জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. সুভাষ চন্দ্র দাস (৭০) মারা গেছেন। রোববার (১৯ জুলাই) ভোর সাড়ে ছয়টার দিকে সাভারস্থ এনাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এর আগে গত ১০ জুলাই তিনি অসুস্থবোধ করলে তাঁকে এ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
অধ্যাপক ড. সুভাষ চন্দ্র দাসের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সেনওয়ালিয়া এলাকায় নিজ ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন। আজ তাঁর গ্রামের বাড়িতে শেষকৃত্য হওয়ার কথা।
ড. সুভাষ চন্দ্র দাস ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদে যোগ দেন। এর আগে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে পিএইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে সহযোগী অধ্যাপক এবং ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি লাভ করেন।
২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসের ২৯ তারিখে তিনি শিক্ষকতার চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। অধ্যাপক ড. সুভাষ চন্দ্র দাস সমুদ্রবিদ্যা এবং প্রাাকৃতিক ভূগোল বিদ্যায় বিশেষজ্ঞ ছিলেন।
অধ্যাপক ড. সুভাষ চন্দ্র দাস বাংলাদেশ জাতীয় ভূগোল সমিতি ও বাংলাদেশ জিওগ্রাফিক্যাল সোসাইটির বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশের ভূগোল বিষয়ের অনুশীলন ও বিকাশে তিনি অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন। দেশে-বিদেশের খ্যাতনামা জার্নালে তাঁর অনেক গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
বাংলাদেশে ও পশ্চিমবঙ্গের বাংলাভাষীদের জন্য তাঁর রচিত ‘আধুনিক সমুদ্রবিজ্ঞান’ গ্রন্থটি বহুল সমাদৃত। অধ্যাপক ড. সুভাষ চন্দ্র দাস তাঁর বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনে সিনেট, সিন্ডিকেট সদস্য, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন, ফজিলাতুন্নেসা হলের প্রভোস্ট, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সভাপতি, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের দায়িত্ব পালনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের নানাবিধ প্রশাসনিক ও একাডেমিক দায়িত্ব পালন করেছেন।
এদিকে, অধ্যাপক ড. সুভাষ চন্দ্র দাসের প্রয়াণে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম গভীর শোক প্রকাশ করে তাঁর শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান এবং তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করেন। এক শোক বার্তায় উপাচার্য বলেন, অধ্যাপক ড. সুভাষ চন্দ্র দাসের প্রয়াণে জাতি একজন অভিজ্ঞ ভূগোলবিদকে হারালো। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শে বিশ্বাসী, ধর্ম নিরপেক্ষতা ও
অসাম্প্রদায়িক মনোভাবের অধিকারী অধ্যাপক ড. সুভাষ চন্দ্র দাসের প্রয়াণে জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হলো। সমুদ্র ও প্রাকৃতিক ভূগোলবিদ হিসেবে তাঁর অবদানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ঋদ্ধ হয়েছে। একজন অমায়িক, বিনয়ী এবং সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে তিনি সর্বজনবিদিত ও সুপরিচিত ছিলেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য তিনি ছিলেন অনুকরণীয়।
উপাচার্য প্রয়াত অধ্যাপক ড. সুভাষ চন্দ্র দাসের কর্ম ও জীবনের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।