এক ব্রিটিশ সাংবাদিক বন্ধুর ব্যাখ্যাটা এমন- রূপকথার সেই আলাদিনের চেরাগের মতোই এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল! ঠিকমতো ঘষা লাগলেই একের পর এক দৈত্য সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। গেইল, লুইস, হোপ, পুরান, রাসেল, থমাস, কটরেল- নিজেদের দিনে যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারেন। সেই বন্ধুকে জানিয়ে দেওয়া হয়, সেই চেরাগের ঘর্ষণ ঠেকিয়ে দেওয়ার কৌশল কিন্তু টাইগারদের জানা। শেষ ৯ ম্যাচের ৭টিতেই জিতেছে বাংলাদেশ। সোমবার (১৭ জুন) সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন সঞ্জয় সাহা পিয়াল।
অভিজ্ঞতা আর পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতায় আজকের ম্যাচে বাংলাদেশই যে ফেভারিট, সেটা ক্যারিবীয় অধিনায়ক জেসন হোল্ডারও মেনে নিয়েছেন। দায় নয়, এ একটি ম্যাচে বাংলাদেশ নামছে জয়ের দায়িত্ব নিয়েই। টনটনের ছোট মাঠে ক্যারিবীয় হার্ডহিটারদের ডাঙ্গুলি খেলার ভয়কে উড়িয়ে দিচ্ছে টাইগারদের জোরালো আত্মবিশ্বাসই। সাকিব- মিরাজদের স্পিন দিয়েই গেইলের মতো হার্ডহিটারদের থামিয়ে রাখার চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাও। একাদশে তাই চার পেসার নয়, বরং মিঠুনের বদলে সাব্বিরকে নিয়ে স্পিন আক্রমণও প্রয়োজনে শক্তিশালী করতে প্রস্তুত টিম ম্যানেজমেন্ট।
চার ম্যাচে তিন পয়েন্ট নিয়ে সেমির মাঝপথে এসে দাঁড়িয়ে দুটি দল। আজকের দুটি পয়েন্ট যে কোনো দলকেই শেষ চারের লক্ষ্যে আরেক ধাপ এগিয়ে দেবে। ম্যাচটির মূল্যমান তাই দ্বিপক্ষীয় সিরিজের কোনো ম্যাচের চেয়ে অনেক বেশি। যেখানে সামান্যতম ভুল পথভ্রষ্ট করে দিতে পারে। তাই খুব সতর্ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। তার কাছের লোকেরা বলাবলি করছে যে, আয়ারল্যান্ডে যে দলকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ, যে দলকে ঘরের মাঠে হারানো গেছে, ওদের ওখানে গিয়েও জয় এসেছে- সেই দলকে তো আজ তুড়ি মেড়ে উড়িয়ে দেওয়ার কথা।
তাদের থামিয়ে মাশরাফির সতর্কতা। 'এটা কিন্তু বিশ্বকাপ, দ্বিপক্ষীয় কোনো সিরিজ না। দ্বিপক্ষীয় সিরিজগুলোতে প্রতিপক্ষকে নিয়ে অনেক বেশি কৌশলী হওয়া যায়। বিশ্বকাপের মতো আসরে সেই সুযোগ কম। এখানে প্রতিপক্ষ পাল্টাতে থাকে, মাঝে বিরতি থাকে। ভেন্যু পরিবর্তন করতে হয়। পিচ অন্যরকম হয়। তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে আগের রেকর্ডগুলো মাথায় রেখে রিলাক্স করার কোনো সুযোগ নেই।'
আয়ারল্যান্ডের ত্রিদেশীয় সিরিজে এই দলের গেইল, রাসেল, পুরানরা ছিলেন না। তবে ওসানে থামাস, কেমার রোচ, কটরেলরা ছিলেন। আজকের ম্যাচে তাই টাইগার ব্যাটসম্যানদের চেয়েও বেশি চ্যালেঞ্জ বোলারদের। ব্যাপারটি মাশরাফি নিজেও মেনে নিয়েছেন। 'ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলের সঙ্গে খেলতে নামলে প্রতিপক্ষ যে কোনো দলের বোলারদের জন্যই তা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। ওদের শুরুতেই আটকে দিতে হবে আমাদের। বড় কোনো পার্টনারশিপ যাতে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ছোট মাঠে ওরা তুলে মারবেই, সেটাই বরং আমি ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। কেননা তুলে মারতে গিয়ে ভুল হবেই। ক্যাচ উঠবেই।'
