খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষার বান্দা কলেজিয়েট স্কুল নতুন পরীক্ষা কেন্দ্র নিয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনকে পাশ কাটিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির সুপারিশে কেন্দ্রটি অনুমোদনে বিপাকে পড়েছেন ডুমুরিয়া কলেজের পরীক্ষার্থীরা। নতুন কেন্দ্রটি অজপাড়াগায় হওয়ায় যাতায়াতে ঝুঁকিও রয়েছে। বিষয়টি যশোর শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ স্বীকার করলেও এ মুহূর্তে কিছুই করার নেই বলে জানিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশেক হাসান বলেন, একটি নতুন পরীক্ষা কেন্দ্র করতে হলে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের মতামত এবং সুপারিশ নেয়ার বিধান রয়েছে। এছাড়া ওই প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে ২শ’ পরীক্ষার্থী থাকার বাধ্যবাধকতা থাকলেও রয়েছে মাত্র ৫২জন। প্রশ্ন ও খাতা পত্রের নিরাপত্তার জন্য ব্যাংক শাখা এবং পুলিশ কেন্দ্র থাকার ও প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু তা নেই। এছাড়া এ ক্ষেত্রে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের মতামত এবং সুপারিশ নেয়ার প্রয়োজনীয়তা থাকলেও তা নেয়া হয়নি। এমনকি তাকে বিষয়টি মৌখিক ভাবেও জানানোও হয়নি।
বিধিবহির্ভূতভাবেই কেন্দ্রটি করা হয়েছে- উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরীক্ষা স্থানীয় প্রশাসনকেই নিতে হয়। এজন্য অনেক বিষয় পর্যালোচনা করতে হয়। কিন্তু যেহেতু স্থানীয় প্রশাসনের কোন মতামত নেয়া হয়নি, সেহেতু এর সকল দায়-দায়িত্ব বোর্ডকেই নিতে হবে বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
জানাগেছে, বিগত বছরগুলোতে স্ব স্ব কেন্দ্র কলেজের পরীক্ষার্থীরা বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজ কলেজ কেন্দ্রের পরিবর্তে ডুমুরিয়া কলেজের পরীক্ষর্থীরা পাশ্ববর্তী শহীদ স্মৃতি মহিলা কলেজ ভেন্যু, বান্দা কলেজিয়েট স্কুল, শহীদ স্মৃতি মহিলা কলেজ, মাওলানা ভাষানী মেমোরিয়াল কলেজ ও স্বর্ণদ্বীপ কলেজের পরীক্ষার্থীরা ডুমুরিয়া কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দিয়ে আসছিল। এছাড়া চুকনগর কলেজ কেন্দ্রে পল্লীশ্রী কলেজ, সৈয়দ ঈসা টেকনিক্যাল কলেজ ও চুকনগর মডেল মহিলা কলেজের পরীক্ষার্থীরা চুকনগর কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দেয়।
একইভাবে চুকনগর কলেজের পরীক্ষার্থীরা সৈয়দ ঈসা টেকনিক্যাল কলেজ ও চুকনগর মডেল মহিলা কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দেয়। শাহপুর মধুগ্রাম কলেজ কেন্দ্রে রংপুর কলেজের পরীক্ষার্থীরা আর শাহপুর মধুগ্রাম কলেজের পরীক্ষার্থীরা পাশ্ববর্তী শাহপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মধুগ্রাম মাদ্রাসা কেন্দ্রে পরীক্ষা দেয়। কিন্তু চলতি বছর অন্যসব কেন্দ্র ঠিক থাকলেও বান্দা কলেজিয়েট স্কুলে নতুন কেন্দ্র করা হয়েছে। যেখানে ডুমুরিয়া কলেজের পরীক্ষার্থীদের সদর থেকে ৮/১০ কিলোমিটার দূরে অপর্যাপ্ত যোগাযোগ ব্যবস্থার মধ্যদিয়ে যেতে হবে। নতুন কেন্দ্র অনুমোদনের ক্ষেত্রে স্থানীয় উপজেলা প্রাসনের একটি অনুমতি বা ছাড় পত্র নেয়ার বাধ্য বাধকতা থাকলেও বোর্ড কর্তৃপক্ষ সেটি নেননি। শুধুমাত্র বান্দা কলেজিয়েট স্কুলের আবেদনের প্রেক্ষিতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ এমপির ডিও লেটারে কেন্দ্র অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (অব:) গাজী মোহাম্মদ রফি বলেন, নিঃসন্দেহে এটি একটি হঠকারী সিদ্ধান্ত। বান্দা কলেজিয়েট স্কুল পরীক্ষা কেন্দ্র দূরের কথা। ওখানে ইন্টারমিডিয়েটও থাকা উচিত নয়। আর ডুমুরিয়া থেকে বান্দা যেতে ভ্যান আর সাইকেল ছাড়া সম্ভব নয়। কারণ যাতায়াতের জন্য ভালো সড়ক নেই। পরীক্ষার্থীদের কমপক্ষে দু’ ঘন্টা সময় নিয়ে বের হতে হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড যশোরের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাধব চন্দ্র রুদ্র দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সুপারিশ ও বোর্ডের নিজস্ব কমিটির সিদ্ধান্তে কেন্দ্রটির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই দশ জেলায় পরীক্ষার সরঞ্জাম পৌঁছে দেয়া হয়েছে। প্রস্তুতিও প্রায় শেষের পথে। যে কারণে এবার কেন্দ্র পরিবর্তন বা সিদ্ধান্ত স্থগিত করার কোন সুযোগ নেই। তবে, আগামী বছর থেকে উপজেলার সকল ভেন্যু তুলে দেয়া হবে বলে তিনি জানান।