জ্ঞান, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সমাজ গঠনে প্রাথমিক শিক্ষা - দৈনিকশিক্ষা

জ্ঞান, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সমাজ গঠনে প্রাথমিক শিক্ষা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা ও ক্ষুধামুক্ত-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত বাংলাদেশ গড়তে হলে আগে চাই সুশিক্ষায় শিক্ষিত সুনাগরিক। এজন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইতিবাচক পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায়। ২০০৮ সালে বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার ‘দিন বদলের পালা’ বদলে দেয় জনসেবায় সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি। বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক উপসম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়। 

উপসম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকল্পে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো হয়ে ওঠে ফোকাল পয়েন্ট। সরকার কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন শিক্ষানীতি-২০১০ এর আলোকে প্রাথমিক শিক্ষায় পরিবর্তনের চিত্র দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে সর্বত্র।

জ্ঞান, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সমাজ গঠনে বহুমুখী পদক্ষেপের আলোকে সরকার প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সজানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ২০০৯ সাল থেকে প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে সমাপনী পরীক্ষা চালু করা হয়। ২০১৩ সালে ২৬ হাজারের বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়। প্যানেল শিক্ষক ও পুল শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের শিক্ষা সহজীকরণের জন্য এসেস্টিভ ডিভাইস বিতরণ করা হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে বছরের শুরুতেই শিশুদের হাতে বিনামূল্যে নতুন বই তুলে দেয়া হয়।

বিদ্যালয়গামী শিশুদের ঝরে পড়া রোধে ২০২৩ সালের মধ্যে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় ‘Midday meal’ চালু করার কার্যক্রম বাস্তবায়নাধীন রয়েছে, যা শিশুদের বিদ্যালয়ে উপস্থিতির পাশাপাশি শিক্ষার গুণগত পরিবর্তনে ভূমিকা রাখবে। নারী শিক্ষায় শতভাগ উপবৃত্তির ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খেলনাসহ পৃথক সুসজ্জিত শ্রেণিকক্ষ ও বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করা হয়। প্রায় শতভাগ বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে ক্লাস পরিচালনার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

বিদ্যালয়ের সার্বিক পরিবেশের মানোন্নয়ন ও শিশুদের কাছে আকর্ষণীয় করতে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষগুলো বিভিন্ন রঙে সজ্জিত করে মনোরম পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও বিদ্যালয়ের জন্য আধুনিক ও বহুতল ভবন নির্মাণ, ওয়াশ ব্লক তৈরি, শিশুদের নিরাপত্তায় বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ, আকর্ষণীয় শিক্ষা ও সঙ্গীত উপকরণ বিতরণসহ শিশুদের জন্য প্লেয়িং এক্সেসরিস (দোলনা, স্লিপার, ব্যালেন্সার ইত্যাদি) প্রদান করা হয়েছে।

বিদ্যালয়ের গুণগত মানোন্নয়নে প্রদানকৃত স্লিপ গ্র্যান্ট বৃদ্ধি করে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের চাহিদাভিত্তিক মেরামত ও সংস্কারের জন্য নিয়মিত প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ প্রদান করা হচ্ছে। শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য দেশে-বিদেশে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণের সুবিধা সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন করতে রয়েছে বিভিন্ন দিবস উদযাপনের সুযোগ। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সার্বিক নির্দেশনায় সাবলীলভাবে পড়া, হাতের লেখা ও ‘One Day One Word’ কার্যক্রম মাঠ পর্যায়ের প্রতিটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের কর্মোদ্যোগী করে তুলেছে।

বিদ্যালয়গুলোতে বেড়েছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি, বেড়েছে লেখা ও পড়ার প্রতি মনোযোগ। সেই সঙ্গে ১ম থেকে ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাংলা ও ইংরেজিতে সাবলীলভাবে রিডিং পড়ার হার বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৬৫ শতাংশ। এ কাজে শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের নিবিড় যত্ন ও মনিটরিং আরও জোরদার করলে শতভাগ শিশু সাবলীল পাঠক হিসেবে গড়ে উঠতে সক্ষম হবে।

