জামিন পেলেন প্রশ্নফাঁসের চার আসামি - দৈনিকশিক্ষা

জামিন পেলেন প্রশ্নফাঁসের চার আসামি

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি ও বিভিন্ন চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেছে কয়েকটি সংঘবদ্ধ চক্র। এ চক্রের বিরুদ্ধে প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় মামলা হওয়া ছাড়াও মানি লন্ডারিং আইনেও উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করেছিল সিআইডি। জামিন অযোগ্য ওই মামলার চার গুরুত্বপূর্ণ আসামি জামিন পেয়েছেন। তারা হলেন- হাফিজুর রহমান, মো. ইব্রাহীম, মোস্তফা কামাল ও আইয়ুব আলী বাঁধন। গত বুধবার ঢাকা মহানগর হাকিম আদালত থেকে তারা জামিন পান। শুক্রবার (১৫ মার্চ) সমকালের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়। 

উত্তরা পশ্চিম থানার জিআরও শওকত আকবর বলেন, মানি লন্ডারিং আইনে দায়ের করা মামলায় হাফিজুর, ইব্রাহীমসহ চারজন জামিন পেয়েছেন। 

সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে অভিযুক্তের অতীত কর্মকাণ্ড ও এফআইআরে কী ধরনের অভিযোগ রয়েছে দেখা দরকার। যদি অভিযোগ গুরুতর ও অতীত রেকর্ড খারাপ হয় তাহলে জামিন দেওয়া উচিত নয়। তবে পুলিশ মামলার তদন্ত করে অভিযোগ দাখিলে বিলম্ব করলে জামিন পাওয়ার শক্ত গ্রাউন্ড তৈরি হয়। 

এ ব্যাপারে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, প্রশ্ন ফাঁসকারী যে চক্রের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করা হয়েছে তারা কেউ দৃশ্যমান আয়ের উৎস দেখাতে পারেনি। কিন্তু নামে-বেনামে তাদের কোটি কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। যে ধারায় এই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে সেটি জামিন অযোগ্য। মামলায় কোনো ধরনের ফাঁক-ফোকর নেই। 

সংশ্নিষ্টরা বলছেন, প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি ও পাবলিক পরীক্ষা আইনে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে যারা প্রশ্নফাঁস করে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করেছেন তাদের ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে উত্তরা পশ্চিম থানায় চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করে সিআইডি। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের যে ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে সেটাকে জামিন অযোগ্য মামলা বলছেন তদন্ত-সংশ্নিষ্টরা। 

দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় মানি লন্ডারিং আইনে দায়ের করা মামলার এক নম্বর আসামি হলেন হাফিজুর রহমান। তার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের বারঘরিয়ায়। তার হিসাব বিবরণী পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ২০ ডিসেম্বর থেকে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৫ কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করেছেন তিনি। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে উত্তরপত্র সরবরাহ করে এ সম্পদ অর্জন করেন হাফিজুর। এক সময় তিনি একটি ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন। পরে তাকে ওই ব্যাংক থেকে বরখাস্ত করা হয়। 

ওই মামলার দুই নম্বর আসামি ইব্রাহীমের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদরের জালালাবাদে। তার হিসাব বিবরণী পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩ জুলাই পর্যন্ত প্রায় ৪ কোটি টাকা অর্জন করেন তিনি। অবৈধ আয়ের অর্থ দিয়ে ইব্রাহীম একটি হোন্ডা ভেজেল গাড়ি কেনেন। যার নম্বর ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৫-২৬৮৫। খুলনার মুজগুন্নী ও নড়াইলে জমি কিনে বাড়ি তৈরি করেন তিনি। 

মামলার চার নম্বর আসামি মোস্তফা কামালের গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার শলী বাজারে। প্রশ্নফাঁস চক্রে জড়িয়ে প্রায় কোটি টাকা অর্জন করেন তিনি। এরই মধ্যে আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে তিনি স্বীকার করেছেন, ২০১৫-১৭ খ্রিষ্টাব্দে বিভিন্ন ব্যাংক, সরকারি চাকরি এবং ২০১৬ ও ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'ক' ও 'ঘ' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন সংগ্রহের পর প্রশ্নপত্রের উত্তর তৈরি করে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের মাধ্যমে বিতরণ করে অর্থ উপার্জন করেছেন তিনি। 

