জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়ন প্রকল্প ঘিরে চলমান আন্দোলন আরও জোরদার হচ্ছে। আন্দোলনকারী দুই শিক্ষার্থীকে মারধরের ফলে ভেস্তে গেছে প্রশাসনের আলোচনা, আন্দোলনে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষকরাও। বিক্ষোভ মিছিল ও পথ নাটক করেছে শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে কর্মবিরতি, পদযাত্রা ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে শিক্ষকদের একাংশ।
রোববার দুপুরে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও পথ নাটক করে আন্দোলনকারীরা। এ ছাড়াও একই ব্যানারে শিক্ষকদের একটি অংশ কর্মবিরতি, পদযাত্রা ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে। আন্দোলনকারীদের তিন দফা দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে সমাবেশ ও কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকরা।
সমাবেশে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘মহাপরিকল্পনার দুর্নীতির সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে সন্ত্রাস। সন্ত্রাস এবং আধিপত্য যদি অব্যাহত থাকে তাহলে উদ্ভূত সমস্যার সমাধান হবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় জনগণের টাকায় চলে সে ক্ষেত্রে এখানে কি হচ্ছে সেটা জানার অধিকার দেশের সাধারণ মানুষের আছে।’
প্রতিবাদ সমাবেশে শিক্ষকরা দাবি করেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে যে মাস্টারপ্ল্যান অনুসরণ করা হচ্ছে তা অপরিকল্পিত-অস্বচ্ছ। এ ছাড়া মেগা প্রকল্পের টাকা দুর্নীতি ও টেন্ডার ছিনতাইয়ের বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করেন তারা। অপরিকল্পিত উন্নয়ন প্রকল্প পুনর্বিন্যাসসহ অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে পুরো প্রকল্প বাস্তবায়ন করার দাবি জানান তারা। এ সময় ২৫-৩০ জন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
বাংলা বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিম তালুকদারের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক কামরুল আহসান, অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক নূরুল ইসলাম, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক সাদিয়া আহমদ, অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, অধ্যাপক খবির উদ্দিন প্রমুখ। উল্লেখ্য, অপরিকল্পনা, দুর্নীতির অভিযাগে বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও মাস্টারপ্ল্যান পুনর্বিন্যাসের ৩ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, ৭ সেপ্টেম্বর শনিবার আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম সাইমুমকে মারধর করেন শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অভিষেক মণ্ডল। এ ছাড়াও গত ২৭ আগস্ট চলমান আন্দোলনের কর্মসূচি মশাল মিছিলে অংশগ্রহণ করার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নেতা সোহায়েব বিন মাসুদকে মারধর করেন এক ছাত্রলীগ কর্মী। মারধরের প্রতিবাদে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করেন।
ছাত্রলীগের বিক্ষোভ মিছিল : আন্দোলনের নামে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। রোববার দুপুরে ক্যাম্পাসে মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানা।
জানা যায়, আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মারধরকারীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করে। গত ৭ সেপ্টেম্বর শনিবার সকালে আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম সাইমুমকে মারধর করেন শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অভিষেক মণ্ডল। এদিকে অভিষেক মণ্ডল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী হওয়ায় মারধরকারীর অভিযোগের ভিত্তিতে থানার দ্বারস্থ হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে শাখা ছাত্রলীগ।