ডেঙ্গুজ্বর: কিছু নতুন তথ্য এবং ঈদ আনন্দ - দৈনিকশিক্ষা

ডেঙ্গুজ্বর: কিছু নতুন তথ্য এবং ঈদ আনন্দ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ঢাকাসহ সারাদেশে ডেঙ্গু আতঙ্ক, এরই মাঝে মানুষের দোর গোড়ায় চলে এসেছে খুশী, আনন্দের ঈদ।  শহুরে মানুষের ঘরে ফেরার আনন্দে এবার কিছুটা চিন্তার উদ্রেক করছে ডেঙ্গুজ্বর।  ঈদে বাড়ি যাওয়া যাবে কিনা এই উৎকন্ঠা সবার মনে।  যারা ভুগছেন, ভুগেছেন কিংবা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনার মাঝে আছেন, সবারই চিন্তা ঈদটাই না এবার মাটি হয়ে যায়! রোববার (১১ আগস্ট) মানবজমিন পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধ থেকে তথ্য জানা যায়। নিবন্ধটি লিখেছেন অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ। 

যাদের জ্বর চলছে বা আক্রান্ত তারা গ্রামে যেতে পারবেন কিনা?  যারা ডেঙ্গু জ্বরে ভুগছেন অর্থাৎ যাদের জ্বর চলছে কিংবা বাড়ি যাবার আগেই জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে বাড়ি না যাওয়াটাই সঠিক সিদ্ধান্ত হবে।  কারণ এবার ডেঙ্গুর ধরণের ভিন্নতার জন্য হঠাৎ করে জটিলতা দেখা দিচ্ছে।  সুতরাং প্রত্যন্ত অঞ্চলে এমন কি বড় শহরগুলোর বাইরে যথাযথ চিকিৎসা পাওয়া যাবে কিনা অথবা কোন জটিলতা হলে সামাল দেয়া যাবে কিনা, তা বিবেচনায় নিতে হবে। তাই জ্বর নিয়ে বাড়ি না যাওয়াই যুক্তিযুক্ত। তবে যাদের জ্বর নেই তারা যেতে পারবেন।

যারা সম্প্রতি ডেঙ্গুজ্বর থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন, তারা গ্রামে গেলে তাদের থেকে ডেঙ্গুজ্বর গ্রামে ছড়াতে পারে কিনা? না, তাদের থেকে জ্বর ছাড়ানোর সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কারণ, আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে ডেঙ্গুর লক্ষণ প্রকাশের পর অর্থাৎ জ্বর শুরুর ৪ থেকে ৬ দিন পর্যন্ত ডেঙ্গু ভাইরাস থাকে। এই সময়ের মধ্যে স্ত্রী এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে ডেঙ্গু ছড়াতে পারে। সুতরাং যারা জ্বর থেকে সেরে উঠেছেন তাদের কাছ থেকে  নতুন করে ডেঙ্গু ছড়ানোর সম্ভাবনা নেই। 

আবার যদি কারও শহর থেকে শরীরে ভাইরাস প্রবেশ করে এবং গ্রামে গিয়ে লক্ষণ প্রকাশ পায়, তবুও গ্রামে তার মাধ্যমে ডেঙ্গু ছড়ানোর সম্ভাবনা নাই বললেই চলে। কারণ ডেঙ্গুর একমাত্র বাহক স্ত্রী এডিস মশা, অন্য মশার কামড়ের দ্বারা ডেঙ্গুর জীবনু ছড়ায় না।  আর এডিস মশা থাকে শহরে, গ্রামে সাধারণত এ মশার অস্তিস্ত¡ নেই।  কোন কোন প্রিন্ট মিডিয়ার তথ্য বলা হচ্ছে, ‘শহর থেকে লাখ লাখ লোক ভাইরাস বহন করে গ্রামে যাবে এবং তা বহন করে গ্রামে-গঞ্জে ডেঙ্গু ছড়ানোর ঝুঁকি বাড়বে’- যা ঠিক নয়।

