ঢাকার চারটি ক্লাবে অভিযান চালানোর পর র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ক্যাসিনা বা জুয়ার আখড়া বন্ধে এই ধরনের অভিযান চলবে। বুধবার চারটি ক্লাবের অবৈধ ক্যাসিনোতে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ মাদক, নগদ টাকা এবং ১৮২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে এ তথ্য জানা গেছে।
অভিযান শেষে এসব ক্যাসিনো সিলগালা করে দেওয়া হয় বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন র্যাবের নির্বাহী হাকিম সারোয়ার আলম।
তিনি বলেন, “অনুমোদনবিহীন এসব ক্যাসিনোতে জুয়া খেলার পাশাপাশি মাদক ব্যবসা ও সেবন হত। পর্যায়ক্রমে এ ধরনের অভিযান আরও চালানো হবে। আপরাধী যেই হোক, তাকে ছাড় দেওয়া হবে না।”
ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাব, একই এলাকার ওয়ান্ডারাস ক্লাব, বঙ্গবন্ধু এভিনিউর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের পাশাপাশি বনানীর আহমেদ টাওয়ারে গড়ে তোলা একটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালানো হয়।
র্যাবের হাকিম সারোয়ার বলেন, “নামে ক্লাব হলেও এগুলোতে কোনো ক্রীড়া সামগ্রী বা কোনো খেলোয়াড়কে দেখা যায়নি। বিভিন্ন কক্ষজুড়ে ছিল ক্যাসিনোর বোর্ড, ডার্ট বোর্ডসহ জুয়ার সামগ্রী এবং জুয়াড়ী। ছিল মদ, বিয়ারসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক।”
র্যাব কর্মকর্তারা বলেন, প্রতিটি ক্লাবেই ছিল একাধিক বিশেষ কক্ষ। যেখানে ‘ভিআইপি’রা মদ পান করতেন, উচ্চ মূল্যে জুয়া খেলতেন।
তবে কোনো ক্লাবেই প্রভাবশালী বা মালিক পক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি। কৌশলে তারা কেটে পড়েছেন অথবা অভিযানের কথা শুনে ক্লাবেই আসেসনি বলে র্যাবের ভাষ্য।
ইয়ংমেনস ক্লাবে যে ১৪২ জনকে আটক করা হয়, তাদের একজন জসিম সাংবাদিকদের বলেন, তিনি জমি কেনা-বেচা সংক্রান্ত বিষয়ে ক্লাবের ক্যান্টিনে বসে একজনের সঙ্গে কথা বলছিলেন। এ সময় অভিযান চালায় র্যাব।
তবে কামাল নামে এক ব্যক্তি জানান, তিনি জুয়া খেলতেই এসেছিলেন। দুই মাস ধরে খেলছেন। জিতেছেন দুই লাখ টাকা, হেরেছেন ৮ লাখ টাকা।
তিনি বলেন, “কেউ যেন এখানে না আসে। এটা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিলে অনেকের সংসার রক্ষা পাবে।”
প্রতিটি ক্লাবেই শ্রেণিভেদে জুয়ার বোর্ড রয়েছে। ১০০ টাকা থেকে লাখ টাকার বোর্ডে এসব খেলা হয় বলে ক্লাবের কর্মীরা জানান।
বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র আতিক বলেন, তিনি ১৪ হাজার টাকা বেতনে পার্টটাইম চাকরি করছিলেন ইয়ংমেনস ক্লাবে। দিনে মোট আট ঘণ্টা কাজ করতেন তিনি।
ইয়ংমেনস ক্লাবে অভিযানের সময়ই এই ক্লাব পরিচালনায় যুক্ত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে তার গুলশানের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলের এক বৈঠকে সহযোগী সংগঠন যুবলীগের নেতাদের নানা কাণ্ডের সমালোচনা করেন।
এরপর যুবলীগ নেতাদের ৬০টি জুয়ার আখড়া বা ক্যাসিনো চালানোর খবর আসে কয়েকটি সংবাদপত্রে। বুধবার তা প্রকাশিত হওয়ার পর চারটি ক্লাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চলে।
এই অভিযানে ক্ষোভ জানিয়েছেন যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। অভিযান দেখে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট কয়েক হাজার নেতা-কর্মী নিয়ে কাকরাইলে সংগঠনের কার্যালয়ে অবস্থান নেন।