জালিয়াতি করেও ২২ বছর ধরে শিক্ষক তিনি! - দৈনিকশিক্ষা

জালিয়াতি করেও ২২ বছর ধরে শিক্ষক তিনি!

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে বগুড়ার নন্দীগ্রামের নুন্দহ সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ নেন মোস্তাফিজুর রহমান। ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে চাকরিতে যোগ দিয়ে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে ফের তিনি জালিয়াতির আশ্রয় নেন। এবার তিনি নিয়োগ পান উপাধ্যক্ষ পদে। আর এভাবে অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েও ২২ বছর ধরে বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন। মাদরাসায় অধ্যক্ষের পদ শূন্য থাকায় বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বও পালন করছেন তিনি। বুধবার (১৫ মে) দৈনিক সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন মোহন আখন্দ।  

এ ঘটনায় মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে মাদরাসায়টির পরিচালনা পরিষদের পক্ষ থেকে  দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। 

অভিযোগের সূত্র ধরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নন্দীগ্রাম উপজেলা সদরে বগুড়া-নাটোর সড়কের পাশে ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে নুন্দহ মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে প্রতিষ্ঠানটি সরকারি মান্থলি পেমেন্ট অর্ডারের (এমপিও) আওতায় আসে। ফাজিল অর্থাৎ ডিগ্রি পর্যায়ের এ মাদরাসায় বর্তমানে প্রায় ৬০০ ছাত্রছাত্রী রয়েছে। 

নুন্দহ গ্রামের আব্দুল গফফারের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান ওই মাদরাসা থেকে ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে (শিক্ষাবর্ষ ১৯৮৮-৮৯) ফাজিল পাস করেন।

একই শিক্ষাবর্ষে তিনি নিয়মিত ছাত্র হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকেও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে দ্বিতীয় শ্রেণিতে অনার্সও পাস করেন, যা নিয়ম অনুযায়ী অবৈধ। 

১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে নুন্দহ মাদরাসায়  রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে প্রভাষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলে মোস্তাফিজুর রহমান ফাজিল পাসের তথ্য গোপন করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স পাসের সনদ দেখিয়ে একই বছরের ১৫ মার্চ যোগদান করেন। এর পর ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিলে ওই মাদরাসায় উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। সেখানে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে চার বছর মেয়াদি দ্বিতীয় শ্রেণির অনার্স পাস এবং প্রভাষক পদে আরবি বিষয়ে ১২ বছর চাকরির অভিজ্ঞদের আবেদন করতে বলা হয়। তবে মোস্তাফিজুর রহমান উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পেতে প্রভাষক হিসেবে যোগদানের সময় রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স পাসের তথ্য গোপন করেন। বরং মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের ফাজিল পাসের সনদ এবং অভিজ্ঞতা হিসেবে ওই মাদরাসা ১৫ বছর ধরে প্রভাষক হিসেবে কাজ করার কথা উল্লেখ করে ওই বছরের ২৪ এপ্রিল উপাধ্যক্ষ পদে আবেদন করেন। এর পর ২৬ জুন তিনি ওই পদে যোগদানও করেন।

বিষয়টি পরে জানাজানি হলে মাদরাসায় পরিচালনা পরিষদের কয়েক সদস্য মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা বিভাগের পরিচালকের দপ্তরে অভিযোগ দেন। এতে একই শিক্ষাবর্ষে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে ফাজিল এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিএসএস অনার্স পাসের সত্যতা যাচাই করে মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়।

এর পর ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে র ২২ নভেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩৬তম শিক্ষা পরিষদের সভায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয় এবং একই বছরে দুটি সনদ অর্জন বিধিসম্মত নয় উল্লেখ করে বিএসএস সনদ বাতিলের সুপারিশ করা হয়। এর ১৯ দিনের মাথায় মোস্তাফিজুর রহমানের বিএসএস সনদ বাতিল করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা বিভাগের তদন্তেও তার জালিয়াতি প্রমাণিত হয়। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ এপ্রিল প্রকাশিত সেই তদন্ত প্রতিবেদনে ওই মাদরাসায় প্রভাষক এবং পরে উপাধ্যক্ষ দুটি পদের কোনোটিতেই মোস্তাফিজুর রহমানের নিয়োগ বৈধ নয় বলে মত দেওয়া হয়। তার পরও তিনি উপাধ্যক্ষ হিসেবে বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন এবং একই সঙ্গে অধ্যক্ষ পদ শূন্য থাকায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন।

এমন পরিস্থিতিতে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে ১২ জানুয়ারি নন্দীগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চিঠি দেওয়া হয়। তার পরও জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়ে মাদরাসায় পরিচালনা পরিষদের সদস্য আবুল কাশেম গত ১১ এপ্রিল দুদক চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেন।

আবুল কাশেম বলেন, তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে, প্রভাষক এবং উপাধ্যক্ষ উভয় পদেই মোস্তাফিজুর রহমানের নিয়োগ বৈধ ছিল না। ফলে ২২ বছর ধরে তিনি সরকারি কোষাগার থেকে প্রভাষক ও উপাধ্যক্ষ হিসেবে যে প্রায় ৪৪ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন, তা আত্মসাৎ বলেই গণ্য হবে। এজন্য আমরা তার বিচার দাবি করছি।

এ ব্যাপারে নুন্দহ সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকা উপাধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, 'রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বেআইনিভাবে বিএসএস সনদ বাতিল করেছে। তার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে দ্বারস্থ হয়েছি।'

দুদক বগুড়া সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম জানান, নুন্দহ মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষের বিষয়ে প্রধান কার্যালয়ে কোনো অভিযোগ করা হয়েছে কি-না তা তার জানা নেই। তিনি বলেন, 'এখন পর্যন্ত আমরা এ সংক্রান্ত কোনো নথি পাইনি।'

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0095431804656982