দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে পাকিস্তানি আমলে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতি একটা অলিখিত নির্দেশ ছিল, যে-কোনো নেতিবাচক তথ্য ছোট করে দেখানো। যেমন কোনো জেলায় হয়ত বন্যায় দশ হাজার একর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে, মাঠ পর্যায়ের প্রধান কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক বা জেলা কৃষি কর্মকর্তা রিপোর্ট পাঠাবেন, ক্ষতির পরিমাণ এক হাজার একর।
তেমনি লঞ্চডুবিতে এক শ লোকের প্রাণহানি হলে বলতে হবে বিশজন বা পঁচিশজন। না হয় একটু রাখঢাক করে বলা হবে—এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা বিশজন। এই যে তথ্য গোপন করার প্রবণতা, এটা কেন ছিল জানি না। বন্যা-খরা-দুর্ঘটনা-মহামারি—এগুলোতে তো সরকারের বা অন্য কোনো মহলের হাত থাকে না। শনিবার (০৩ আগস্ট) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধনটি লিখেছেন মোফাজ্জল করিম।
তবু কেন এই সত্য ধামাচাপা দেওয়ার নীতি, তা চাকরিজীবনের শুরুতে না বুঝলেও পরে কিছুটা আঁচ করতে পারতাম। সরকার ভাবত, বন্যা হোক আর লঞ্চ দুর্ঘটনা হোক, ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের তো ক্ষতিপূরণ দেওয়ার একটা ব্যাপার আছে। এবং প্রায় সব ক্ষেত্রেই তা বর্তাবে সরকারের ওপর। অতএব ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যত কম দেখানো যাবে, সরকারি কোষাগারের ওপর চাপও তত কম হবে। আবার বন্যা প্রতিরোধ বা লঞ্চে ওভারলোডিংয়ের ব্যাপারে সরকারের জবাবদিহিতারও একটা প্রশ্ন আছে, তাই তথ্য গোপনের একটা দুশ্চেষ্টা ছিল সব সময়।
সে আমলে পুলিশের গোলাগুলিতে প্রায়শই লোক মারা যেত। কোথাও দশজন মারা গেলে সরকারি প্রেসনোটে তা দুই-তিনজনের বেশি বলা হতো না। কর্তৃপক্ষ ভাবত, পুলিশের গুলিতে লোক মারা যাওয়া মানে দেশে-বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হওয়া। কাজেই দেখাতে হবে, মারমুখী উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ঠেকাতে গিয়ে ন্যূনতম বলপ্রয়োগ করা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে এবং প্রাণহানিও হয়েছে অল্পই।
পাকিস্তানি আমলে বাকস্বাধীনতা বা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ছিল না বললেই চলে। সংবাদ সংগ্রহের সুযোগ-সুবিধাও ছিল সীমিত। এখনকার মত আগ্রাসী টিভি সাংবাদিকতা তো ছিলই না, টিভি বলতে ষাটের দশকের মাঝামাঝি থেকে নব্বইয়ের দশকের শেষভাগ পর্যন্ত ছিল একমেবাদ্বিতীয়ম বিটিভি। কাজেই সরকারি প্রেসনোট এবং সরকারি সংবাদ সংস্থার পরিবেশিত সংবাদের বাইরে আর কোনো তথ্য পাওয়ার সুযোগ ছিল সীমিত।
আর এখন? এখন দেশে দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক ইত্যাদি মিলিয়ে সংবাদপত্রের সংখ্যা অগুনতি। আর সংবাদকর্মী? তারা এখন জেলা, উপজেলা, এমনকি গ্রামাঞ্চলেও দায়িত্ব পালন করে চলেছেন অবিরত। আর মোবাইল ফোন, ফেসবুক, টুইটার—এসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তো আছেই। এসবের কল্যাণে দেশের যে কোনো স্থানে এখন কিছু ঘটলে দ্রুত তা প্রত্যক্ষদর্শীর জবানিসহ সংবাদমাধ্যমে চলে আসে একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেও। এবং সংবাদমাধ্যমগুলো তীব্র প্রতিযোগিতামূলক হওয়ার কারণে পরিবেশিত সংবাদও হয় মোটামুটি বস্তুনিষ্ঠ। এককথায়, পাকিস্তানি আমলের সেই দিন আর নেই যে ‘সুশীল একটি সুবোধ বালক, যাহা পায় তাই খায়’—এই নীতি অনুসরণ করে পাঠককে সুশীল ঠাউরে যা খুশি গেলাবেন আর সে তাই গিলবে।
২.