শিশুদের লেখাপড়ার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষা ও দক্ষ নাগরিক হিসেবে তৈরি করতে রয়েছে কাব দল, হলদে পাখির দল; গণতান্ত্রিক চর্চার জন্য রয়েছে স্টুডেন্ট কাউন্সিল। নৈতিক চর্চা ও নৈতিকতার ডায়েরি ব্যবহার এবং বিভিন্ন পর্যায়ের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজনের মাধ্যমে শিশুর সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটার অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে এবং এর মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের অসাধারণ সাংস্কৃতিক প্রতিভার প্রকাশ ঘটছে। ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে শুরু করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট এবং এর ফলে প্রতি বছরই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে যোগ্য ও দক্ষ ক্রীড়াবিদ তৈরি হচ্ছে।

‘প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামো জরাজীর্ণ, লেখাপড়া মানসম্মত নয় এবং এটা শুধু দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের জন্য উপযোগী’- সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের এ ধারণা এখন আর সত্য নয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ তৈরি এবং পড়াশোনার মান উন্নত হওয়ায় বিগত কয়েক বছরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেড়েছে ভর্তির হার এবং সমাপনী পরীক্ষাসহ বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফলেও এগিয়ে থাকছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাফল্যে কিছু কিছু জায়গায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বেসরকারি ও ব্যক্তিমালিকানায় গড়ে ওঠা কিন্ডারগার্টেন।

অভিভাবকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বোঝা যায়, অধিকাংশ অভিভাবকই তাদের সন্তানের বেশি নম্বরের প্রত্যাশা করে। শুধু তাই নয়, ক্লাসে প্রথম হতে হবে- এমন অমানবিক চাপও ক্রমাগত দিতেই থাকে কোমলমতি শিশুদের ওপর; যার ফলে কিছু কিছু শিশু তাদের সুন্দর ও প্রাণোচ্ছল শৈশব হারিয়ে হয়ে পড়ে মুখস্থ করার যন্ত্র বা রোবট।

এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য চালু করা হয়েছে যোগ্যতাভিত্তিক পাঠদান ও পরীক্ষা পদ্ধতি। সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের যোগ্যতাভিত্তিক পাঠদান ও প্রশ্নের কাঠামো নিয়ে দেয়া হয়েছে বিশেষ প্রশিক্ষণ যা কিন্ডারগার্টেন বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পুরোপুরি অনুপস্থিত। তবে কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে কিছু অসাধুচক্র, অভিভাবকদের অজ্ঞতা ও বিবেকহীনতাকে ব্যবহার করে প্রশ্নফাঁসসহ অসদুপায় অবলম্বনের প্রচেষ্টা প্রায়ই লক্ষ করা যায়। এ ধরনের অপচেষ্টা ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকদের জন্য আত্মঘাতী।

কোচিং সেন্টার ও বাণিজ্যিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় শিক্ষার্থীদের অঙ্ক করার পদ্ধতি কিংবা প্রশ্নের উত্তর লেখার প্রক্রিয়া শেখানো হয় না; অঙ্কের সমাধান কিংবা প্রশ্নের উত্তর প্রস্তুত করে তা সরবরাহ করা হয়। এতে তাদের মুক্তচিন্তার চর্চা তথা সৃজনশীলতা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়। লেখাপড়ার মূল উদ্দেশ্য জ্ঞান অর্জনের পরিবর্তে জিপিএ-৫ প্রাপ্তি হয়ে উঠেছে ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবকদের প্রধান লক্ষ্য, যা শিক্ষার সীমাহীন পরিসীমাকে পাঠ্যপুস্তকের মাঝে সীমাবদ্ধ করে ফেলে। এর ফলে ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় ছাত্রদের মেধা বিকাশ, চিন্তা-চেতনার জাগরণ, সামাজিক ও মানবিক বোধশক্তির পরিস্ফুটন ‘বনসাই’ বৃক্ষের মতো স্থায়ীভাবে বাধাগ্রস্ত হয়।

ফলে তাদের চিন্তা ও চেতনায় নৈতিকতা, মানবিক মূল্যবোধ ও দেশপ্রেমের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। জিপিএ-৫ পাওয়ার আশায় কোচিংমুখী ও আত্মপ্রতারণায় উৎসাহী হয়ে বেড়ে ওঠা এসব শিশু ভবিষ্যতে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য হয়ে ওঠে হুমকিস্বরূপ। কোচিংভিত্তিক মুখস্থবিদ্যা তাদের জীবনে আচরণগত পরিবর্তন আনতে ব্যর্থ হয়। ফলে বড় হয়ে তারাই সামাজিক অনাচার ও অপরাধমূলক কাজের ধারক ও বাহক হিসেবে রাষ্ট্রের সামগ্রিক নিরাপত্তা ও উন্নয়ন ব্যাহত করার কাজে লিপ্ত হয়। এসব বাধা উত্তরণে সরকার ইতিমধ্যে বিদ্যালয়ে সৃজনশীল শিক্ষাব্যবস্থা চালু করেছে, যার সফল বাস্তবায়নের জন্য আরও জোরদার প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

