শিক্ষা সনদ জালিয়াতির মাধ্যমে ২৩ বছর শিক্ষকতা করে আসা বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার নুন্দহ ফাজিল মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমানের এমপিও বন্ধ করেছে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। একই সঙ্গে এতদিন বেতন-ভাতা হিসেবে নেয়া টাকা আগামী এক মাসের মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে বলা হয়েছে এ শিক্ষককে। আর তথ্য গোপনের মত ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে মাদরাসা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গত ৭ জুন মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের জারি করা এক আদেশে এ তথ্য জানা গেছে।
মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. শাহীনুর ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে অভিযুক্ত শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে থেকে অব্যাহতি দিতে গভর্নিং বডির সভাপতিকে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতি করে নিয়োগ লাভ এবং বেতন-ভাতার নামে সরকারি কোষাগার থেকে অর্ধ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১১ এপ্রিল দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ দাখিল করা হয়।
দুদকে করা অভিযোগে বলা হয়, একই শিক্ষা বর্ষে এক সঙ্গে দু’টি ডিগ্রি অর্জন বৈধ না হলেও মোস্তাফিজুর রহমান ১৯৮৮-৮৯ শিক্ষাবর্ষে নুন্দহ মাদরাসা থেকে ফাজিল এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে দ্বিতীয় শ্রেণিতে বিএসএস অনার্স পাদ করেন। এরপর ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ মার্চ নুন্দহ মাদরাসায় রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিষয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগদানের সময় মোস্তাফিজুর রহমান মাদরাসা থেকে ফাজিল পাশের তথ্য গোপন করেন।
এর প্রায় পনের বছর পর ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে ওই মাদ্রাসায় উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পেতে মোস্তাফিজার রহমান আবার রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স পাসের তথ্য গোপন করেন। তখন উপাধ্যক্ষ হিসেবে চাওয়া যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার শর্ত পূরণের জন্য মোস্তাফিজার রহমান মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের ফাজিল পাশের সনদ প্রদর্শন করেন। আর অভিজ্ঞতা হিসেবে ওই মাদরাসায় ১৫ বছর ধরে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত থাকার কথাও উল্লেখ করেন।
অভিযোগ পাওয়ার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে মোস্তাফিজুর রহমানের বিএসএস সনদ বাতিল করেন। আর তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা বিভাগ ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে নুন্দহ মাদরাসায় প্রভাষক এবং পরবর্তীতে উপাধ্যক্ষ- এদু’টি পদের কোনটিতেই মোস্তাফিজুর রহমানের নিয়োগ বৈধ নয় বলে মতামত দেন। কিন্তু তার পরেও মোস্তাফিজুর রহমান উপাধ্যক্ষ হিসেবে বেতন-ভাতা উত্তোলনের পাশাপাশি অধ্যক্ষ পদ শূণ্য থাকায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন শুরু করেন।
মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়ে বলেছেন, তার নিয়োগ বৈধ ছিল না। আগেই তার এমপিও স্থগিত করা হয়েছিল। এবার স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হলো।
নন্দীগ্রাম উপজেলার নুন্দহ সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার গভর্নিং বডির সভাপতি বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইটি) মাসুম আলী বেগ স্থানীয় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের চিঠি তারা পেয়েছেন। চিঠিতে যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তা যথাযথভাবে পালন করা হবে।