এই প্রেক্ষাপটে আসুন এবার সাম্প্রতিককালের চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী একটি বিষয়ের দিকে দৃষ্টিপাত করা যাক। অনেক জল ঘোলা করে দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্তৃপক্ষ এখন বলছে, ডেঙ্গু জ্বর আসলে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। অথচ এত দিন পর্যন্ত তাঁরাই পাকিস্তানি আমলের কায়দায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবকে কোনো গুরুত্বই দিচ্ছিলেন না। যেন ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে বললে তাঁদের গদিচ্যুতি ঘটবে। এখন তারা লাঠিসোঁটা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন মশক নিধনে। এত দিন মশা মারতে দাগছিলেন শায়েস্তা খাঁর আমলের কামান। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সেই কামানের গোলা যে পলাশীর যুদ্ধে আম্রকাননে মীরজাফর বাহিনীর বৃষ্টিতে ভেজা গোলার চাইতেও নিকৃষ্ট, তা বুঝতে বুঝতেই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ১৫ হাজার, আর রাজধানী দখল করে মহাপরাক্রান্ত মহিলা চেঙ্গিস খান এডিস বিবি এখন মফস্বল অভিমুখে তার দুর্ধর্ষ বাহিনী নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। সেই সঙ্গে ‘স্লোলি বাট স্টেডিলি’ বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। প্রাথমিক অবস্থায় ঢাকায় যে কামানের গোলা কর্তৃপক্ষ বর্ষণ করছিলেন, তা সেই চিরপরিচিত ‘হেন করেছি-তেন করেছি’, ‘হেন করেঙ্গা-তেন করেঙ্গা’ কোম্পানির ভেজাল মাল। এতে মশা মরুক না মরুক, শহরবাসীর কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছিল। কারণ নগরপিতারা তাঁদের ‘সন্তানদের’ সব কাজকর্ম বাদ দিয়ে মশকবিরোধী জেহাদে যোগ দিতে মুহুর্মুহু উদাত্ত কণ্ঠে আহ্বান জানাচ্ছিলেন। সেই সঙ্গে চলছিল সিটি কর্পোরেশন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সিটি কর্পোরেশনকে দোষারোপ করার বাঙালির প্রিয় ব্লেইম গেইম খেলা। এসব দেখে দেখে একজন সিনিয়র মন্ত্রী উভয় পক্ষকে দিলেন একটা মিহিদানা ধমক, যা ডেঙ্গু আক্রান্ত ঢাকার আদিবাসীদের ভাষায় বোধ হয় এ রকম : হেই মিয়ারা, এইসব আজুইরা পেচাল বাদ দিয়া যার যার কামডা করেন, মশা মারেন, নিজেগো মইধ্যে কাউলা-কাউলি কইরেন না। মাননীয় মন্ত্রী বিরক্ত হবেনই না বা কেন। তাঁরই এক এলেমদার সহকর্মী তো গবেষণা করে এটাও বের করে ফেলেছেন, এডিস মশা নাকি বংশবিস্তার করে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত বিপন্ন গৃহহীন-আশ্রয়হীন, সহায়-সম্বলহীন রোহিঙ্গাদের মত। [বহুদিন এরূপ নির্মম রসিকতাপূর্ণ উক্তি শুনিনি। আশ্চর্য, এই যুগান্তকারী আবিষ্কারক তাঁর অপূর্ব বয়ানটি আজো প্রত্যাহার করেছেন বা এর জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন বলে শুনিনি। বিজ্ঞ পাঠক হয়ত বলবেন, এতে আশ্চর্যের কী আছে। জনগণের ‘এক শ পারসেন্ট’ হালাল ভোট হজম করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি(!) জবাবদিহিতার থোড়াই কেয়ার করেন, কে কী বলল তাতে তাঁর কিচ্ছু যায় আসে না।]
এই সব-সম্ভবের-দেশে আসলে সবই সম্ভব। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত এই মাননীয় মন্ত্রী জাতিকে বর্তমান স্বাস্থ্য-সঙ্কটে রেখে নাকি গত ২৮ জুলাই সপরিবারে পাড়ি দেন মালয়েশিয়া। ব্যাপক সমালোচনার পর অবশ্য গত বুধবার রাতেই তিনি দেশে ফিরে এসেছেন। আমার তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া : আই রিফিউজ টু বিলিভ ইট। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চক্ষু-চিকিৎসার জন্য বেশ কয়েক দিন যাবৎ লন্ডনে অবস্থানরত। তিনিও ফিরবেন বোধ হয় সপ্তাহখানেক পরে। তাহলে স্বাস্থ্য খাতে দেশ কয়েক দিন একধরনের অভিভাবকশূন্য ছিল বলা যেতে পারে। সেই ছেলেবেলার পড়া কাজলা দিদির ‘আমিও নাই, দিদিও নাই, কেমন মজা হবে’ অবস্থা।