প্রাথমিক শিক্ষায় সৃজনশীলতা ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণে টাঙ্গাইল জেলায় এসেছে দৃশ্যমান কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন। জেলার মির্জাপুর উপজেলায় অবস্থিত বাইমহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। একজন শিক্ষক ক্লাসে পড়ানোর সময় তিনি শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, দিনের বাকি সময় তিনি একজন ছাত্রের মতো শিক্ষা লাভে নিমগ্ন থাকেন। একজন শিক্ষক একই সঙ্গে ভালো ছাত্র না হলে ভালো শিক্ষক হতে পারেন না। বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষক শুধু পাঠ্যপুস্তকের বর্ণিত বিষয়েই শিক্ষা দেন না, তিনি ছাত্রদের আচরণগত শিক্ষাসহ প্রাত্যহিক জীবনে প্রয়োজনীয় সব বিষয়ে শিক্ষা দিয়ে থাকেন।

এমনি এক আদর্শ শিক্ষাব্যবস্থার পরিস্ফুটন ঘটেছে বাইমহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষাঙ্গনে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ ও পাঠদানের বিশেষ প্রক্রিয়া ছাত্রদের শিক্ষার সব অঙ্গনে সমহারে পারদর্শী করে তুলেছে। ‘জিপিএ-৫’ পাওয়ার পাশাপাশি প্রতিটি ছাত্র নাচ, গান, কবিতা আবৃত্তি, বক্তৃতা ও সাবলীল আচরণে দক্ষতা অর্জন করছে। ছাত্রদের মধ্যে আত্মবিকাশ, দেশপ্রেম ও নেতৃত্ব জাগরণে এ বিদ্যালয়টি সারা দেশে অপ্রতিদ্বন্দ্বী

। বিদ্যালয়টি প্রাথমিক শিক্ষায় এনেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। ফলে বিদ্যালয়ের পাশে অবস্থিত কিন্ডারগার্টেন প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। এমনকি কিন্ডারগার্টেন মালিকপক্ষ জমি ও স্থাপনা বিক্রি করে অন্যত্র ব্যবসা স্থানান্তরে বাধ্য হয়েছে।

ইদানীং লক্ষ করা যায়, মির্জাপুরে কর্মরত কর্মকর্তারা অন্যত্র বদলির পরও সন্তানদের এ বিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য পরিবারকে নতুন কর্মস্থলে স্থানান্তরিত না করে মির্জাপুরে রেখে যান। সম্প্রতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগের সচিব আকরাম-আল-হোসেন বিদ্যালয়টি পরিদর্শন শেষে মতবিনিময় সভায় বাইমহাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন এবং এ বিদ্যালয়ের শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ ও পাঠদান প্রক্রিয়া দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘replicate’ করার ঘোষণা দেন। ইতিমধ্যে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

বাইমহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনুকরণে টাঙ্গাইল জেলার ১ হাজার ৬২৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ও পাঠদান প্রক্রিয়ায় ব্যাপক পরিবর্তন শুরু হয়েছে। এ পরিবর্তনের চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের সমন্বিত প্রচেষ্টা। বিগত ২ বছরে প্রাথমিক শিক্ষায় টাঙ্গাইল জেলার অগ্রগতির তুলনামূলক চিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০১৮ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির হার ছিল ৯৮.৩২, যা ২০২০ সালে হয়েছে ৯৯.১২।

২০১৮ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থেকে ঝরেপড়ার হার ছিল ৪.২৩, যা ২০২০ সালে হয়েছে ৩.৮৬। ২০১৮ সালে সাবলীল পাঠে সক্ষমতায় সারা দেশের গড় ছিল ৩৭ শতাংশ ও টাঙ্গাইল জেলায় তা ছিল ৫০ শতাংশ। ২০২০ সালে সাবলীল পাঠে সক্ষমতায় সারা দেশের গড় ৬৫ শতাংশ ও টাঙ্গাইল জেলায় তা ৮০ শতাংশ।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির হার শতভাগ উন্নীত করার জন্য দরকার সব শিশুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ভর্তি ও সহজে বিদ্যালয়ে গমন এবং পাঠ গ্রহণে সুবিধা প্রদান। এসব সুবিধা প্রদানে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রতি দুই কিলোমিটার দূরত্বে ক্যাচমেন্ট এলাকাভিত্তিক প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা, বিনামূল্যে বই বিতরণ এবং ‘Midday Meal’, শিশুদের ঝরেপড়ার হার কমিয়ে আনতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্তসংখ্যক প্রশিক্ষিত শিক্ষক। শিক্ষক স্বল্পতার কারণে অনেক বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষক একত্রে বিপুলসংখ্যক (কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০০ জন) ছাত্রদের ক্লাস নিতে হচ্ছে।

