দেশের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রদের শিক্ষাপিঠ, প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশবিদ্যালয়ের আসন্ন ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে চলছে প্রস্তুতি। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় বা ছাত্রসমাজ নয় বরং সারা দেশই চিন্তিত ডাকসু নির্বাচন নিয়ে। ছাত্ররাই দেশের ভবিষ্যত্ আর দেশের মানুষ চায় সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রদের মধ্য থেকে গড়ে উঠুক দেশের আগামীর নেতৃত্ব।
দীর্ঘ ২৯ বছরেও নির্বাচন হয়নি দেশের ছাত্র আন্দোলনে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ও শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় নির্দলীয় মঞ্চটির। পেছনের কারণ খুঁজতে গেলে দেখা যায় রাজনৈতিক অস্থিরতাই রয়েছে এর মূলে। কিন্তু বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তৃতীয় বারের ক্ষমতাগ্রহণের সুফল হিসেবে দেশের পরিস্থিতি যেকোনো সময়ের চেয়ে শান্ত এবং স্থিতিশীল। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সদিচ্ছায় বহুদিন পরে হতে যাচ্ছে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘ডাকসু নির্বাচন ইজ আ মাস্ট। নির্বাচন না হলে ভবিষ্যত্ নেতৃত্বে শূন্যতার সৃষ্টি হবে।’ সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীরা সবসময় ডাকসু নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন। নির্বাচন দিতে ভয়ে আছেন কিনা-বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এমন প্রশ্নও ছুড়ে দিয়েছেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ১৯২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ’ নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সূচনালগ্নে তিনটি হল-ঢাকা হল, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ও জগন্নাথ হল থেকে একজন করে শিক্ষক ও ছাত্র প্রতিনিধি এবং উপাচার্য মনোনীত একজন শিক্ষক দিয়ে সংসদ গঠিত হতো। ১৯২৫ সালের ৩০ অক্টোবর সংসদের সাধারণ সভায় খসড়া গঠনতন্ত্র অনুমোদন করা হয়। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী পরিষদ অনুমোদন করলে তা কার্যকর হয়।
প্রথমদিকে ঢাবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সহসভাপতি মনোনীত করা হতো, ১৯২৪-২৫ সালে প্রথম ডাকসুর সহসভাপতি মনোনীত করা হয়। ১৯৫৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ডাকসুর প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ডাকসুর প্রথম সহসভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনোনীত হন মমতাজ উদ্দিন আহমেদ ও যোগেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত এবং প্রথম নির্বাচিত হন এস এ বারী এটি ও জুলমত আলী খান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ১৯৯০ পর্যন্ত ৩৬ বার নির্বাচন হয়েছে।
৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে পরবর্তীতে ৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭১-এর স্বাধীন বাংলাদেশ নির্মাণের লক্ষ্যে রক্তক্ষয়ী জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম এবং পরবর্তীতে ৯০-এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনে সাহায্য করেছে ঢাবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ। ডাকসুর নেতৃবৃন্দের সাহসী ও বলিষ্ঠ উদ্যোগে ১৯৭১ সালের ২রা মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক বটতলায় প্রথম স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়।
গত বছরের ১৭ জানুয়ারি বুধবার মাননীয় হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ আগামী ৬ মাসের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়নের (ডাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। নির্দেশটি দেওয়া হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। এই নির্দেশ বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করার জন্য পুলিশ বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এসব নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন এবং বিচারপতি মো. আতাউর রহমানের দ্বৈত বেঞ্চ। এই নির্দেশটি বাংলাদেশের সব শ্রেণির মানুষের মনের কথাকেই প্রতিধ্বনিত করেছে। উচ্চ আদালতের আদেশের প্রেক্ষিতে দীর্ঘ ২৯ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ডাকসু নির্বাচন ১১ই মার্চ ২০১৯ তারিখে।
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চেতনা ও স্বাধিকার আন্দোলনের অন্যতম সূতিকাগার হলো এই ছাত্র সংসদ। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই বাংলাদেশের সামগ্রিক ইতিহাসে গৌরবময় ভূমিকা রাখা এই ছাত্র সংসদের নির্বাচন তাই বাংলার গণমানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন।
লেখক: শিক্ষার্থী, হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ
সূত্র: ইত্তেফাক