জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হলে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আরও বলেন, ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন মেনে নেয়া হবে না। বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে দুস্থ ও অসচ্ছল সাংবাদিকদের আর্থিক সহায়তা দেয়ার জন্য এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কথায় কথায় ভিসির বিরুদ্ধে আন্দোলন। ভিসিকে দুর্নীতিবাজ বলছে। এখানে আমার একটা স্পষ্ট কথা, যারা ভিসির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনছে, তাদেরকে কিন্তু এই অভিযোগ প্রমাণ করতে হবে এবং তথ্য দিতে হবে, তারা যদি তথ্য দিতে পারেন নিশ্চয়ই আমরা ব্যবস্থা নেবো। এবং অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।
এ সময় রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র আবরারের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রথম আলো আয়োজকদের অবহেলাই স্কুলছাত্র আবরারের মৃত্যুর জন্য দায়ী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের যে ঘটনা ঘটলো, আয়োজকরা এটাকে এতটা নেগলেক্ট করেছে! বাচ্চাটা মারা গেছে, এরপরও ঘটনাটা চাপা দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে। ধানমন্ডিতে এতগুলো হাসপাতাল, তবুও মহাখালীতে নিয়ে গেল। প্রথম আলো এই ধরনের একটা ঘটনা কীভাবে ঘটায়? তাদের কোনও দায়বদ্ধতা নেই? ছোট ছোট বাচ্চারা এখানে পড়াশোনা করছে। তাদের নিরাপত্তা না দেখা এটাও তো গর্হিত অপরাধ। এটা তো বরদাশত করা যায় না।’
এর আগে গতকাল বুধবার বিকেলে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিলে জাবি ভিসির বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা উপাচার্যের বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নিয়ে আমাদের কাছে আসেননি। আমাদের সাথে বৈঠক করে বলেছিলেন ৮ নভেম্বরের মধ্যে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দেবেন কিন্তু তা না করে নতুন করে আন্দোলন শুরু করলেন। এর পেছনে তৃতীয় পক্ষ থাকতে পারে বলেও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন উপমন্ত্রী। বুধবার (৬ নভেম্বর) বিকাল সাড়ে ৩টায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে তিনি একথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, তবে এই পরিস্থিতিতে এই অবস্থায় তৃতীয় পক্ষ সুযোগ নিতে পারে। কারণ তারা মন্ত্রীর সাথে মিটিং করে গিয়েও আবার আন্দোলন শুরু করেছেন। তারা জানিয়েছিলেন ৮ তারিখের মধ্যে লিখিত অভিযোগ দিবেন। কিন্তু কোনো অভিযোগ নিয়ে আসেননি।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে সকলকে আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শিক্ষা উপমন্ত্রী আরও বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দুই পক্ষ হয়ে আন্দোলন করা হচ্ছে। উপাচার্যের পক্ষে-বিপক্ষে আন্দোলন চলছে। যদিও ভিসির বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সুস্পষ্টভাবে কোনও অভিযোগ দেয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি নিজ বাসভবনে আন্দোলনকারীদের সাথে আলোচনা করেছেন। তারা ৮ নভেম্বরের মধ্যে সুস্পষ্ট অভিযোগ জমা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তার আগেই কেন উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হলো তা আমার বোধগম্য নয়। এখানে শিক্ষার্থীদের অপব্যবহার করে কোনো তৃতীয় পক্ষ কি ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে কিনা সে বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। এসময় উপস্থিত সাংবাদিকরা শিক্ষা উপমন্ত্রীকে প্রশ্ন ছোঁড়েন সরকার আন্দোলনকারীদের ফিরে আসার আহ্বান জানাচ্ছে কিনা, সে প্রশ্নের কোনো সুস্পষ্ট জবাব দেননি শিক্ষা উপমন্ত্রী।