জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য ফারজানা ইসলামের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ধর্মঘট চলছে। এদিকে ‘ষড়যন্ত্র’ করে উপাচার্যের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা অভিযোগ’ তোলা হয়েছে—এমন দাবি তুলে মানববন্ধন করেছেন উপাচার্যপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ।
এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে আন্দোলনকারীরা বুধবার (২অক্টোবর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস চলাচলেও বাধা দেওয়া হয়।
এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অবরোধের পাশাপাশি ক্যাম্পাসে সর্বাত্মক ধর্মঘট পালন করছেন। ক্লাস ও পরীক্ষা নেয়া থেকে বিরত রয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা।
আরও পড়ুন: আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করবেন না জাবি উপাচার্য
আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, বুধ ও বৃহস্পতিবার দুই দিন তাদের এই ‘সর্বাত্মক ধর্মঘট’ চলবে। তবে পূর্ব নির্ধারিত ফাইনাল পরীক্ষা অবরোধের আওতামুক্ত থাকবে।
‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে এ আন্দোলনে সক্রিয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নজির আমিন চৌধুরী জানান, সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে তাদের অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়।
এর আগে অবরোধ ঠেকাতে রাত দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরিবহন পুল থেকে বাস সরিয়ে ফেলছে খবর পেয়ে শিক্ষার্থীরা তা ‘বানচাল’ করে দেয় বলে জানান তিনি।তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন অফিসের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক আলী আজম তালুকদার দাবি করেন, বাস চলাচলে ‘তেমন বিঘ্ন হয়নি’।
উপাচার্যপন্থীদের মানববন্ধন
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে অপসারণের দাবিতে চলমান আন্দোলনের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন উপাচার্যের সমর্থক শিক্ষকদের সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ’।
বুধবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বিভিন্ন বিভাগের দেড়-শতাধিক শিক্ষক এতে অংশ নেন।
মানববন্ধনে তারা দাবি করেন, একটি স্বার্থান্বেষী মহল উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ তুলে বিশ্ববিদ্যালয়কে অচলের ষড়যন্ত্র করছে।
সময় জাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার জন্য বার বার একটি গোষ্ঠী চক্রান্ত করছে। উপাচার্য এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে উন্নয়ন কাজকে বন্ধ করার চেষ্টা হচ্ছে। আলোচনার মাধ্যমে এই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল মান্নান চৌধুরী বলেন, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসে তাদের তিনটি দাবির দুটি মেনে নিয়েছেন উপাচার্য। অপরটি নিয়ে পরবর্তীতে আলোচনায় বসলে আন্দোলনকারীরা বিচার বিভাগীয় তদন্তের পরিবর্তে উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়েছেন। এতেই স্পষ্ট হয়েছে এখানে কোনো ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমরা অন্যায়ের কাছে মাথা নত করবো না। এসব অন্যায়কে রুখে দেয়া হবে।
পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক আলমগীর কবীরের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক নইম সুলতান, ইতিহাসের অধ্যাপক এটিএম আতিকুর রহমান, সুলতানা আক্তার, পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক মো. সালাহউদ্দিন, মো. ওবায়দুর রহমান, জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজের সভাপতি শেখ আদনান ফাহাদ, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং এর সভাপতি মাহ্ফুজা খাতুন, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজের শিক্ষক জাহিদুল করিম প্রমুখ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে গত অগাস্টে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে। এর মধ্যেই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে উপাচার্য ফারজানার কাছে চাঁদা চাওয়ার অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনার পরে ওই দুই ছাত্রনেতাকে ছাত্রলীগের পদ হারাতে হলেও তারা উল্টো অধ্যাপক ফারজানার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন।
প্রায় একই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা ‘ঈদ সালামী’ হিসেবে উপাচার্যের কাছ থেকে এক কোটি টাকা নেওয়ার কথা স্বীকারও করেন।
এ পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের দাবি জানান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের মুখে উপাচার্য ফারজানা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসলেও তা ফলপ্রসূ না হওয়ায় গত ১৯ সেপ্টেম্বর উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শুরু হয় আন্দোলন।
১৯ সেপ্টেম্বরের আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর আন্দোলনকারীরা পদত্যাগের জন্য তাকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়। ওই সময়ের শেষ দিনেও অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম পদ না ছাড়ায় মঙ্গলবার শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী তাকে ‘লাল কার্ড’ দেখানোর কর্মসূচি পালন করে।
আন্দোলনকারীদের ওই কর্মসূচির কিছুক্ষণ পরে নিজ কার্যলয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন উপাচার্য ফারজানা ইসলাম। তাদের দাবিকে ‘অযৌক্তিক’ আখ্যা দিয়ে উপাচার্য সাফ জানিয়ে দেন, তিনি পদত্যাগ করবেন না।
“আন্দোলনকারীরা অভিযোগের বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি দিয়েছে, সেটি অযৌক্তিক। আমি এটা (তদন্ত) চাইতেও পারি না, করতেও পারি না। এটি সরকারের থেকে উদ্যোগ নেবে অথবা বিচার বিভাগ চিন্তা করবে। “এখানে আমাকে একটা চাপ সৃষ্টি করার অর্থই হচ্ছে একটা অযৌক্তিক দাবি নিয়ে আমাকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের জন্য আহ্বান করা। যেহেতু যুক্তি নেই, সেখানে পদত্যাগের ইচ্ছা আমি প্রকাশ করছি না।”