এবারের আসরে ইংল্যান্ডের কাছে সদ্যই ২১২ রানে অলআউট হওয়ার জ্বালা আছে ক্যারিবীয়দের। আবার প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানকেও ১০৫ রানে অলআউট করে দেওয়ার আনন্দ আছে তাদের। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ১৫ রানের হার আর দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে বৃষ্টির কারণে পয়েন্ট ভাগাভাগি। এখন পর্যন্ত গেইল কিংবা রাসেলদের কেউ তাদের ব্র্যান্ড ভ্যালু দেখাতে পারেননি।
টনটনের এই মাঠে বছর দশেক আগে বয়স ভিত্তিক দলের হয়ে একটা ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়েছিল পেসার রুবেলের। তা ছাড়া এই মাঠে আগের ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়া এবং পাকিস্তান দু'দলই চার পেসার দিয়ে তাদের একাদশ সাজিয়েছিল। সেদিন মেঘলা আকাশ আর ঠাণ্ডা বাতাসের মধ্যে বল সুইংও করেছিল বেশ। তাহলে কি আজ বাংলাদেশও চার পেসার নিয়ে নামবে? ক্যামেরার সামনে মাশরাফির সৌজন্য বক্তব্যটা এমন- 'এটা এখনও ঠিক হয়নি। কাল সকালে টিম ম্যানেজমেন্ট বসে ঠিক করবেন, কী হবে।'
ইঙ্গিতটা তিন পেসার নিয়েই নামার। সেই ক্ষেত্রে রুবেলকে হয়তো আজও অপেক্ষা করতে হতে পারে। টিম ম্যানেজমেন্টের ভাবনা, একাদশে ব্যাটসম্যান কমিয়ে বাড়তি পেসার খেলানোর কোনো যুক্তি নেই। কেননা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ব্যাটসম্যানের তালিকা যত লম্বা করা যায় ততই নাকি নিরাপদ। তা ছাড়া নেটেই যারা কি-না একশ' চল্লিশের গতির বল ঠুকঠাক করে তাদের সামনে গতিমানব এনেও খুব সুবিধা হবে না। তাই সাকিবের আর্মার কিংবা মিরাজের লেন্থ বলগুলো দিয়েই গেইলদের আটকানোর কৌশল নেওয়া হয়েছে।
তবে গতকাল সেন্টার উইকেটের পাশে মাশরাফি আর মুস্তাফিজের পাশে যেভাবে বোলিং করতে দেখা গেল রুবেলকে। তাতে আজকের একাদশে তার উপস্থিতিও অবাক করার কিছু থাকবে না। সেক্ষেত্রে সাইফউদ্দিনের জায়গাটি পেতে পারেন তিনি। বোলারদের নিয়ে যখন পরিকল্পনাটা এমন তখন ব্যাটসম্যানদের বলে দেওয়া হয়েছে পিচের ভাষা বুঝে তারপর হাত খুলতে। রান যা-ই আসুক, শুরুতে উইকেট না দেওয়ার সেই পুরনো কথাটিই বলা হয়েছে টিম মিটিংয়ে। হাত খুলবেন সৌম্য, সতর্ক থাকবেন তামিম। মাঝে সাকিব-মুশফিক তো রয়েছেনই।
সাকিবের চোট সেরেছে। গতকাল নেটে ব্যাটিংও করেছেন অনেক সময় নিয়ে। মুশফিককে অবশ্য ব্যাট হাতে নিতে দেখা যায়নি। আগের দিন নেটে ডান হাতে চোট পাওয়ার পর এক্স-রে করা হয়েছিল। রিপোর্টে খারাপ কিছু আসেনি। টিম সূত্রের নিশ্চিত খবর, আজ তিনি খেলছেন। বিশ্বকাপের হাতে ধরা ম্যাচ এটি। জয়ের কোনো বিকল্প ভাবনা নেই টাইগারদের সামনে। ভয়টা শুধু টনটনের বাইশ গজ আর মুখ কালো করা আকাশকে নিয়ে।
মুশফিকের এক্স-রে রিপোর্টে কী আছে? হাঁটুর ব্যথা নিয়ে আন্দ্রে রাসেল খেলবেন কি-না? পিচে ঘাস আছে কি-না? একাদশে কোনো পরিবর্তন হবে কি-না? বিশ্বকাপে আট দিন ধরে টাইগারদের কোনো ম্যাচ দেখতে না পাওয়ায় ম্যাসেঞ্জার আর হোয়াটসঅ্যাপের ইনবক্স ভরে গেছে সমর্থকের একটি প্রশ্নেই- টনটনে বৃষ্টি হবে না তো? এখানকার ফোরকাস্ট বলছে- না রে ভাই, বৃষ্টি নেই। আজকের ম্যাচটি অবশ্যই মাঠে গড়াবে।