যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও খুলনার কৃতী সন্তান ড. মো. মোজাহারুল ইসলামের ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে খুলনায় উমেশচন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে শুক্রবার (১২ এপ্রিল) সকাল ১০টায় আলোচনা সভা ও বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
স্মারক বক্তৃতা ও শিক্ষাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ড. মো. মোজাহারুল ইসলাম ও শার্লী ইসলাম ফাউন্ডেশন। আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা ও খুলনা সাহিত্য পরিষদের সভাপতি অ্যাড. আবদুল্লাহ হোসেন। স্মারক বক্তৃতা দেন ভারতের শিলংয়ের নর্থ-ইস্টার্ন হিল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহনূরুর রহমান, প্রধান অতিথি ছিলেন সচিব (অব.) ও সাবেক রাষ্ট্রদূত এ এইচ মোফাজ্জল করিম। সভাপতিত্ব করেন প্রয়াত ড. মোজাহারুল ইসলামের ছোট ভাই বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদের সভাপতি ও দৈনিকশিক্ষা ডটকমের উপদেষ্টা মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোফাজ্জল করিম বলেন, ড. মোজাহারুল ইসলাম তাঁর শিক্ষাজীবনে যে একাগ্রতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে লেখাপড়া অনুশীলন করেছিলেন তা এ প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের কাছে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। তিনি বিদেশে তার গবেষণা ও জ্ঞানচর্চা করলেও স্বদেশের মাটির প্রতি ও স্বদেশের মানুষের প্রতি তার ভালোবাসা ছিল অফুরন্ত। তাই’ তিনি শিক্ষা বিস্তারে বিশেষ করে মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্যে বৃত্তির ব্যবস্থা করে গেছেন।
ড. শাহনূরুর রহমান স্মারক বক্তৃতায় ভারতবর্ষের স্বাধীনতা অর্জন ও দেশপ্রেমে সচেতনতা সৃষ্টিতে আমাদের সাহিত্যিক ও লেখকদের অবদানের কথা তুলে ধরেন।
সভার শুরুতে কুরআন তেলাওয়াত ও দোয়া পরিচালনা করেন মাওলানা মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ। স্বাগত বক্তব্য দেন অ্যাডভোকেট আব্দুল হোসেন। অনুষ্ঠানের ২য় পর্বে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের মেধাবী ও আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের এককালীন শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়।
২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩ এপ্রিল ক্যামব্রিজে নিজ বাসভবন থেকে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে তার দায়িত্ব পালনের জন্য যাচ্ছিলেন, ঠিক তখন সেন্ট জনস কলেজের সামনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তিনি ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দের ১ মার্চ খুলনায় জন্মগ্রহণ করেন। খুলনা বিএল কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট ও বিএসসি অনার্স পাস করেন। এমএসসি করেন গণিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পিএইচডি করেন যুক্তরাজ্যের লিভারপুল ইউনিভার্সিটি থেকে। তিনি যুক্তরাজ্যের কুইন মেরি কলেজ, ইউনিভার্সিটি কলেজ ও ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করেন।
কম্পিউটার বিজ্ঞানী ড. মো. মোজাহারুল ইসলাম ছিলেন জ্ঞানের একনিষ্ঠ সাধক। তার স্বপ্ন ছিল ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হোক। তাই তো তিনি তার শিক্ষকতা জীবনের অর্জিত অর্থের সঞ্চয় থেকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার প্রয়াত স্ত্রীর স্মরণে শার্লী ইসলাম লাইব্রেরি নির্মাণে প্রায় কোটি টাকা প্রদান করেন।
এছাড়াও, ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম কম্পিউটারটি তিনি নিজেই পরিচালনা করতেন। তার পরিচালিত কম্পিউটারটি বর্তমানে জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।