ হাজার নন এমপিওভুক্ত শিক্ষককের এমপিওভুক্তি এবং প্রায় ৩৫ হাজার স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষকের জাতীয় বেতন স্কেলে অন্তর্ভুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন সেই মুহূর্তে হঠাৎ করে জাতীয়করণের এক দফা দাবিতে তারা প্রেসক্লাবে অনশন শুরু করে। তারা একাধিকবার কাতর প্রার্থনা করে শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেছেন। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার প্রতি আস্থা রাখার আহবান জানিয়ে ওইসব নামধারী শিক্ষকদের কর্মসূচি প্রত্যাহারের অনুরোধ করা হলে তারা তা প্রত্যাখান করেন। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে তাদের মঞ্চে গিয়ে জাতীয়করণের ঘোষণা দেবেন বলে প্রচার করে সাধারণ শিক্ষকদের প্রেসক্লাবে নিয়ে আসেন। তাদের প্রত্যেকটা আচরণেই অশিক্ষক ও উগ্রবাদিতার ছাপ পাওয়া যায়। তারা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বিরুদ্ধে, জাতীয় শিক্ষক নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্য থাকেন। এক পর্যায়ে যখন তাদের জারিজুরি ফাঁস হতে থাকে তখন কথিত অনশনে শিক্ষকদের অংশগ্রহণে ভাটা পড়ে। এসএসসি পরীক্ষাকে সামনে রেখে শিক্ষকরা যখন পরীক্ষামুখী হয়ে পড়ে তখন তারা কাতর মিনতি করে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর কারিগরি ও মাদরাসা সচিবকে এনে ইজ্জত রক্ষার জন্য তাদের অনশন ভাঙ্গাতে অনুরোধ করলে প্রতিমন্ত্রী তা প্রত্যাখান করেন। পরে কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব মহোদয় কথিত অনশনস্থলে যান। তিনি জাতীয়করণের বিষয়ে কোন কথাই বলেননি, ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এবং বৈশাখী ভাতার ব্যাপারে সরকারি উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন মাত্র। অথচ এগুলো তাদের দাবির মধ্যেই ছিল না। স্বাধীনতা শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দের সরকারের সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এবং বৈশাখী ভাতার বিষয়ে যখন সরকার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে তখন হঠকারী এই আন্দোলনকারীরা এটা তাদের অর্জন বলে কৃতিত্ব নেওয়ার অপচেষ্টা করে। যদিও তা দূরদৃষ্টিসম্পন্ন শিক্ষকদের কাছে শুধুই হাসির খোরাক যুগিয়েছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে অনশন ভাঙ্গাতে আসা অতিরিক্ত সচিব জাতীয়করণের বিষয়ে কোন কথাই বলেননি। তিনি শিক্ষকদেরকে কষ্ট না করে যার যার প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ১ ফেব্রুয়ারী থেকে অনুষ্ঠেয় এসএসসি/দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহনের পরামর্শ দেন। এ সময় অনশনকারীরা এক দফা জাতীয়করণের দাবীতে চিৎকার-চেচামেচি করা শুরু করলে তিনি বলেন- যেহেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে বিবৃতি দিয়েছেন এ ব্যাপারে এর বাইরে কিছু করার নেই। তাছাড়া বিষয়টি সাথে অনেকগুলো মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট রয়েছে এটা রাতারাতি সিদ্ধান্ত দেওয়ার বিষয় নয়। এর মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে আন্দোলকারীদের নেতারা নিজেরাই অতিরিক্ত সচিবের হাতে সরবত ধরিয়ে তা পান করতে থাকেন। এ সময় উপস্থিত আন্দোলনকারীদের মধ্যে থেকে ‘দালাল’ বলে স্লোগান ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। এ অবস্থার মধ্যেই সরকারী কর্মকর্তাদের চলে যেতে দেখা যায়। এর পর পরই ঐ সংগঠনের নেতারা তাদের ফেইসবুক পেইজে ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি, বৈশাখী ভাতা প্রদানের ঘোষনা এবং আগামী বাজেটে জাতীয়করণের জন্য বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হবে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীর পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়ার প্রেক্ষিতে অনশন প্রত্যাহার করা হয়েছে মর্মে দাবি করেন। তারা তাদের ফেইসবুক পেইজে তা প্রকাশ করেন। যদিও বিভিন্ন গণমাধ্যমে ওই হাস্যকার প্রেসবিজ্ঞপ্তি পাঠালে তা প্রকাশ করেনি প্রাজ্ঞ সাংবাদিকরা।

শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবী এদেশের সর্বস্তরের শিক্ষক-কর্মচারীর। বেসরকারী শিক্ষকদের ১০০ শতাংশ বেতন এবং শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবীতে দীর্ঘদিন যাবৎ আন্দোলন হয়েছে। এই দাবীতে ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে শিক্ষক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের মিছিলে পুলিশী হামলায় সংগঠনের আহবায়ক বর্তমানে স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মোঃ শাহজাহান আলম সাজু ও মনি হালদার আহত হয়েছিলেন। জাতীয়করণের জন্য যেখানে সকল শিক্ষক সংগঠন ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন সেখানে ফেইসবুকভিত্তিক সংগঠন বেসরকারী শিক্ষক ফোরামের কতিপয় নামধারী শিক্ষক নেতা কর্মীরা অপরাপর সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং সরকারের উ” পদস্থ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অসৌজন্যমুলক আচরণ কেবল দুঃখজনকই নয় শিক্ষকদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে জাতীয়করণের মূল দাবী বাধাগ্রস্থ করার ষড়যন্ত্র কি না তাও ভেবে দেখা দরকার।

লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা, সহ-সভাপতি, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ। সাবেক অধ্যক্ষ, ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজ।

[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন]

জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0059070587158203