ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ উন্মাদনা আর টান টান উত্তেজনার আবহেই ইরানের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের নির্বাহী আদেশ দিয়েছেন ট্রাম্প। সে আদেশের অনুলিপি হোয়াইট হাউজ প্রকাশ করেছে।
এতে বিশ্বে সন্ত্রাসের বড় ধরনের মদদদাতা, সামরিক শক্তি ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটি ও সেনাদেরকে হুমকির মুখে ফেলাসহ ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলোকে সহায়তাকারী দেশ হিসাবে ইরানকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় রাখতে বলা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্টিভ মিউচিন বলেছেন, ইরানের বিভিন্ন শিল্প নতুন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়বে। এর মধ্যে আছে নির্মাণ শিল্পসহ, শিল্প উৎপাদন, বস্ত্র, খনি, ইস্পাত ও লোহা শিল্প।
অন্যান্য আরও কিছু নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসছেন ইরানের ৮ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, এই কর্মকর্তারা এ সপ্তাহে ইরাকের মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় জড়িত ছিলেন। বিশ্বে ইরানের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করাই এ নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য বলে উল্লেখ করা হয়।
ইরানের ‘অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বলয়’এ শাস্তিমূলক নিষেধাজ্ঞার টার্গেট বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। এর আগে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার নিষেধাজ্ঞার ধরন সম্পর্কে পূর্বাভাস দিয়ে বলেছিলেন, ইরানের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা বহাল আছে তা অনেক কঠোর। কিন্তু এখন এগুলো আরও অনেক বেশি বাড়িয়ে দেয়া হবে।
ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে গত সপ্তাহে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাবে ট্রাম্প বুধবার সামরিক শক্তি প্রয়োগের পথে না গিয়ে ইরানের ওপর বাড়তি এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন হোয়াইট হাউজের ভাষণে।
ইরান ও আমেরিকার মধ্যকার প্রাথমিক উত্তেজনার পর্যায়টি এখন অনেকটাই প্রশমিত ধরে নেয়া হয়েছিল। আক্ষরিক অর্থে না হলেও মোটাদাগে যে যুদ্ধ-যুদ্ধ উন্মাদনা তৈরি হয়েছিল তার রাশ দুই পক্ষই টেনে ধরেছে। ইরান ইরাকে থাকা মার্কিন কিছু স্থাপনায় হামলা চালিয়ে তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমরবিদ কাশেম সোলাইমানি হত্যার প্রতীকী প্রতিশোধ নিয়ে সরাসরি বলে দিয়েছে যে, ‘যুদ্ধ চাই না’। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী হামলায় ৮০ জন আমেরিকান নিহত হয়েছেন।
কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলে দিয়েছেন, কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। একই সঙ্গে তিনি এও বলে দিয়েছেন যে, সব ঠিকঠাকই আছে। নতুন কোনো আস্ফালন তিনি করেননি। তবে নতুন করে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে পিছপাও হননি।
এই পরিস্থিতি বলে দিচ্ছে যে, ইরান ও আমেরিকার মধ্যকার উত্তেজনা খুব শিগগিরই সরাসরি যুদ্ধের মতো কোনো দিকে যাচ্ছে না। তবে বিভিন্ন ফ্রন্টে চলমান ছায়াযুদ্ধ যে চলবে, তা এক রকম নিশ্চিত।