ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র অতীথ সরকার। কখনও গণমাধ্যমে কাজ না করলেও এতটুকু বয়সেই তিনি একটি অনলাইন 'নিউজ পোর্টালের' উপদেষ্টা সম্পাদক। ফেসবুক আর ইউটিউবেও সক্রিয় তিনি। নানা ইস্যুতে নিজের পোর্টালে নিউজ তৈরি করে তা প্রচার করেন। ফেসবুক আর ইউটিউবেও তা প্রকাশ করেন। কিন্তু তার প্রচারিত সবকিছুই গুজব আর অপপ্রচার!
তবে কারও পক্ষ নিয়ে তিনি এই গুজব ছড়ান না। বেশি টাকা রোজগারের জন্যই তিনি অনলাইনে অপপ্রচার চালান। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় সম্প্রতি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তাকে গ্রেপ্তার করলে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে। ডিবি জানায়, 'বেঙলিপ্রেজেন্ট ডটকম' নামের অখ্যাত একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের মালিক এবং উপদেষ্টা সম্পাদক মো. অথীত সরকার।
সর্বশেষ গত ৫ জানুয়ারি রাজধানীর কুর্মিটোলায় রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় গুজব ছড়ানো শুরু করেন। ইউটিউব ও নিজের ফেসবুক পেজে ওই ঘটনা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জড়িয়ে অপপ্রচার চালাতে থাকেন। একপর্যায়ে নিজের অনলাইন নিউজ পোর্টালে গত ১৪ জানুয়ারি 'ঢাবির ছাত্রী গণধর্ষণে ডিবির টিম জড়িত' শিরোনামে প্রতিবেদন প্রচার করেন। ওই প্রতিবেদনটি নিজের ফেসবুক পেজে ছড়িয়ে দেন। লোকজন এমন ভুয়া নিউজটি যাচাই না করেই শেয়ার দেন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন।
ফেসবুক ঘেঁটে দেখা যায়, ভুয়া ওই প্রতিবেদনটি অনেকেই নিজের ফেসবুকে শেয়ার করেন। এর নিচে বহুজন নানা ধরনের আপত্তিকর মন্তব্য করতে থাকেন। একজন ওই প্রতিবেদনটি শেয়ার করে লেখেন, 'পড়ি আর শিহরিত হই, শর্ষের মধ্যে ভূত থাকলে কিইবা করার আছে!' আরেকজন লেখেন- 'তদন্তের দায়িত্ব তো ডিবিকেই দেয়া হয়েছে। পরশুদিন ওখানে গিয়ে দেখি পুলিশরা অনেক তিড়িং-বিড়িং করছে। ভুয়া একটা রিপোর্ট দিয়ে হয়তো দায় সারবে।'
অবশ্য ঢাবি ছাত্রী ধর্ষণ মামলার তদন্ত সংস্থা ডিবি উত্তর বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান সমকালকে বলেন, গ্রেপ্তার অথীত সরকার ইচ্ছা করেই নানা সাইবার স্পেস ব্যবহার করে ঢাবি ছাত্রীর ধর্ষণ ঘটনার বিষয়ে গুজব ছড়ান। গ্রেপ্তারের পর তিনি জানিয়েছেন, কারও পক্ষে বা বিপক্ষ অবলম্বনের জন্য নয়। শুধু এ ধরনের আজব শিরোনামে প্রতিবেদন দিলে তা বেশি শেয়ার হয়, মানুষ বেশি পড়ে। সাইটে হিট বেশি হয়। এজন্য তিনি ঢাবি ছাত্রীকে জড়িয়ে মিথ্যা শিরোনাম করেছিলেন। এতে অনলাইনে তার আয় বেড়েছে।
ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ঢাবি ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের মামলার তদন্ত শেষ হয়েছে। সব ধরনের ফরেনসিক পরীক্ষার প্রতিবেদনও পাওয়া গেছে। শিগগির গ্রেপ্তার মজনুর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয়া হবে।
ওই ঘটনায় দায়ের মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিবির ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিমের এডিসি জুনায়েদ আলম সরকার সমকালকে বলেন, গ্রেপ্তার অথীত সরকার ঢাবি ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনা ছাড়াও নানা ইস্যুতে অপপ্রচার ও গুজব চালিয়ে আসছিলেন। গ্রেপ্তারের পর তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন, এসব তিনি অনলাইনে টাকা আয় করার জন্যই করেছেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ডিবি সূত্র জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া অথীত সরকার দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তার বাবা বাবুল সরকার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাবুর্চির কাজ করেন। কিন্তু অনলাইনে টাকা আয়ের নেশায় অথীত গুজব ছড়ানোর কাজটিই আপাতত বেছে নেন।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেঙলিপ্রেজেন্ট ডটকম নামের নিউজ পোর্টালটি রাজধানীর ডেমরার লন্ডন প্লাজা নামের একটি মার্কেটের দোকান থেকে চালানো হয়। এর কোনো নিজস্ব প্রতিবেদক নেই। অথীত সরকার বিভিন্ন অনলাইন ঘেঁটে প্রতিবেদন কপি-পেস্ট করে নিজের নামে চালিয়ে দিতেন।
এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের বিকৃত ও ভুয়া নিউজ তৈরি করে তা নিজের অনলাইনে প্রচারের পাশাপাশি ফেসবুক পেজে শেয়ার করতেন। অনলাইন পোর্টালটি বর্তমানে চালু থাকলেও ঢাবি ছাত্রীকে নিয়ে গুজব ছড়ানো ওই প্রতিবেদনটি সরিয়ে নেয়া হয়েছে। সেখানে একটি মোবাইল নম্বর দেয়া থাকলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।