প্রথমবারের মতো ত্রিপুরার আগরতলায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর বুকস্টল দেয়া হয়েছে। মেলার শুরুর আগে থেকেই ঘুরছেন আগরতলায়। বাংলাদেশের একুশে বইমেলার সাথে আগরতলার বইমেলায় অনেক পার্থক্য চোখে পড়ছে সাবেক শিক্ষাসচিব মো. নজরুল ইসলাম খান। আগরতলা থেকে পাঠানো রিপোর্ট ও ভিডিও:
১) বাংলাদেশের বই মেলায় মানুষ আর মানুষ; অপরদিকে আগরতলা বই মেলায় মানুষের খুব অভাব। সমগ্র ত্রিপুরা রাজ্যের লোকসংখ্যা আমাদের একটা ছোট জেলার সমান। তবে শনি রবিবারের ছুটির দিনে লোকের সমাগম হয় তাও আমাদের বইমেলার ধারে কাছে নেই।
২) আমাদের বইমেলার বাংলা একাডেমির ভেতরের মঞ্চটি জমকালো না, সাদামাটা। আগরতলা বইমেলার মূল মঞ্চটি সুন্দর করে সাজানো এবং বেশ বড়োসড়ো খোলামেলা।
৩) আগরতলার বইমেলার মঞ্চটি কবিতা আলোচনা ইত্যাদিতে ব্যস্ত থাকে। কিন্তু সামনে ২০ থেকে ৫০ জনের বেশি দর্শক থাকে না। আলোচনা বেশ জ্ঞানগর্ভ, কবিতা বেশ আবেগময় হয়ে থাকে। বাংলাদেশের বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণের মঞ্চটি বিকাল এর আগ পর্যন্ত অব্যবহৃত থাকে আলোচনা জ্ঞানগর্ভ না হলেও শ্রোতার সংখ্যার কমতি নেই।
৪) বাংলাদেশের বই মেলা বেশ ম্যাচুরিটি লাভ করেছে। বই মেলার সামনে খাদ্য ছাড়া অন্যান্য যেসব জিনিসপত্র বিক্রি হয় তা জ্ঞানের বিষয়ে। আগরতলা বইমেলা ঢোকার পথে আপনি চামচ গ্লাস থেকে শুরু করে তৈজসপত্র কিনতে পারবেন। আমাদের দেশের মফস্বল মেলাগুলোতে এরকম হয়ে থাকে। অর্থাৎ এখনো ম্যাচুরিটি আসতে সময় লাগবে।
৫। বাংলাদেশের বই মেলায় প্রচুর নতুন নতুন বই আত্মপ্রকাশ করে, মোড়ক উন্মোচন করা হয়। আগরতলায় মেলায় বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের উৎসব তেমন একটা চোখে পড়ে না। তবে এদের স্টলগুলোতে গুরুগম্ভীর বই এর ঘাটতি নেই, পশ্চিমবঙ্গ থেকে, সারা ভারত থেকে বই এসে স্থান করে নেয়।
৬। বাংলাদেশিদের’কে ত্রিপুরাবাসী সম্মান করে। তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে না। বাংলাদেশিরা এখানে এসে কলকাতার মত দন্ত্য-স এর উচ্চারণে প্রভাব না পেয়ে একাকার হয়ে যায়। কুমিল্লা, সিলেট, নোয়াখালীবাসীরা নিজ দেশে আছেন বলে মনে করেন।
৭। বাংলাদেশ ছোটখাটো স্টলেও প্রচুর বই বিক্রি হয়। আগরতলায় বই মেলায় প্রতিটি স্টলে কত টাকার বই বিক্রি হয় তা শুনলে লজ্জা পেতে পারেন। তবে শনি ও রবিবারের কথা ভিন্ন, বাংলাদেশের সাথে তুলনীয়।
৮। আগরতলায় বইমেলার সামনে কোন জটলা নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে যেমন গাড়ি যেতে মানা, এখানে সে মানা নেই। গাড়িতে করে অনায়াসেই আপনি বই মেলার গেটে পৌঁছে যেতে পারেন।
৯। বাংলাদেশের বই মেলায় নানা পদের খাদ্য খেতে পারেন। তবে এখানে আছে মুড়ি, চানাচুর, চা এবং কফি। খাবারের উল্লেখযোগ্য কোনো স্টল নেই। মানুষ থাকলে তো হবে! খাবারের স্টল দেয়ার জন্য নেই কোনো রাজনীতিক বা আমলাদের তদবির।
১০। মানুষের নাকে যাতে ধুলো না যায় সেজন্য প্রতিদিন পানি দিয়ে ভেজানোর ব্যবস্থা আছে। এখানে মসৃণ সমান চত্বর বাংলাদেশের মতো ইট বিছিয়ে আপনার পা ভাঙ্গার কোনো ব্যবস্থা করেনি। বালি দিয়ে ফুসফুসকে শিরীষ করার কোন ব্যবস্থা করেননি আগরতলা কর্তৃপক্ষ।
১১। আগরতলার বই মেলায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ আছে। বাংলাদেশের বই মেলায় ভারতীয়দের অংশগ্রহণ নেই।
১২। আমাদের বই মেলায় চানাচুর ভাজার মত বই কেনার পাঠক বেশি। কোন জরিপ না থাকলেও বলতে পারি তরুণ পাঠকের সংখ্যা বেশি। এদের বই মেলায় বুড়ো পাঠকের সংখ্যা বেশি এবং তাদের রুচি ক্লাসিক্যাল বই। তবে শিশুদের বইয়ের চাহিদা আছে।
১৩। কোন বই মেলায় ইলেকট্রনিক বইয়ের সদর্প উপস্থিতি নেই।
১৪। দুই বই মেলার স্টলের তেমন স্থ্যাপত্যপার্থক্য নেই।
লেখক: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের কিউরেটর ও সাবেক শিক্ষাসচিব