ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রাম, গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলনসহ সব ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সর্বশেষ কোটা সংস্কার আন্দোলনেও অগ্রগণ্য ভূমিকা ছিল এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের।
এই বিদ্যাপীঠের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান থেকে শুরু করে দেশের অসংখ্য জ্ঞানতাপস, বিজ্ঞানী, রাজনীতিবিদ, গবেষক, সাহিত্যবিশারদ ও ভাষাসংগ্রামীর নাম। আমরা চাই দীর্ঘ ২৮ বছর পর হতে যাওয়া ডাকসু নির্বাচনে প্রাধান্য পাক নিচে উল্লেখিত সমস্যাগুলো :
১. আবাসন সংকট এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সমস্যা। প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থী থাকলেও নেই যথেষ্ট আবাসন ব্যবস্থা। স্নাতকোত্তর শিক্ষা শেষ হওয়ার পরও ৮-১০ বছর বা ১৫ বছর ধরে হলে অবস্থান করছেন অনেকেই।
এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা। প্রায় প্রতিটি হলেই বিরাজ করছে এ অবস্থা। ডাকসু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যার সমাধান হোক।
২. দ্বিতীয় প্রধান সমস্যা হল লাইব্রেরি। প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে মাত্র ৭০০ জনের ধারণক্ষমতা সম্পন্ন কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার। কালের আবর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী বাড়লেও বাড়ানো হয়নি লাইব্রেরির পরিসর।
পৃথিবীতে বোধহয় এটাই একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে পড়ার জন্য সংগ্রাম করতে হয় প্রতিনিয়ত।
৩. জ্ঞানচর্চার অন্যতম শর্ত শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের পরিবেশের অভাব প্রকট। পুরো ক্যাম্পাসে প্রায়ই পড়ে থাকে ময়লা-আবর্জনা। মাত্রাতিরিক্ত ভিক্ষুক, টোকাই, ফুল বিক্রেতা।
অতিরিক্ত রিকশা ভাড়ার অত্যাচার সহ্য করতে হয় প্রতিনিয়ত। এছাড়া ক্যাম্পাস থেকে শুরু করে হলে হলে মাদকসেবীরা থাকে অবাধে।
৪. বহিরাগতমুক্ত ক্যাম্পাস এখন হাজারও শিক্ষার্থীর প্রাণের দাবি। মাত্রাতিরিক্ত বহিরাগত ঘোরাফেরা করায় এবং ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত যানবাহন চলাফেরা করায় ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ।
৫. প্রতি বছর বাড়ানো হচ্ছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এবং খোলা হচ্ছে নতুন নতুন বিভাগ। অথচ এই বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর পড়াশোনা ও গবেষণা করার কিংবা থাকার নেই যথেষ্ট সুযোগ। নেই উন্নত ল্যাবরেটরি ব্যবহারের সুযোগ। হলগুলোতেও নেই পর্যাপ্ত রিডিং রুম।
৬. বিশ্ববিদ্যালয় মানেই গবেষণা। কিন্তু এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা বলতে তেমন কিছুই হয় না। নেই পর্যাপ্ত বাজেটও, যা আছে তারও আবার অপব্যবহার হয়।
৭. হলের ডাইনিংয়ে খাবারের মান এত খারাপ যে একজন প্রাপ্তবয়ষ্ক মানুষের যে পরিমাণ খাবার বা ক্যালরি প্রয়োজন, তার ছিটেফোঁটাও মেলে না। এসব দেখার দায়িত্বে থাকা আবাসিক শিক্ষকরা ব্যস্ত রাজনীতির মাঠ গরম করতে।
ডাকসু নির্বাচনে এসব সমস্যা প্রাধান্য পাবে, এটা সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি। যদিও বর্তমান উপাচার্য দায়িত্ব নেয়ার পর এসব সমস্যা দূরীকরণে নানামুখী কর্মপন্থা হাতে নিয়েছেন। আশার আলো দেখাচ্ছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিও।
তবে সমস্যা এমন এক পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে, রাতারাতি চাইলেই পরিবর্তন নিয়ে আসা সম্ভব নয়। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, সিনেট সভায় ছাত্র প্রতিনিধি, নতুন হল নির্মাণ, লাইব্রেরি বর্ধিতকরণ, বহিরাগতদের প্রবেশে শর্ত আরোপ ইত্যাদি পদক্ষেপের মাধ্যমে মিলতে পারে সমাধান।
ছাত্র-শিক্ষক সহাবস্থান এবং প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার হৃত গৌরব আবারও ফিরে পাবে, এটাই সবার প্রত্যাশা।
শামিম শরীফ : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সূত্র: যুগান্তর