ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে মাইজ বাড়ি দাখিল মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত সুপারসহ তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন যাবত জাল সনদে চাকরির অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সরেজমিন পরিদর্শন ও সনদ যাচাই-বাছাই করে অভিযুক্ত তিন শিক্ষককে অব্যাহতি এবং চাকরিকালীন উত্তোলনকৃত সমুদয় টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশ দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। অভিযুক্ত তিন শিক্ষক অদ্যাবধি বহাল তবিয়তে আছেন ও বেতন উত্তোলন করছেন। আর এই ঘটনার তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার মাইজ বাড়ি দাখিল মাদরাসায় জাল সনদ দাখিল করে ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ১ ফেবুয়ারি ইবতেদায়ি শাখার প্রধান শিক্ষক পদে মোস্তাফিজুর রহমান (ইনডেক্স নম্বর ২০৯৮৯১৫) ও কারি পদে নাজমা খাতুন (ইনডেক্স নম্বর ২০৯৮৯১৬) এবং ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারি আজহারুল আলম (ইনডেক্স নম্বর ২১১৫১৪৫) সহকারী শিক্ষক (শরীরচর্চা) পদে যোগদান করেন। অভিযুক্ত তিন শিক্ষকের মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান আবার জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্ব পালন করছেন।
জাল সনদের অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের একজন শিক্ষা পরিদর্শক মাদরাসাটি পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি উল্লেখিত তিন শিক্ষকের সনদ তলব করে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) বরাবর প্রেরণ করেন। পরে এনটিআরসিএ জানায় সনদগুলো সঠিক নয়। সেই প্রেক্ষিতে শিক্ষা পরিদর্শক তার পরিদর্শন প্রতিবেদন দাখিল করেন। যার অনুলিপি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবরও পাঠানো হয়।পরিদর্শন ও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে অব্যাহতিসহ অভিযুক্ত তিন শিক্ষকের চাকরিতে যোগদানের তারিখ থেকে পরিদর্শনের তারিখ পর্যন্ত উত্তোলিত বেতনের সমুদয় টাকা (৬ লাখ ৩ হাজার ৫৭০ টাকা) সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার সুপারিশ করেন। কিন্তু পরিদর্শন ও নিরীক্ষা প্রতিবেদনের সেই সুপারিশ আজও বাস্তবায়ন হয়নি। অভিযুক্ত তিন শিক্ষক সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহের কর্মকর্তাদের মোটা অঙ্কের টাকায় ম্যানেজ করে অদ্যাবধি চাকরিতে বহাল আছেন।
অন্যদিকে, উপজেলার যশরা আয়েশা হাসান দাখিল মাদরাসার সুপার মোখলেছুর রহমানের বিরুদ্ধে তৃতীয় বিভাগ প্রাপ্ত কামিল সনদ গোপন করে সুপার পদে চাকরি ও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে একই মাদরার জুনিয়র দুইজন মৌলভীকে তথ্য গোপন এবং ভুয়া বিএড সনদ দাখিল করে অবৈধভাবে উচ্চ বেতন স্কেল পাইয়ে দেওয়ায় অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে সাবেক সিনিয়র মৌলভী খায়রুল্লাহ ঢাকা দুর্নীতি দমন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
আর সেই প্রেক্ষিতে অভিযোগ তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আগামী ২৯ মে মাইজ বাড়ি দাখিল মাদরাসা ও যশরা আয়েশা হাসান দাখিল মাদরাসার সুপারকে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তরে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, গফরগাঁওয়ের মাইজ বাড়ি দাখিল মাদরাসা ও যশরা আয়েশা হাসান দাখিল মাদরাসার সুপারকে আমার দপ্তরে আগামী ২৯ মে ডাকা হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে এমপিও বাতিলসহ চাকরি বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।