এতে প্রত্যেক ছাত্রের প্রতি মনোযোগ তথা ব্যক্তিগত পর্যায়ে প্রত্যেক ছাত্রের মনোযোগ আকর্ষণ ও শিক্ষাকে ‘personalise’ করার সব সম্ভাবনা বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে শিক্ষার মান সমুন্নত রাখা যেমন সম্ভব হয় না; তেমনি অনেক ছাত্র ধীরে ধীরে পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে বিদ্যালয় ত্যাগের পথে ধাবিত হয়। শিক্ষকপ্রতি ছাত্র সংখ্যার আধিক্য কমিয়ে সহনীয় ও গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে আনার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ ত্বরান্বিত করেছে এবং নিয়োগের পরপর রয়েছে নিবিড় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। কাঠামোগত উন্নয়ন ও শিক্ষা প্রক্রিয়ায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকার বেশকিছু অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প গ্রহণ করেছে। প্রাথমিক শিক্ষা খাতে প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান ও বাজেট বৃদ্ধিতে সরকারি প্রচেষ্টা অব্যাহত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মানসম্মত শিক্ষার মজবুত ভিত্তি গড়তে সারা দেশের পাঠের সঙ্গে সঙ্গতি রাখতে চালু করা হয়েছে বার্ষিক পাঠ পরিকল্পনা, যা একটি যুগান্তকারী ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। এ ক্ষেত্রে যদি শিশুদের জন্য দৈনিক পাঠ ও হোমওয়ার্ক লিখতে সরকারিভাবে ডায়েরি ব্যবহারের নির্দেশনা ও ডায়েরি সরবরাহ করা হয়, তবে এ কাজে আরও গতিশীলতা আসবে বলে মনে করছি। শিশুদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সঙ্গীত ও শারীরিক শিক্ষায় বিশেষ শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত একটি ফলদায়ক পদক্ষেপ। তবে এর পাশাপাশি একজন করে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হলে ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার ভিত্তি হবে মজবুত। এর ফলে ছাত্রদের সুনাগরিকের গুণাবলি অর্জনের পাশাপাশি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের ঐতিহ্য হবে সমুন্নত।

শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকার কারণে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরা তাদের সহপাঠীদের সঙ্গে সব প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ পায় না। এক্ষেত্রে পৃথক ইভেন্ট থাকলে তাদের মধ্য থেকেও বেরিয়ে আসবে দক্ষ ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিভা; যারা ভবিষ্যতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাসহ ‘Special Olympic Games’-এ অংশগ্রহণের সুযোগ পেতে পারবে। এছাড়াও সমাপনী পরীক্ষায় তাদের পাসের উপযোগী করতে, বিশেষ করে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য বিশেষ কোনো শিক্ষা পদ্ধতির পরীক্ষা ও মূল্যায়ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে শিক্ষা গ্রহণে সবার সমহারে অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত হবে।

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে পাসের হার শতভাগে উন্নীত করা এবং তা সমুন্নত রাখা, শতভাগ বিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সুবিধা প্রদান, নিরাপদ খাবার পানি ও বালক-বালিকাদের পৃথক স্যানিটেশন নিশ্চিত করা এবং শতভাগ বিদ্যালয়ে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুবান্ধব পরিবেশ তৈরি হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সমতার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাবে। এসডিজির মূল কথা ‘কাউকে পেছনে ফেলে নয়’-এর সফল বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনই হবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাঙ্ক্ষিত জ্ঞান ও বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের চাবিকাঠি এবং আজকের ছাত্র আগামীতে আদর্শ দেশপ্রেমিক নাগরিক হয়ে গড়ে ওঠার মূলমন্ত্র।

লেখক: মো. শহীদুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক, টাঙ্গাইল

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0041730403900146