৫ নম্বর আসামি আইয়ুব আলী বাঁধনের গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের ধর্মপুরে। প্রশ্নফাঁস চক্রে জড়িয়ে ৭০ লাখ টাকা অর্জন করেন তিনি। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'ক' ও 'ঘ' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ও ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে আরও কয়েকটি ব্যাংকসহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি করে প্রশ্ন সংগ্রহের পর তা পরীক্ষার্থীদের কাছে বিক্রি করেন তিনি। 

সিআইডি বলছে, জড়িতরা পরস্পর যোগসাজশে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে অর্থ উপার্জন করেন। তারা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ (সংশোধনী ২০১৫)-এর ৪(২) ধারায় অপরাধ করেছেন। জামিনপ্রাপ্ত চারজন ছাড়া এ মামলার অপর চার আসামি হলেন- রিমন হোসেন, তাজুল ওরফে মুকুল, রাকিবুল হাসান এছামী ও অলিপ কুমার বিশ্বাস। 

সংশ্নিষ্টরা বলছেন, প্রশ্নফাঁস করে এ চক্রের অনেকে বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। ইব্রাহীম, হাফিজ, মোস্তফা, তাজুল ও বাঁধন সব নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির হোতা। সব মিলিয়ে তাদের ২০ কোটি টাকার সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। এ ছাড়া জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা হাফিজের ব্যাংক হিসাব থেকে ১০ কোটি টাকার 'অস্বাভাবিক' লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৬ জনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। এই চক্রের সদস্যদের মধ্যে ছাত্র, শিক্ষক ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও আছেন। তাদের কাছ থেকে প্রশ্ন পেয়ে পরীক্ষা দিয়ে যারা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তদন্তে এ ধরনের শতাধিক শিক্ষার্থীর নাম এসেছে। 

যারা অভিযুক্ত: সিআইডি বলছে, এখন পর্যন্ত তদন্তে প্রশ্নফাঁসের বিভিন্ন পর্যায়ে অনেকের নাম উঠে এসেছে। 

ছাপাখানা থেকে প্রশ্নফাঁস সিন্ডিকেটের মাস্টারমাইন্ড নাটোরের সাবেক ক্রীড়া কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান এছামী। তার সহযোগী খান বাহাদুর, সাইফুল ইসলাম, সজীব ইসলাম, বনি ইসরাইল, আশরাফুল ইসলাম আরিফ, মারুফ হাসান। ডিজিটাল ডিভাইস জালিয়াত চক্রের হোতা ছয়জন। তারা হলেন- বিকেএসপির বরখাস্ত হওয়া ক্রীড়া কর্মকর্তা অলিপ কুমার বিশ্বাস, ৩৮তম বিসিএসে ননক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত ইব্রাহীম মোল্যা, হাফিজুর রহমান হাফিজ, মাসুদুর রহমান তাজুল, বিএডিসির সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল ও আইয়ুব আলী বাঁধন। প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রে আরও যারা রয়েছেন তারা হলেন- মহীউদ্দিন রানা, আবদুল্লাহ আল মামুন, ইশরাক হোসেন রাফি, ফারজাদ সোবহান নাফি, আনিন চৌধুরী, নাভিদ আনজুম তনয়, এনামুল হক আকাশ, নাহিদ ইফতেখার, রিফাত হোসেন, বায়েজিদ, ফারদিন আহম্মেদ সাব্বির, তানভি আহম্মেদ, প্রসেনজিৎ দাস, আজিজুল হাকিম, তানভির হাসনাইন, সুজাউর রহমান, রাফসান করিম, আখিনুর রহমান অনিক, কদমতলীর দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাহাত ইসলাম, জাহিদ হোসেন, হাজারীবাগ শেখ রাসেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র আবির ইসলাম নোমান, সুজন, তিতুমীর সরকারি কলেজের অনার্সের ছাত্র আল আমিন, সুফল রায় ওরফে শাওন, সাইদুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী আহসান উল্লাহ ও শেরপুর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহাদাত হোসেন। 

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.014107942581177