আমরা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছি যে, এখনকার জিপিএ-৫ নির্ভর প্রতিযোগিতামূলক পড়ালেখার যে প্রচলন রয়েছে, তাতে শিক্ষার্থীরা যে বিদ্যার্থী, তা থেকে বের হয়ে কেবল পরীক্ষার্থী হয়ে গেছে। পড়াশোনার উদ্দেশ্য যে কেবল সার্টিফিকেট অর্জন নয়, প্রকৃত বিদ্যা অর্জন, সেই সংস্কৃতি থেকে আমরা বের হয়ে গেছি।
পরীক্ষায় বেশি নম্বর পাওয়া এবং ভালো জিপিএর ঘরে যাওয়ার জন্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা ইঁদুর দৌড়ে ব্যস্ত। অভিভাবকেরা মনে করেন, জিপিএ-৫ না পেলে সন্তানের জীবনটাই শেষ হয়ে যাবে। এই তীব্র চাপের আরেক ভয়াবহ উদাহরণ হলো, আজকাল সন্তানের ভালো জিপিএ পাওয়ার ব্যবস্থা করতে অভিভাবকেরা পর্যন্ত প্রশ্ন ফাঁস হলো কি না খোঁজ রাখে।
বিভিন্নভাবে তারা প্রশ্ন খোঁজে, পরে তা সন্তানের হাতে তুলে দেয়। এটি শিক্ষার্থীর মননকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। আমরা বলেছিলাম, গ্রেডিং সিস্টেম থাকতে পারে, কিন্তু জিপি-৫-এর গুরুত্ব কমাতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা থাকবে না, শুধু শিক্ষকেরা মূল্যায়ন করবেন। এটা খুবই সময়োপযোগী একটি সিদ্ধান্ত। নিচের ক্লাসগুলোতে পরীক্ষায় গুরুত্ব না দিয়ে শিক্ষার্থীদের তাদের নিজের সঙ্গে পরিচয় করানোর পাশাপাশি নৈতিকতা, মূল্যবোধসহ অন্যান্য বিষয় শেখাতে হবে।
কেবল মুখস্থ করে পরীক্ষার খাতায় তা লিখে জিপিএ-৫ পাওয়ার সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমেও জোর দিতে হবে। শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। সে জায়গায় শিক্ষক হলেন শিক্ষার মেরুদণ্ড। অথচ এখন শিক্ষকতা পেশায় আগ্রহীদের সংখ্যা দিন দিন কমছে।
মেধাবীরা এই পেশায় আসতে আগ্রহী নন। শিক্ষার মান বাড়াতে হলে মেধাবীদের শিক্ষকতায় আনা যেমন জরুরি, তেমনি জরুরি হলো যথাযথ শিক্ষক প্রশিক্ষণ। শিক্ষার মূল ভিত্তি গড়ে ওঠে প্রাথমিক শিক্ষার পর্যায়ে। সেখানে ভালো শিক্ষক থাকতে হবে। এবার মাধ্যমিক সম্পন্ন করা যে ছেলেমেয়েরা কলেজে ভর্তি হবে, তাদের এখন থেকেই নিজেদের ভবিষ্যত্ পরিকল্পনার কথা ভাবতে হবে।
যদিও অনলাইনের মাধ্যমে গ্রেড দেখে কলেজে ভর্তিকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, তবু যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে এমন প্রতিষ্ঠান বেছে নিতে, যেটি সবদিক দিয়ে মানসম্পন্ন। নিজে মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে হবে, প্রকৃত জ্ঞান অর্জনের দিকে নজর দিতে হবে।
সূত্র:ইত্তেফাক