ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একধরনের অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন। একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনগুলোর ফটকে তালা লাগিয়ে দিয়েছেন। ফলে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা ভবনে প্রবেশ করতে পারছেন না। ছাত্রদের দাবি, অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাতটি সরকারি কলেজের অধিভুক্তি বাতিল করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি ও জিএস সব শিক্ষার্থীকে ক্লাসে ফেরার আহ্বান জানালেও শিক্ষার্থীরা তাতে সাড়া দেননি। অধিভুক্তি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বিভিন্ন কলেজের অধিভুক্তি নতুন কোনো বিষয় নয়। ব্রিটিশ আমলেও পূর্ব বাংলার কলেজগুলো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেও অনেক কলেজ সম্পৃক্ত ছিল। এরপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে সব কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় চলে যায়। কিন্তু সারা দেশের সব কলেজের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে হিমশিম খায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। সেশনজট অনেক বেড়ে যায়।
এ অবস্থায় কিছু সরকারি কলেজ আবার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, এতে তাঁদের শিক্ষার ক্ষতি হচ্ছে। পরীক্ষা পিছিয়ে যাচ্ছে ও তাঁরা আবার সেশনজটের মুখোমুখি হচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়টি কর্তৃপক্ষের বিবেচনা করা প্রয়োজন। অন্যদিকে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরাও প্রায়ই আন্দোলনে নামেন। শাহবাগ মোড়ে বিক্ষোভ প্রদর্শনের ফলে নগরজুড়ে হাজার হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়ে। তাঁদের দাবি, তাঁরাও বর্ধিত হারে সেশনজটের কবলে পড়ছেন। এমনকি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোর তুলনায় তাঁরা পিছিয়ে পড়ছেন। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই একটি সমাধান দিতে হবে।
সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করেন, সমস্যাটি ব্যবস্থাপনাগত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ব্যবস্থাপনায় সাতটি কলেজের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর পরীক্ষা সময়মতো নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আবার এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষায়ও ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে। তার পরও আমরা মনে করি, লাগাতার কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাসূচি অচল করে দেওয়া এর সমাধান নয়। কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়েরও কিছু নিয়ম-কানুন ও বাধ্যবাধকতা আছে। তাই এ ক্ষেত্রে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সময় দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়া উচিত। সেই সময়ের মধ্যে কোনো সিদ্ধান্ত না এলে তাঁরা আবার আন্দোলনে যেতে পারবেন। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ভাবতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত না করে তাঁরা সাত কলেজের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন কি না। উভয় দিকে সমস্যা তৈরি না করে তাঁদের একটি সমাধানে আসতে হবে।