প্রায় পাঁচ মাস আগে বাবার ইচ্ছায় গোপনে দোয়া পড়িয়ে সাদিয়া আক্তারকে বাল্যবিয়ে দেয়া হলেও সে স্বামীর বাড়িতে যায়নি। প্রতিবাদী সাদিয়া এলাকা ছেড়ে মায়ের সঙ্গে ঢাকায় গিয়ে রক্ষা পায়। দুই দিন আগে সে গ্রামে এসে আত্মীয়বাড়িতে থেকে গতকাল শনিবার জেডিসি (জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট) পরীক্ষা অংশ নিয়েছে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার আচারগাঁও ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে।
সাদিয়ার বাড়ি নান্দাইলের সিংরইল ইউনিয়নের হায়াতপুর গ্রামে। সে স্থানীয় মহাবৈ দাখিল মাদরাসার ছাত্রী। তার মা মাহমুদা খাতুন বলেন, সাদিয়ার জন্মের এক বছরের মাথায় স্বামী সাইদুলের সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ ঘটে। এর পর জীবিকার তাগিদে ঢাকায় গিয়ে পোশাক কারখানায় চাকরি নেন তিনি। মেয়ে সাদিয়াকে রেখে যান গ্রামে মায়ের কাছে। অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় সাদিয়াকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রতিবেশী এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে দেয়া হয়। তখন সে স্বামীর বাড়িতে যেতে বেঁকে বসে। মাহমুদা বলেন, ‘একপর্যায়ে আপনার (এ প্রতিনিধি) সহযোগিতায় সে (মেয়ে) আমার কাছে চলে আসে। তখন থেকেই নিয়মিত পড়াশোনা চালিয়ে যায়।’
ময়মনসিংহে পরীক্ষা দিতে পারছে না ২১৪ জন!
এদিকে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হলেও থামছে না বাল্যবিয়ে। সম্প্রতি বাল্যবিয়ে হওয়ায় গতকাল শুরু হওয়া জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জেডিসি পরীক্ষা দিতে পারছে ময়মনসিংহের নান্দাইলে ৯৪ জন ছাত্রী। একই কারণে কুড়িগ্রামের রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলায় জেএসসি পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল ১২০ ছাত্রী।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রৌমারীতে তিনটি জেএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রে তিন হাজার ৬৪৩ পরীক্ষার্থীর মধ্যে অনুপস্থিত ছিল ৫৭ জন। রাজীবপুরে তিনটি জেএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রে এক হাজার ৯৫৪ পরীক্ষার্থীর মধ্যে অনুপস্থিত ৮৬ জন। রাজীবপুর সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে জেএসসিতে অনুপস্থিত ৩২ জনের মধ্যে ২৮ জনই মেয়ে। শিক্ষকরা জানান, অনুপস্থিত ছাত্রীদের বিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে তাদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে।
রৌমারীর কোমরভাঙ্গি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান জানান, দুর্গম চরাঞ্চলে বাল্যবিয়ের ঘটনা বেশি।