তবে মাননীয় মন্ত্রী মালয়েশিয়া যাওয়ার আগে একটা দারুণ কাজ করে গেছেন। তাঁর নির্দেশে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করার সিদ্ধান্ত হয়েছে ওই মন্ত্রণালয়ের ২৯ জুলাইয়ের এক সভায়। সাধু! সাধু!! দেশ এবং দেশের মানুষ আগে, না ব্যক্তিগত ছুটি আগে? দেশের মানুষকে শোক সাগরে, থুড়ি, ডেঙ্গু সাগরে ভাসিয়ে কোন পাষাণহৃদয় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী (স্মর্তব্য : মন্ত্রী কোনো সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীর মত ‘লেসার মর্টাল’ নন, তিনি মাননীয় মন্ত্রী!) ব্যক্তিগত প্রয়োজনে—তা হোক না যতই জরুরি বা ‘মাদার সিরিয়াস কাম শার্প’ জাতীয়, বা গ্রামের বাড়িতে গিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদ উদ্যাপনের মত উপলক্ষ—ছুটিতে যাবে?... (ভিড়ের মধ্য থেকে কোন দুর্মুখ স্বাস্থ্যকর্মীর কণ্ঠ যেন শোনা গেল : স্যার, ‘আপনি আচরি ধর্ম পরকে শেখাও’ কথাটার মানে যেন কী?)
৩.
মশা মারার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ নিজেদের মধ্যে বাহাস, পাবলিককে হুকুম-আহকাম, ফতোয়া-নসিহত এবং ‘ঘাবড়াও মাৎ, ইয়ে কুচ নেহি, সব ঠিক হ্যায়’ মার্কা অ্যাটিচিউড বাদ দিয়ে হঠাৎ আবিষ্কার করলেন, তাই তো, এটা তো ‘পিঠ পুড়ছে ফিরে শোও’ অবস্থা নয়, সত্যি চালের আগুন, বেড়ার আগুন এখন সারা অঙ্গ জেঁকে ধরেছে, এটা মহামারিই বটে। তাঁরা এখন কুম্ভকর্ণের নিদ্রাভঙ্গের মত জেগে উঠে হুঙ্কার দিলেন, ‘ঢাল-তলওয়ার লে আও, লাঠিসোঁটা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড় শত্রুর ওপর।’ কিন্তু দেখা গেল, কোটি কোটি টাকা খরচ করে যেসব তলওয়ার কেনা হয়েছে, সেগুলো ইস্পাতের তো নয়ই, এমনকি লোহারও নয়, টিনের। ওগুলো দিয়ে শত্রুর মুণ্ডচ্ছেদ কেন, নাসিকা কর্তনও করা যাবে না। অতএব হুকুম হয়ে গেল, আমদানি করো নতুন অস্ত্রশস্ত্র। এবং তা এক্ষুনি। যত টাকা লাগে দেবে গৌরী সেন। শুনে আমলা-কামলা আরেক দফা বগল বাজাতে শুরু করল : এবার তাহলে টু-পাইস নয়, অতীব জরুরি আমদানির দোহাই দিয়ে থ্রি-পাইস, ফোর-পাইস।
ভালো কথা। এই যে কুম্ভকর্ণের নিদ্রাভঙ্গ হলো, তা কি এমনি এমনি। জি না। আরো দশটা জিনিসের মত এটাও হয়েছে লন্ডন থেকে রিমোট কন্ট্রোলে। এখন না হয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসার জন্য লন্ডনে আছেন, তাঁকে দেশের সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি অবহিত করার একটা বাধ্যবাধকতা আছে সংশ্লিষ্ট সকলের। কিন্তু তাই বলে যেসব রুটিন কাজ বলে বিবেচিত, সেগুলোর ব্যাপারেও কি তাঁর কাছ থেকে নির্দেশ আসতে হবে? আপনারা যদি ডেঙ্গু দমনে যা যা করণীয় তা করেন তাহলে কি তিনি নাখোশ হবেন? আপনাদের মশা মারার দুই নম্বরি ওষুধ আর এক মুর্হূত দেরি না করে নর্দমায় ফেলে দিয়ে মানসম্মত এক নম্বরি ওষুধ এনে মানুষের জীবন রক্ষা করতে হবে, এটার জন্যও কি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ লাগবে? এসব জুতা সেলাইয়ের কাজের জন্য তো তিনি প্রধানমন্ত্রী হননি, তাঁর তো শুধু চণ্ডীপাঠের মত গুরুদায়িত্ব পালন করার কথা। কোনো দেশেই দেশের