জাল সনদে ধরা ৯ শিক্ষক, ফাঁসছেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও - দৈনিকশিক্ষা

জাল সনদে ধরা ৯ শিক্ষক, ফাঁসছেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও

শফিকুল ইসলাম: |

শিক্ষক নিবন্ধনের জাল সার্টিফিকেটের মাধ্যমে চাকরিপ্রাপ্তি এবং এমপিওভুক্ত হওয়ার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় ফেঁসেছেন রাজধানীর চার স্কুল ও মাদ্রাসার ৯ জন শিক্ষক। এক্ই সঙ্গে রেহাই মিলছে না জেলা শিক্ষা অফিস এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তারও। যদিও অদ্যাবধি মামলায় ওই দুই দপ্তরের কা্উকে আসামি করা হয়নি। তবে, শিগগিরই একাধিক কর্মকর্তাকে আসামি করে চার্জশিট দিতে যাচ্ছে দুদক। এর মধ‌্যেই অভিযোগ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র  জব্দ করা শুরু করেছে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা।

শিক্ষক নিবন্ধনের জাল সার্টিফিকেট দাখিল করে এমপিওভুক্ত হয়ে সরকারি টাকা উত্তোলনের অপরাধে শিক্ষকরা আসামি হলেও কেন জেলা শিক্ষা অফিস কিংবা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কোনো কর্মকর্তা আসামি হয়নি এ নিয়ে চলছে নানা সমালোচনা। অথচ নিয়োগ কিংবা এমপিওভুক্ত করার সময়ে তাদের জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পরার কথা। কারণ শিক্ষক নিবন্ধনের রেজিষ্ট্রেশন নম্বর দিয়ে তাদের নিজস্ব সার্ভারে সার্চ দিলেই সার্টিফিকেট সঠিক আছে কিনা যাচাই করা সম্ভব ছিল। এত সহজ পদ্ধতিতে যাচাই করার সুযোগ থাকলেও কিভাবে জাল সার্টিফিকেট দিয়ে এতদিন সরকার থেকে বেতন ও চাকরি নিয়ে সুবিধা নিয়ে আসছিল সেটাই বড় প্রশ্ন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে বলেন, অনুসন্ধান পর্যায়ে অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মামলা করা হলেও নিয়ন্ত্রণ অফিসের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে আসামি করা হয়নি এটা ঠিক। তবে তদন্ত পর্যায়ে অবশ্যই এ বিষয়টি আসবে। কারণ ওই শিক্ষকরা জাল সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরি নেওয়া ও এমপিওভুক্ত হয়ে যেমন অপরাধ করেছেন, ঠিক তেমনি জেলা শিক্ষা অফিস ও শিক্ষা অধিদপ্তর দায় এড়াতে পারেন না। কারণ যাচাই-বাচাই করা তাদের দায়িত্ব। এখানে কারো না কারো সংশ্লিষ্টতা অবশ্যই রয়েছে। এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক শিগগিরই ব্যবস্থা নিয়ে ওই অপরাধীদের চার্জশিটভুক্ত আসামি করবে দুদক।    

এ বিষয়ে দুদক সচিব ড. শামসুল আরেফিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, অভিযোগটি দুদকের ঢাকা বিভাগীয় অফিস থেকে তদন্ত করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ওই অফিস ভালো বলতে পারবে।

জাল নিবন্ধনের মাধ‌্যমে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েকশত শিক্ষক নিয়োগ ও এমপিও ভুক্ত হয়ে অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন এমন অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করে কমিশন। অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক উপপরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিমের নেতৃত্বে একটি টিম গঠন করা হয়। টিম শুধু ঢাকা জেলার অধীন অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধ অভিযোগ অনুসন্ধান করে চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি মামলা দায়ের করে।

ওই দিন রাজধানীর নিউমার্কেট থানায় দুদকের সহকারি পরিচালক মো. নুর-ই-আলম বাদি হয়ে রাজধানীর চার স্কুলের ৯ শিক্ষককে আসামি করে মামলা দায়ের করে। মামলার ৯ আসামিরা হলেন- খিলগাঁও মডেল হাই স্কুলের সহকারি শিক্ষক (সমাজ বিজ্ঞান) ইয়াছমিন বেগম, আগারগাঁও তালতলা সরকারি কলোনী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক তাহমিনা পারভীন (জীববিজ্ঞান ও বিজ্ঞান), আগারগাঁও সহকারি শিক্ষক (ব্যবসায় শিক্ষা) সায়মা খান, উত্তরখান চানপাড়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসার জুনিয়র মৌলভী জাকিয়া সুলতানা, ওই মাদ্রাসার মোজাব্বিদ মাহির ক্কারী কবির হোসেন,এবতেদায়ী প্রধান মনোয়ারা বেগম, জুনিয়র শিক্ষক পারুল বেগম, ঢাকা সবুজবাগের ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলের সহকারি শিক্ষক (সমাজ বিজ্ঞান) ইলোরা আলম এবং ঢাকা উত্তরখানের উজামপুর দাখিল মাদ্রাসার সহকারি শিক্ষক শাহনাজ পারভীন।

মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ভূয়া শিক্ষক নিবন্ধন সনদ তৈরিপূর্বক তা ব্যবহার করে উল্লিখিত পদে চাকরি গ্রহণ করার অপরাধে দন্ডবিধির ৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ ধারায় অভিযেোগ আনা হয়েছে।

 জানা গেছে, আসামিদের মধ্যে খিলগাঁও মডেল হাই স্কুলের সহকারি শিক্ষক (সমাজ বিজ্ঞান) ইয়াছমিন বেগম ২০১১ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মার্চ লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগপত্র পান। পরবর্তীতে ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে এমপিও ভুক্তির জন্য আবেদন করেন।  সে অনুযায়ী  এমপিওভুক্ত হয়ে সরকারি অংশ ও বিদ্যালয়ের অংশের বেতন গ্রহণ করেছেন। পরবর্তীতে ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের ১৯ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিদর্শনে নিবন্ধন সঠিক নয় এবং ২০১৩ খ্রিস্টাব্দের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বর পর‌্যন্ত নেওয়া ১ লাখ ৯২ হাজার ৩৯৫ টাকা ফেরৎযোগ্য এমন মন্তব‌্য করে প্রতিবেদন দাখিল করে।

অন্যদিকে আগারগাঁও তালতলা সরকারি কলোনী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক তাহমিনা পারভীন (জীববিজ্ঞান ও বিজ্ঞান) ২০১০ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারি মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে অস্থায়ী নিয়োগ পাওয়ার পর ২০১২ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারি নিবন্ধনসহ সংশ্লিষ্ট সনদপত্র দাখিলের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে নিয়োগ পান। একইভাবে আগারগাঁও তালতলা সরকারি কলোনী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক (ব্যবসায় শিক্ষা) সায়মা খান ওই নিয়োগ পান। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের ৩০ মার্চ  শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিদর্শনেও তাদের নিবন্ধন যাচাইকালে তা সঠিক নয় ও নিয়োগ বিধি সম্মত হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে উত্তরখান চানপাড়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসার জুনিয়র মৌলভী জাকিয়া সুলতানা, ওই মাদ্রাসার মোজাব্বিদ মাহির ক্কারী কবির হোসেন,ইবতেদায়ি প্রধান মনোয়ারা বেগম ও জুনিয়র শিক্ষক পারুল বেগম ২০০৩ ও ২০০৪ খিস্টাব্দে মার্চ মাসে  সকল সনদপত্র ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রসহ নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ২০১১ খ্রিস্টাব্দে তারা নিবন্ধন সার্টিফিকেটের মাধ্যমে এমপিওভুক্ত হন। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের ২৩মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিপ্তরের পরিদর্শনে তাদের নিবন্ধন সনদ জাল বলে প্রমাণিত হয়।

একইভাবে ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের মার্চ ও মে মাসে ওই টিমের পরিদর্শনে এমপিওভুক্ত ঢাকা সবুজবাগের ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলের সহকারি শিক্ষক (সমাজ বিজ্ঞান) ইলোরা আলম এবং ঢাকা উত্তরখানের উজামপুর দাখিল মাদ্রাসার সহকারি শিক্ষক শাহনাজ পারভীনের নিবন্ধন সনদ জাল বলে প্রমাণিত হয়।

দুদকের অনুসন্ধানেও ওই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুদকের অনুসন্ধান টিম প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ভূয়া শিক্ষক নিবন্ধন সনদ তৈরিপূর্বক তা ব্যবহার করে উল্লিখিত পদে চাকরি গ্রহণ করে দন্ডবিধির ৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ ধারা মামলার সুপারিশ করেন। যার ভিত্তিতে কমিশনের অনুমোদক্রমে চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর নিউমার্কেট থানায় দুদকের সহকারি পরিচালক মো. নুর-ই-আলম বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

 এ বিষয়ে ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক নাসিম আনোয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তদন্তাধীন বিষয়ে কোনে মন্তব‌্য করতে অস্বীকার করেন।

 

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0086450576782227