চলতি বছরের জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় এমসিকিউ (মল্টিপল চয়েস অব কোয়েশ্চন) থাকছে। তবে, কয়েকটি বিষয় কমানো এবং প্রশ্নের মান বণ্টন বিষয়ে সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানতে ২২ লাখের বেশি শিক্ষার্থীকে অপেক্ষা করতে হবে আগামী ৩১ মে পর্যন্ত। ওইদিন আরো একটি সভায় বসবে এনসিসিসি। রোববার (২৭ মে) এনসিসিসির সভাশেষে দৈনিকশিক্ষাকে এ খবর জানিয়েছেন ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু: জিয়াউল হক।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো: সোহরাব হোসাইনের সভাপতিত্বে ‘ন্যাশনাল কারিকুলাম কো-অর্ডিনেশন কমিটি’র (এনসিসিসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। পাঠ্যবই, কারিকুলাম ও সিলেবাস এবং পাবলিক পরীক্ষায় যেকোনো পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়ার এখতিয়ার এনসিসিসির। পদাধিকার বলে শিক্ষাসচিব এই কমিটির সভাপতি। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সদস্য (শিক্ষাক্রম) এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং সবগুলো শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানগণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আজকের সভায় অংশ নেন।
দৈনিকশিক্ষার এক প্রশ্নের জবাবে আন্ত:শিক্ষাবোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান জিয়াউল হক বলেন, “এমসিকিউ থাকছে। নম্বর ও বিষয় এবং সিলেবাসে পরিবর্তন আসছে কিনা তা এনসিসিসির ৩১মের সভায় সিদ্ধান্ত হবে।”
সচিবালয়ের সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মো: সোহরাব হোসাইন বলেন, “বিষয় ও নম্বর বণ্টনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আরেকটি বৈঠক হবে। জেএসসি-জেডিসিতে এমসিকিউর বিষয়ে আগের সিদ্ধান্তই বহাল। এসএসসি ও এইচএসসিতে এমসিকিউ বন্ধ করতে হলে নানাদিক চিন্তা করতে হবে। এটা একান্তই আমার নিজস্ব মতামত।”
তিনি বলেন, “আমি সব সময় এমসিকিউ-এর বিপক্ষে। এমসিকিউ অত্যন্ত উন্নতমানের একটা পদ্ধতি। কিন্তু আমরা সেই পর্যায়ে এখনও পৌঁছাইনি। ... এমসিকিউ-এর জন্য মরিয়া হয়ে মানুষ অনেক কিছু করছেন।
“যে পরীক্ষা কাউকে সঠিক মূল্যায়ন করতে সহযোগিতা করে না বা সঠিক মূল্যায়ন করে না, সে পরীক্ষা থাকার কোনো যুক্তি নেই বলে আমি মনে করি।”
এর আগে পরীক্ষার হলে এমসিকিউ অংশের উত্তরসহ সমাধান সরবরাহ এবং প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে এমসিকিউ বাদ দেয়ার সুপারিশ করে সরকার কর্তৃক গঠিত একাধিক তদন্ত কমিটি। সুপারিশের আলোকে এমসিকিউ বাতিলের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগেই চলতি শিক্ষাবর্ষের অর্ধেক সময় পার হয়ে যাওয়ায় চলতি বছরের নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিতব্য অষ্টম শ্রেণির জেএসসি (জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট) ও জেডিসি (জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট) পরীক্ষায় এমসিকিউ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় এনসিসিসি।
এর আগে আন্ত:শিক্ষাবোর্ড সমন্বয় কমিটি সাব কমিটি জেএসসির পরীক্ষার বিষয় ও নম্বর কমানোর প্রস্তাব দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। বর্তমানের ১০ বিষয়ে ৮৫০ নম্বরের পরিবর্তে ৭টি বিষয়ে ৬৫০ নম্বরের পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তাব করে কমিটি। গার্হস্থ্য অর্থনীতি ও কৃষি শিক্ষা বিষয় দুটো পাবলিক পরীক্ষা না নিয়ে অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তাব করা হয়। জেডিসিতে ১০৫০ নম্বরের পরিবর্তে ৯৫০ নম্বরে।
গত কয়েকবছর যাবত এসএসসি, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় বেপরোয়া প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি প্রশ্ন ফাঁসের জন্য চারটি প্রধান কারণ চিহ্নিত করে। এর মধ্যে অন্যতম এমসিকিউ।
সভায় আলোচ্য বিষয় না থাকলেও এক প্রশ্নের জবাবে সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, পরীক্ষায় এমসিকিউ নিয়ে আগের সিদ্ধান্তের কোনো পরিবর্তন হয়নি।