সরকারপ্রধান বা রাষ্ট্রপতিকে এ ধরনের গতানুগতিক কাজে কালক্ষেপণ করতে হয় না। অথচ আমাদের দেশে ওই যে বললাম জুতা সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ—সব কাজেই সরকারপ্রধানের শরণাপন্ন হয়ে পড়েন বিভিন্ন কাজের সার্বিক দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজন্যবর্গ। এটা হচ্ছে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার একটা কৌশল। সিদ্ধান্ত দিয়ে বাপু কী না কী বিপদে পড়ি, তার চেয়ে ‘ইক্তা দাইতু বিহাযাল ইমাম’ (অর্থ : আমি এই ইমামের অনুসরণ করলাম) বলে সব দায়-দায়িত্ব পেশ ইমাম সাহেবের ঘাড়ে দিয়ে দিলেই তো আমি সেইফ খেলতে পারি। আবার এটা একধরনের মোসাহেবিও বটে। ‘বস্’-কে দেখানো, আমি আপনাকে না জানিয়ে, না বলে কিছুই করি না।
সব সিদ্ধান্তই যদি প্রধানমন্ত্রীকেই দিতে হবে, তাহলে আপনাদের কাজটা কী—পাবলিক জানতে চায়। তাদের নিশ্চয়ই জানার হক আছে। তারা এটাও জানতে চায়, সাত বছর আগে ২০১২ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ডেঙ্গুর বিস্তার সম্বন্ধে যে ‘রেড এলার্ট’ জারি করেছিল এবং ২০১২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মেয়াদে ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য ‘গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজি ফর ডেঙ্গু : প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল’ শিরোনামে যে বৈশ্বিক কৌশলপত্র প্রকাশ করেছিল (সূত্র : কালের কণ্ঠ, ৩১ জুলাই) তার ওপর কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। নাকি ওটাকেও ‘গুজব’ এবং বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র বলে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নাকি বলবেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বিএনপি-জামায়াতের এজেন্ট, সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য এসব তৎপরতা চালাচ্ছে তারা।
৪.
ডেঙ্গুর হাত থেকে অচিরেই ইনশাআল্লাহ দেশ রক্ষা পাবে। তবে যে ঝাঁকুনিটা ডেঙ্গু দিয়ে যাচ্ছে, তা থেকে অবশ্যই কিছু শিক্ষা আমাদের নিতেই হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে জাতি হিসেবে আমরা সচেতন না হলে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া-মোটাগুনিয়া এসব আমাদের পিছু ছাড়বে না। সেই ‘মরিয়াও মরে না রাম এ কোন বৈরীর’ মত হয়ে দাঁড়াবে ব্যাপারটা। দ্বিতীয়ত, ডেঙ্গুর হাত থেকে স্থায়ীভাবে নিষ্কৃতি পেতে চাইলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, সিটি কর্পোরেশন ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের একটি সমন্বিত ওয়ার্ক প্ল্যান থাকতে হবে, যা সারা বছরজুড়ে বাস্তবায়ন করা হবে এবং তা মনিটর করার দায়িত্বে থাকবে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি।
আর সব শেষে একটি কথা জোর দিয়ে বলতে চাই। সরকারের সব মন্ত্রণালয় ও সংস্থা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে সঠিক সময়ে পালন করবে, তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবে না। তা না হলে যে কোনো ব্যর্থতার দায়-দায়িত্ব সরকারপ্রধানের ওপর চাপিয়ে সংশ্লিষ্ট মান্যবররা কৌশলে সটকে পড়বেন। আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তখন ‘বেওয়ারিশ লাশের মালিক দারোগা’—এই প্রাচীন প্রবাদবাক্য স্মরণ করে হয়ত বাধ্য হয়ে লাশের সৎকারে তৎপর হয়ে উঠবেন। এটা আর যাই হোক, অভিপ্রেত নয়।
লেখক : সাবেক সচিব, কবি