দেশের বেশিরভাগ মাধ্যমিক স্কুল বেসরকারি। অবহেলিত জনপদে, বিশেষ করে দূর্গম অঞ্চল থেকে শুরু করে উত্তাল হাওর পর্যন্ত, নিবন্ধিত বেসরকারি শিক্ষকরা শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে আসছেন। স্বল্প বেতন এবং ঝড়-ঝঞ্ঝা সয়ে অনেকেই বাড়ি থেকে শত শত মাইল দূরে শিক্ষকতা করছেন। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে জীবনের সেরা সময়টা বিলিয়ে দিচ্ছেন। কিন্ত, এদের মধ্যেও ঘাপটি মেরে আছে কিছু অসাধু জাল সনদধারী শিক্ষকরা, যারা আজ শিক্ষককতা নামের মহান পেশাকে কলংকিত করছেন।
এইসব জালিয়াত শিক্ষক দিনের পরে দিন জনগনের ট্যাক্সের টাকা এমপিও বাবদ ভোগ করছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে মেধাবী শিক্ষকদের পাঠদান থেকে। তালিকা যাচাই বাছাই করলে অর্ধলক্ষাধিক এ রকম ভুয়া শিক্ষক নামের জালিয়াত পাওয়া যাবে। গত দু'এক বছরে এনটিআরসিএর প্রশংসনীয় কাজের একটি হচ্ছে জাল সনদধারীদের চিহ্নিতকরণ। তবে,যে চিত্র ভেসে উঠেছে তা সত্যি ভয়াবহ।
হাজার হাজার ভুয়া শিক্ষক জাল সনদে জনগনের ট্যাক্সের টাকার শ্রাদ্ধ করছে,আর এদিকে প্রকৃত নিবন্ধনধারীরা খেয়ে বেঁচে থাকার আশায় চাকুরির জন্য হায়-হুতাশ করছে। তাছাড়া বর্তমানে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলছে তীব্র শিক্ষক সংকট। বর্তমানে প্রায় ৬০ হাজারের মতো পদ শূন্য আছে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। তাছাড়া জাল সনদধারীদের শূন্য হওয়া পোস্টগুলো যদি একত্রিত করা হয় সংখ্যাটা এক লাখ ছাড়িয়ে যাবে। বর্তমানে মহামারি করোনা জন্য সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খাত হচ্ছে শিক্ষাখাত। হাওর এবং দূর্গম এলাকার অধিকাংশ মানুষ এমনিতেই শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত,সেখানে থাকে তীব্র শিক্ষক সংকট। মহামারীর কারণে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের তীব্র সংকট দেখা দেবে। দূর্গম এলাকায় শিক্ষা ব্যবস্থা ঝুঁকিতে পড়বে। অত্যন্ত জরুরিভিত্তিতে এখানে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া আবশ্যক। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে মামলাজনিত বিভিন্ন জটিলতার কারণে তৃতীয় চক্রের শিক্ষক নিয়োগ আটকে আছে।
মামলার জটিলতার কারণে যদি সামনের বছরেও যদি শিক্ষক নিয়োগ দেয়া না হয়,তাহলে পুরো বেসরকারি শিক্ষাব্যবস্থা ঝুঁকিতে পড়বে। স্কুল থেকে শিক্ষার্থী ঝরে পড়বে। জাতি মেধাহীন হয়ে পড়বে। তবে,আশার কথা এই যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী পড়াশোনার ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন। তারা হাওর এবং দূর্গম জেলাগুলোর ব্যাপারেও অত্যন্ত মানবিক। বিনীত প্রার্থনা, জাল নিবন্ধনধারী শিক্ষকদের চিহ্নিত করে তাদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক এবং যত দ্রুত সম্ভব তাদের স্থলে প্রকৃত নিবন্ধনধারী মেধাবী শিক্ষকদের নিয়োগ দিয়ে তাদের শিক্ষার আলো ছড়ানোর মাধ্যমে জাতির জনকের স্বপ্নকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হোক।
লেখক : শুভ্র চক্রবর্ত্তী, ১৫তম নিবন্ধনে উত্তীর্ণ তৃতীয়চক্রে নিয়োগ প্রত্যাশী