প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের ঝুঁকির মধ্যেই বরগুনার আমতলীর ইটভাটিতে কাজ করছে শ্রমিকরা। চুক্তিভিত্তিক কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত মালিকরা ইচ্ছা করে ছুটি দিচ্ছে না বলে শ্রমিকদের অভিযোগ। এদিকে মালিকরা বলছেন, শ্রমিকদের কাজ করতে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, তারা ইচ্ছা করেই ছুটি নিচ্ছে না।
জানা গেছে, আমতলী উপজেলায় ঝিকঝাক ও ড্রামচিমনি নিয়ে ২৩টি ইটভাটি রয়েছে। প্রত্যেক ইটভাটিতে অন্তত ১শ ৫০ থেকে ২শ শ্রমিক কাজ করে। সে হিসেবে উপজেলার সকল ইটভাটিতে অন্তত সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক কাজ করছে।
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে ২৬ মার্চ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। ওই সময় থেকে সকল মানুষ করোনা ভাইরাসের প্রভাব থেকে জীবন রক্ষায় ঘরে অবস্থান করছে। কিন্তু আমতলীর ইটভাটা শ্রমিকরা করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে ইটভাটিতে কাজ করছে। সকল মানুষ সরকারের নির্দেশনা মানলেও আমতলী ইটভাটির মালিকরা তা মানছে না। তারা সরকারের নির্দেশনা উপেক্ষা করে শ্রমিকদের ছুটি না দিয়ে ইটভাটিতে কাজ করাচ্ছেন। শ্রমিকরা ছুটি চাইলেও তারা ছুটি দিতে টালবাহানা করছে এমন অভিযোগ শ্রমিকদের।
তবে ছুটি না পেয়ে কিছু শ্রমিক করোনা ভাইরাসের ভয়ে ইটভাটি ছেড়ে পালিয়ে গেছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। শ্রমিকরা বলেন, ছয় মাসের চুক্তিতে ইটভাটায় কাজ নিয়েছি। চুক্তি শেষ না হওয়া পর্যন্ত মালিক ছুটি দিচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে করোনা পরিস্থিতিতেও ঝুঁকি নিয়ে আমাদের কাজ করতে হচ্ছে।
সোমবার আমতলী উপজেলার জিমি, সাউথ, কেএবি, ঢাকা, মা, আরএনটি, এএটি, এনবিএম ও তৌহিদ ইটভাটি ঘুরে দেখা গেছে, ইটভাটিতে নারী ও পুরুষ শ্রমিকরা কাজ করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শ্রমিক বলেন, ছয় মাসের চুক্তিতে ইটভাটিতে কাজ নিয়েছি। চুক্তি শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাজ করতে হবে। মালিক তো করোনা ভাইরাস চেনে না। শ্রমিকদের বাঁচা না বাঁচা নিয়ে মালিকদের মাথা ব্যথা নেই। তারা আরও বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে ছুটি চেয়েছিলাম। কিন্তু ছুটি না দিয়ে উল্টো তারা বলেন করোনা মরোনা বলতে কিছুই নেই।
সাউথ ইটভাটার শ্রমিক মোক্তাদিন, জাকির হাওলাদার, লিটন, বশার ও দুলাল ঘারামী বলেন, কাজ না করলে মালিক বেতন দেয় না, তাই বাধ্য হয়ে কাজ করছি।
আমতলী উপজেলার উত্তর টিয়াখালী এলাকার সাউথ ইটভাটির ম্যানেজার মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, শ্রমিকদের ছুটি দিলে ইটভাটি বন্ধ হয়ে যাবে। তাই ছুটি দিচ্ছি না।
আমতলী উপজেলা ইটভাটির মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার শ্রমিকদের কাজ করার কথা স্বীকার করে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে সকল ইটভাটা কর্তৃপক্ষের শ্রমিকদের ছেড়ে দেয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, আমার ভাটির শ্রমিকদের খাদ্য সহায়তা দিয়ে ছেড়ে দিয়েছি।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন বলেন, ইটভাটির মালিকদের শ্রমিক ছুটি দেয়ার নির্দেশ দিয়েছি। তারপরও যারা শ্রমিকদের ছুটি দেয়নি, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।