ঠিকানায় গিয়ে অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি ইউজিসির তদন্ত দল - দৈনিকশিক্ষা

দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লাঠিকানায় গিয়ে অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি ইউজিসির তদন্ত দল

সাইফ সুজন |

বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা। শর্ত অমান্য, প্রশাসনিক ও আর্থিক অব্যবস্থাপনা এবং শিক্ষার মান সন্তোষজনক না হওয়ায় ২০০৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ করে দেয় সরকার। পরবর্তীতে আদালতের রায়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালুর অনুমোদন ফিরে পায় বিশ্ববিদ্যালয়টি। কিন্তু পুনরায় কার্যক্রম শুরুর জন্য অবকাঠামো সুবিধা ও আইনে বর্ণিত শর্তাদি পূরণের অগ্রগতি পরিদর্শনে গিয়ে নিজ ঠিকানায় বিশ্ববিদ্যালয়টির কোনো অস্তিত্বই খুঁজে পায়নি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) তদন্ত দল।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আদালতের নির্দেশনার আলোকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ‘দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা’কে পুনরায় কার্যক্রম শুরু করার অনুমতি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ অনুমতিপত্রে বিশ্ববিদ্যালয়টির কোনো ঠিকানা উল্লেখ ছিল না। পরে বিশ্ববিদ্যালয়টির পক্ষ থেকে ‘১৫ ছায়াবাড়ি ভবন, রোড # ৩১, সেক্টর # ৭, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০’ ঠিকানা হিসেবে ইউজিসির ওয়েবসাইটে অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করা হলে প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানা স্পষ্ট করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় ইউজিসি। চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবেদন সংযুক্ত করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইউজিসিকে নির্দেশনা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই আবেদনেও একই ঠিকানা উল্লেখ ছিল। গত ৬ জুন ওই ঠিকানায় সরেজমিন পরিদর্শন করে ইউজিসির তদন্ত কমিটি।

বিশ্ববিদ্যালয়টির ঠিকানা সরেজমিন পরিদর্শনের জন্য গঠিত এ তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন ইউজিসির সদস্য ড. মোহাম্মদ ইউসুফ আলী মোল্লা। চার সদস্যের এ কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন— ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন, ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক জাফর আহম্মদ জাহাঙ্গীর এবং কমিটির সদস্য সচিব ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের সিনিয়র সহকারী পরিচালক নাসিমা আক্তার খাতুন।

এ কমিটির পরিদর্শনে প্রাপ্ত তথ্যের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৫ ছায়াবাড়ি ভবন, রোড # ৩১, সেক্টর # ৭, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ ঠিকানার ভবনটিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির কোনো অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়নি। কমিটি সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কোনো ধরনের অবকাঠামো, শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার কোনো আলামত ও কোনো সাইনবোর্ড দেখতে পায়নি। ঠিকানাস্থ পাঁচতলা ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলা চার বছরের জন্য ভাড়া নিয়েছে আলোকিত শিশু নামের একটি ট্রিটমেন্ট বেজড বিদ্যালয়। ভবনটির অবশিষ্ট তলাগুলো ভাড়ার জন্য উন্মুক্ত রয়েছে।

পরিদর্শনকালে বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের দুজন ভাইস চেয়ারম্যান ও কোষাধ্যক্ষ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির কোষাধ্যক্ষ মো. তানভীর আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, আগের ঠিকানা আবাসিক এলাকায় হওয়ায় আমরা নতুন ঠিকানায় স্থানান্তর করেছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় নতুন ঠিকানা ওয়েবসাইটে আপলোড করতে ইউজিসিকে চিঠি দিয়েছে। এখন পর্যন্ত ইউজিসি সেটি বাস্তবায়ন করেনি।

প্রসঙ্গত, গত ২ জুলাই ‘১৫ ছায়াবাড়ি ভবন, রোড # ৩১, সেক্টর # ৭, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০’-এর পরিবর্তে ‘৯/বি, পলওয়েল করনেশন, সেক্টর-৮, উত্তরা’কে বিশ্ববিদ্যালয়টির ঠিকানা হিসেবে ইউজিসির ওয়েবসাইটে আপলোড করার জন্য চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

তদন্ত প্রতিবেদনের শেষ দিকে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিষয়ে কিছু মতামত দিয়েছে তদন্ত কমিটি। এতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্ট ডিডে বিওটির সদস্য সংখ্যা নয় হলেও সোসাইটিজ অ্যাক্ট নিবন্ধনে সদস্য সংখ্যা ১১ জন। দাখিলকৃত তথ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংরক্ষিত তহবিল হিসাবের যে ছায়াকপি প্রেরণ করা হয়েছে, সেখানে কলম দিয়ে ব্যাংকের ঠিকানা মুছে দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, ইউজিসির তদন্ত দলের পরিদর্শন ঠেকাতে নানা তত্পরতা চালিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তদন্ত কমিটি গত ২ এপ্রিল পরিদর্শনের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে চিঠি দেয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় আদালতে রিট পিটিশন দায়েরের মাধ্যমে ইউজিসির চিঠির কার্যকারিতা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করিয়ে নেয়। এরপর ইউজিসি ওই স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করলে আদালত তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রাখার পক্ষে রায় দেন। রায়ের সার্টিফায়েড কপি প্রেরণ করা না হলেও ইউজিসিতে লইয়ারস সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। সে আলোকে ইউজিসি লিগ্যাল সেলের মতামত নিয়ে ১৫ ছায়াবাড়ি ভবন, রোড # ৩১, সেক্টর # ৭, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ ইউজিসির ওয়েবসাইটে আপলোড করে। একই সঙ্গে ওই ঠিকানায় ৬ জুন সরেজমিন পরিদর্শন করা হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দেয়। কিন্তু এবারো পরিদর্শন করতে দেয়ার বিষয়ে গড়িমসি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারা ইউজিসিকে আরেকটি চিঠি দিয়ে আগামী বছরের ৫ জুন পরিদর্শনের অনুরোধ করে। কিন্তু আদালতের নির্দেশনা থাকায় পরিদর্শনের তারিখ পরিবর্তনের সুযোগ নেই জানিয়ে গত ৬ জুন বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিদর্শনে যায় ইউজিসির তদন্ত দল।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকানা পরিবর্তনের কিছু নিয়ম রয়েছে। অনুসৃত প্রক্রিয়ায় তা করা হয়ে থাকে। কয়েক মাস আগে তাদের একটি চিঠির ভিত্তিতে তদন্ত করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো হদিস পায়নি তদন্ত কমিটি।

 

সৌজন্যে: বণিক বার্তা

প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের - dainik shiksha পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার - dainik shiksha ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0041429996490479