ঝুঁকিপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাব্যবস্থায় বৈষম্য - দৈনিকশিক্ষা

ঝুঁকিপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাব্যবস্থায় বৈষম্য

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ছেলেবেলায় শরতের ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ নিয়ে অনেক কিছু কল্পনা করতাম। এক মেঘখণ্ডকে ভাবতাম, সুন্দরী এক মেয়ে ঝাঁকড়া চুল উড়িয়ে হাত-পা নেড়ে নেড়ে তার বিপদের কথা বলতে আসছে। তার পেছনে পেছনে ভয়ংকর রাক্ষস মেঘ তাকে ধরার জন্য পিছু পিছু ধাওয়া করছে। গ্রামের একটি সরকারি স্কুলে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শিক্ষকদের পাঠদান করতে দেখে ছেলেবেলায় মেঘ দেখে কল্পনার কথাগুলো মনে হলো। ছাদ ধসে পড়ার ভয় যখন-তখন—তার মধ্যেই ক্লাস চলছে। বাংলাদেশে এ রকম ঝুঁকিপূর্ণ শত শত ভবনে ছাত্রছাত্রীদেও পড়ানো হচ্ছে। অনেক দুর্ঘটনার খবরও আসছে। শিক্ষার্থীদের সুপ্ত সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তুলতে এই ভীতিকর পরিবেশ থেকে তাদের মুক্ত করতে হবে। শনিবার (২৭ জুলাই) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধটি লিখেছেন জয়নুল আবেদীন স্বপন।

বাংলাদেশকে উন্নত দেশ বানাতে গেলে শিক্ষার উন্নয়ন আগে দরকার। এজন্য সবার আগে চাই সুন্দর পরিবেশে সুন্দর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যেখানে শিক্ষার্থীদের জন্য নিজস্ব একটা জগত্ থাকবে। আকাঙ্ক্ষা পূরণে ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রসার ঘটানোর জন্য নিরাপদ জায়গা হতে হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে মানসম্মত ও সময়োপযোগী শিক্ষার বিকল্প নাই। শিক্ষার চালিকাশক্তি শিক্ষক। উন্নত দেশে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তিও শিক্ষক। যে দেশে শিক্ষকের মর্যাদা বেশি, সে দেশে শিক্ষার মানও তত বেশি। আমাদের দেশে শিক্ষকের বেতন সবচেয়ে কম। এজন্য মেধাবীরা এ পেশার প্রতি অনাগ্রহী। শিক্ষকরা দেশ গড়ার নির্মাতা। তাদের সুযোগ-সুবিধা না দিলে শিক্ষায় প্রাণ আসবে না।

সরকারি, বেসরকারি, কিন্ডারগার্টেন, মাদ্রাসা, প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানসহ নানামুখী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নানামুখী বৈষম্য বিদ্যমান। দেশে আদর্শ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা খুবই কম। অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন মানা হচ্ছে না। প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হিমশিম খাচ্ছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। সরকার উচ্চশিক্ষা ও গবেষণাধর্মী শিক্ষার ওপর জোর দিয়েছে। শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য এটা ভালো কাজ। কিন্তু প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে দুর্বল শিক্ষা দিয়ে মানসম্পন্ন শিক্ষা আশা করা যায় না। এজন্য এ পর্যায়ে অবকাঠামো গঠনের জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া দরকার।

শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য সময়োপযোগী শিক্ষা পদ্ধতি চালু করতে হবে। সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশ গড়তে শিক্ষার্থীদের উদ্যমকে কাজে লাগানোর বিকল্প নেই। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে উন্নত দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে মিলিয়ে তৈরি করতে হবে। ব্যবহারিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে হবে উন্নত দেশের মতো। তবে শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের বিরাজমান সমস্যার সমাধান একদিনে হবে না। শিক্ষা একটি সমম্বিত ব্যবস্থা। শিক্ষার সব পর্যায়ের সঙ্গে সমম্বয় রক্ষা করে ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষা সংস্কার করা একান্ত জরুরি। আমরা শিক্ষার গুণগত মান ফিরে পেতে চাই।

শিক্ষাক্ষেত্রে চরম নৈরাজ্য চলছে। সুনির্দিষ্ট নীতিমালা এখনো শিক্ষাক্ষেত্রে তৈরি হয়নি। জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন নিয়েও ঘাপলা আছে। শিক্ষার অগ্রগতির বাধাগুলো দূর করতে হবে। নিম্ন আয়ের মানুষের সন্তানদের ভবিষ্যতের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা কঠিন। সবাইকে সমান সুযোগ দিয়ে শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন দরকার। যথাযথ শিক্ষা পদ্ধতি চালু হলে সমাজেও বৈষম্য কমে আসবে। ব্রিটিশ আমল থেকে যে শিক্ষানীতি চলে আসছিল তার ওপর ভিত্তি করেই জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ চালু হয়। এর আগে শিক্ষার অনেক কমিশন প্রবর্তন হলেও কোনো কমিশন বেশিদিন টেকেনি। তবে ১৯৭২ সালে শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞানী ড. কুদরাত-এ-খুদার নেতৃত্বে একটি শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ কমিশনের উদ্বোধন করেন। যার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা ভাবনাগুলো কার্যকারিতা পেয়ে আসছিল। ৭৫-এর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর তার সমাপ্তি ঘটে।

লেখক: গাজীপুর

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0060570240020752