মুক্তার বাবা একজন প্রান্তিক কৃষক। অন্যের জমি বর্গা চাষ করে সংসার চালান। কিন্তু মেয়ের ইচ্ছাশক্তি দেখে বাবা সবজি বিক্রি করে লেখাপড়ার ভার বহন করতেন। সেই কৃষক কন্যা মুক্তা চলতি এসএসসিতে মেধার স্বাক্ষর রেখেছে। কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সীবাজার কালী প্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান শাখায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন তিনি।
তার এমন সাফল্যে পরিবারে আনন্দ হলেও বাবার মুখে চিন্তার বাজ। উচ্চ শিক্ষায় কিভাবে মেয়েকে পড়াবেন। সবজি বিক্রেতা বাবা তাকে আর বেশী দূর পড়াতে চাচ্ছেন না দরিদ্রতার কারণে। পঞ্চম, অষ্টম শ্রেণিতে গোল্ডেন প্রাপ্ত মুক্তা স্বপ্ন দেখছে আইন বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে জজ হতে। কিন্তু হতদরিদ্র বাবার পক্ষে সম্ভব হবে এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে।
রহিমপুর ইউনিয়নের দেবীপুর গ্রামের দরিদ্র সবজি বিক্রেতা অবিনাশ মলিকের দুই ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে মুক্তা মলিক ৩য় সন্তান। মুক্তার বড় ভাই একটি সরকারি মেডিক্যাল এ্যাসিসটেন্স প্রশিক্ষণ স্কুলে (মেটস্) দ্বিতীয় বর্ষে এবং বড় বোন মৌলভীবাজার সরকারি মহিলা কলেজে ২০২০ সনের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। মুক্তার ছোট এক ভাই ৮ম শ্রেণি ও বোন ৫ম শ্রেণিতে পড়ে।
অদম্য মেধাবী মুক্তা মলিক জানায়, বড়ভাই ও বোন এর লেখাপড়া যোগাতে গিয়ে বাবা সবজি বিক্রি পর্যন্ত করছেন। সে আইন বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে একজন জজ হতে চায়। জজ হয়ে দেশ ও দশের সেবা করতে চায়। কিন্তু অভাবের কারণে বাবা আর পড়াতে চান না। তবে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চায় মুক্তা। প্রয়োজনে টিউশনি করে হলেও পড়া চালাতে চায় মুক্তা।
কৃষক বাবা অবিনাশ মলিক বলেন, ছোট বেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী মেয়ে মুক্তা। লেখাপড়ার পাশাপাশি সে সাহিত্য চর্চার করে। তিনি জানান, নিজের জমিতে সবজি চাষ করে ও কৃষি কাজ করে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ায় কিছুটা সহযোগিতা করেছেন মাত্র। তবে বড় ছেলে ও মেয়ে টিউশনি করে নিজেদের খরচ বের করে নিচ্ছে। এখন তৃতীয় সন্তান মুক্তার লেখাপড়ার খরচ নিয়ে তিনি চিন্তিত। তবে মেয়ে নিজেই অদম্য বলে সে পরবর্তী লেখাপড়া চালিয়ে যেতে চায়। কেউ মানবিক বিবেচনায় সহযোগিতার হাত বাড়ালে হয়তো বা তার মেয়ের এ ইচ্ছে পূরণে সহায়ক হবে বলে তিনি মনে করেন।
কালী প্রসাদ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সত্যেন্দ্র কুমার পাল বলেন, দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করে মুক্তা মলিক নিজে ও ভাই বোনেরা পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে। মুক্তার এ ফলাফলে এ বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সদস্যরা খুশি।