জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের মুক্ত আলোচনায় কওমি মাদরাসা, প্রকল্প মনিটরিং ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের পরিধি বাড়ানোর প্রসঙ্গ এসেছে ঘুরেফিরে।
মঙ্গলবার(২৪ জুলাই) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মুক্ত আলোচনায় এসব বিষয়ে কথা বলেছেন জেলা প্রশাসকরা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে কওমি মাদরাসা প্রসঙ্গ।
একজন ডিসি বলেছেন, কওমি মাদরাসাগুলোকে কোনোভাবে মনিটরিংয়ের আওতায় আনা যাচ্ছে না। এ নিয়ে নির্দেশনা চান ওই ডিসি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী তাঁর কথার জবাবে বলেন, ‘কওমি মাদরাসাগুলোকে আস্থায় নিতে হবে। তাদেরকে বোঝাতে হবে আমরা তাদের উন্নতির জন্যই সব করছি। সরকারি তদারকিতে আসলে তাদেরই লাভ। সমমান দেওয়ার পর তাদের মাদরাসার ছাত্ররাই চাকরি পাবে। একসময় তারা সরকারের কোনো সহায়তাই নিত না। এখন কিছু কিছু মাদরাসা নিচ্ছে। তাদেরকে ডেকে সরকারি সহায়তা দিতে হবে। তাদেরকে দূরে রেখে সমাজের উন্নয়ন সম্ভব হবে না। তাই তাদেরকে মূল স্রোতে আনতে হবে। কওমি মাদরাসায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অনুপস্থিত। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। কওমি মাদরাসাসহ দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় সংগীত গাইতে হবে। মাদরাসাগুলোও এর বাইরে থাকবে না।’
মাদরাসা শিক্ষার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়েও কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী ও ডিসিরা। একজন ডিসি জানিয়েছেন, সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হতাশা প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে নৈতিক শিক্ষা দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। তিনি নৈতিক শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিতে বলেছেন।
ঢাকা বিভাগের একজন ডিসি জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী প্রকল্পগুলোর ওপর গুরুত্ব দিতে বলেছেন। তিনি বলেছেন, একসময় ডিসির নিয়ন্ত্রণে সব প্রকল্প ছিল। অর্থাৎ ডিসি সব প্রকল্পের সব তথ্য জানতেন। এখন ডিসিরা সেই তথ্য জানেন না। অন্য বিভাগের প্রকল্পগুলোর খবরই রাখেন না ডিসিরা। ডিসিদের সব প্রকল্পের সব তথ্য জানতে হবে। ডিসির নেতৃত্বে জেলায় একটি করে প্রকল্প মনিটরিং টিম গঠন করতে হবে।
গতকাল তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ‘শাপলা’ হলে তিন দিনব্যাপী ডিসি সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সরকারি কাজ বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা দূর করতে আইনি সুরক্ষাসহ আরো বেশ কিছু জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়েও সম্মেলনের মুক্ত আলোচনায় কথা বলেন ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনাররা। এ ছাড়া চলমান মাদকবিরোধী অভিযান, জনপ্রতিনিধি এবং ক্ষমতাসীন দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়েও আলোচনা হয়। ডিসিরা মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখার জন্য বলেছেন প্রধানমন্ত্রীকে।
একজন ডিসি জানান, এসব আলোচনার জবাব উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ২৩ দফা নির্দেশনার মধ্যে নিহিত রয়েছে বলে সরকারপ্রধানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি ডিসিদের পাঠানো সব প্রস্তাবই পড়েছেন। এসব প্রস্তাবে পুরো বাংলাদেশ উঠে এসেছে বলে তিনি জানান। উল্লেখ্য, এবারের ডিসি সম্মেলনে ডিসিরা ৩৪৭টি প্রস্তাব দিয়েছেন। এসব প্রস্তাব নিয়ে ডিসি সম্মেলনের বিভিন্ন অধিবেশন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
মুক্ত আলোচনায় সিরাজগঞ্জ, ফরিদপুর, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলার ডিসিরা অংশ নেন। এ সময় ময়মনসিংহ ও খুলনার বিভাগীয় কমিশনারও আলোচনায় অংশ নেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সম্পর্কিত অধিবেশন তেজগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত হলেও পরবর্তী কর্ম অধিবেশনগুলো সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।