ডাকসু নির্বাচন কতটা সুফল বয়ে আনবে? - দৈনিকশিক্ষা

ডাকসু নির্বাচন কতটা সুফল বয়ে আনবে?

তন্ময় কুমার হীরা |

রাজনৈতিক দখলদারিত্ব ও দলীয় সন্ত্রাসমুক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি সুন্দর পরিবেশ উপহার দেওয়া ডাকসুর মূল উদ্দেশ্য। গঠনতন্ত্র বলছে, ‘ডাকসুর উদ্দেশ্য হচ্ছে হলব্যাপী শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সহযোগিতামূলক পরিবেশ সৃষ্টি ও বজায় রাখা’। সেজন্য ছাত্র-প্রতিনিধি নির্বাচন করা হয়। আসছে ১১ মার্চ ডাকসুর ছাত্র-প্রতিনিধি নির্বাচন। কিন্তু বিরাজমান পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-প্রতিনিধি নির্বাচনের পরিবর্তে দলীয় প্রতিনিধি নির্বাচন করতে যাচ্ছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় তো দলীয় রাজনীতির প্রয়োগক্ষেত্র নয়। ডাকসু বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদে প্রতিনিধিত্ব করার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বের প্রতিভা বিকশিত হওয়ার উদ্দেশ্যের কথা বলছে ডাকসুর প্রতিষ্ঠাকালীন গঠনতন্ত্র। কিন্তু তা দলীয় রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কোনো ইঙ্গিত ও অনুমোদন দেয় না।

শিক্ষাঙ্গনকে দলীয় রাজনীতিমুক্ত করা দীর্ঘদিনের দাবি। তাহলে ডাকসু বা ছাত্র-প্রতিনিধি নির্বাচনে দলীয় রাজনীতির প্রসঙ্গ আসে কী করে? যেখানে রাজনৈতিক দখলদারিত্ব ও নৈরাজ্য মুক্ত করে শিক্ষাঙ্গনকে একটি সুন্দর সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক পরিমণ্ডলে পরিণত করা ডাকসু নির্বাচনের মূল উদ্দেশ্য, সেখানে সেই দলীয় রাজনীতিকেই প্রাসঙ্গিক বিবেচনা করা অর্থহীন ও হাস্যকর। রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং শিক্ষাগত অব্যবস্থাপনার কারণে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন কর্তৃক দখলদারিত্বের যে অপসংস্কৃতি দীর্ঘদিন থেকে চর্চিত হয়ে আসছে তা খুবই দুঃখজনক। এটি শিক্ষাঙ্গনের ‘সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবেশ’কে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

বিএনপি সরকারের আমলে ছাত্রদল এবং আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ছাত্রলীগ নামক দলীয় সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দখল করে রাখে। এই দখল অনৈতিক, অযৌক্তিক ও ক্ষতিকর। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রাজনীতির নাম দিয়ে দলীয় সংগঠনগুলো যে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে তাকে রাজনীতি বলার কোনো সুযোগ নেই। কেননা তাদের চর্চায় গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, মানবতাবাদ, সাম্যবাদ, প্রথাবিরোধ, বাক স্বাধীনতা নিয়ে গভীর গবেষণা ও চিন্তার উপস্থিতি নেই। জ্ঞানান্বেষণ তাদের রাজনৈতিক আচরণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে না। মেধাশক্তির পরিবর্তে পেশিশক্তির ব্যবহার তাদের রাজনীতির বৈশিষ্ট্য। তাদের কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে হলের সিট দখল এবং দখলকৃত সিটে ছাত্রদের তুলে দেওয়ার বিনিময়ে তাদের ব্যবহার করা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় তো কাউকে ব্যবহার করা কিংবা কারো দ্বারা ব্যবহূত হওয়ার জায়গা নয়। এটি স্বাধীন সত্তা তৈরির জায়গা। স্বাধীন মত প্রকাশের জায়গা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই মুক্ত পরিবেশকে ব্যাহত ও নষ্ট করছে দলীয় ছাত্রসংগঠনগুলো।

রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ২৮ বছর ধরে ডাকসুর ছাত্র-প্রতিনিধিত্ব না থাকার সুযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় রাজনীতির ক্ষতিকর অনুপ্রবেশ ঘটেছে। তাই আসন্ন ডাকসু নির্বাচন খুব আশাব্যঞ্জক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আশার পরিবর্তে এখন হতাশার লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে দেখা দিচ্ছে। দলীয় রাজনীতিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে তাদের সঙ্গে সংলাপের আহ্বান এবং হলগুলো ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের নিয়ন্ত্রণে আছে জানা সত্ত্বেও হলেই নির্বাচনের বুথ স্থাপনের সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অটল থাকা একটি নেতিবাচক লক্ষণ।

পত্রিকান্তরে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ কর্তৃক নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পরে পরিষদের নেতাদের দলীয় ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের কর্মীদের অবরুদ্ধ করে রাখার খবর পাওয়া গেছে। অর্থাত্ স্বচ্ছ নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচনে বাধা সৃষ্টির প্রক্রিয়া এর মধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। যদি এই ধারা অব্যাহত থাকে এবং নির্বাচনী পরিবেশকে নিরপেক্ষতার অনুকূলে না নেওয়া হয় তবে শেষ পর্যন্ত দখলদার শক্তি-ই ডাকসুর মাধ্যমে তাদের দখলদারিত্বকে বৈধ করে নেবে। তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সহযোগিতামূলক পরিবেশ’ আরো ব্যাহত হবে, যা দেশের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার ওপর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। দলীয় রাজনীতির আগ্রাসন থেকে বাঁচাতে ছাত্র-প্রতিনিধি নির্বাচনে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা, সততা ও নিরপেক্ষতা জরুরি। তা না হলে ডাকসু নির্বাচন না করাই বরং ভালো। তাতে অন্তত দখলদারিত্বের প্রাতিষ্ঠিকীকরণ ও বৈধতা থেকে রেহাই মিলবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 

সৌজন্যে: ইত্তেফাক

পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি - dainik shiksha কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0041069984436035