ডেঙ্গু আক্রান্ত সকল রোগীর হাসপাতালে বা ক্লিনিকে ভর্তির প্রয়োজন আছে কিনা? ডেঙ্গুর প্রকোপের চেয়ে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে যেন আতঙ্কই বেশি।

 

সাধারণ জ্বরেও সবাই ছুটছেন হাসপাতালে। ফলে রাজধানীর সব হাসপাতালে ভিড় বাড়ছে।  আসলে সব ডেঙ্গুজ্বরে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন নেই।  অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রে বাসায় চিকিৎসা নেয়া সম্ভব। তবে অতিরিক্ত বমি হলে বা রোগী যদি খেতে না পারে, রক্তের প্লাটিলেট অতিরিক্ত কমলে, শরীরের কোন অংশ থেকে রক্তক্ষরণ হলে ( যেমন রক্তবমি, কালো পায়খানা বা নাকে, দাঁতের গোড়া থেকে ইত্যাদি) হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। এছাড়া যারা অন্যান্য রোগে ভোগেন যেমন হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি রোগ, ডায়াবেটিসসহ গর্ভবতী মহিলার ডেঙ্গুজ্বর হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবা নিতে হবে এবং প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। তাই জ্বর হলেই অযথা হাসপাতালে ভিড় জমানোর প্রয়োজন নেই।  প্রথমে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, তারপর প্রয়োজন হলে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। 

সুস্থ-অসুস্থ সকলের ডেঙ্গু সনাক্তের জন্য রক্ত পরীক্ষা কারার প্রয়োজন আছে কিনা? ডেঙ্গু মৌসুমের শুরুতে অনেকেই অল্প জ্বরকে খুব বেশি গুরুত্ব দিচ্ছিলেন না, ফলে হঠাৎ করে কিছু কিছু রোগীর জটিলতা সনাক্ত হয়েছে এবং  মারাও গেছেন অনেকে।  পাশাপাশি এবারের সামগ্রিক প্রকোপ এবং মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হওয়ায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।  ফলে একটু ভয় বা  সন্দেহ হলেই মানুষ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে ছুটছেন।  যেমন দেখা গেল কারও একটু শরীর ম্যাজ ম্যাজ করছে, জ্বর জ্বর লাগে কিনা তাও নিশ্চিত নন, তিনিও সন্দেহ দূর করার জন্য পরীক্ষা করছেন। আবার কাউকে হয়ত চোখের সামনে একটা মশায় কামড়িয়েছে, ভয় পেয়ে তিনিও ছুটছেন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে।  সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে টেস্ট করানোর জন্য এই ধরণের শংকিত মানুষের লম্বা লাইন।  ফলে যারা আসলেই ডেঙ্গুতে বা অন্যরোগ আক্রান্ত, তারা যথাসময়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষ-নিরীক্ষা করাতে পারছেন না।  ইতিমধ্যে অতিরিক্ত টেস্ট করার ফলস্বরূপ ডেঙ্গু সনাক্তের কিট সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত রোগীরা। সুতরাং কোন সন্দেহ হলে বা উপসর্গ দেখা দিলে প্রথমেই নিকটস্থ ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং সে অনুযায়ী প্রয়োজন হলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাবেন। এতে সকলের ভোগান্তি কমবে এবং অযথা অর্থের অপচয় হবে না।

পরিশেষে আগত ঈদ সকলের জন্য আনন্দ বয়ে আনুক। অযথাই আতঙ্কগ্রস্ত হবেন না, ঈদে গ্রামের বাড়িতে নিশ্চিন্তে যেতে পারবেন।  গ্রামে ডেঙ্গু ছড়ানোর কোন সম্ভাবনা নাই। তবে সচেতন থাকুন, শহর থেকে গ্রামে গিয়ে রোগের লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন। 

লেখক: সাবেক ডিন ও চেয়ারম্যান, মেডিসিন অনুষদ,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। 

প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের - dainik shiksha পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার - dainik shiksha ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0043179988861084