ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতিতে অমলিন হয়ে আছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালের সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু প্রতীক্ষিত সমাবর্তন অনুষ্ঠান উদ্বোধন, আচার্যের আসন অলংকৃত করা ও কৃতী ছাত্রছাত্রীদের তাদের অর্জিত ডিগ্রি প্রদানের মহান দায়িত্ব পালন বঙ্গবন্ধুর ঐ দিনের কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত প্রথম করণীয় হিসেবে নির্ধারিত ছিল। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির পদাধিকার বলে তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর অর্থাত্ আচার্য। শুক্রবার (২০ মার্চ) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
নিবন্ধে আরও জানা যায়, সমাবর্তন অনুষ্ঠানটি ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হওয়ার সব আয়োজন সম্পন্ন হয়েছিল। কিন্তু ১৫ আগস্ট সূর্যোদয়ের আগেই নিষ্ঠুরতার শিকার হন বঙ্গবন্ধু; হত্যা করা হলো তাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে বরণ করে নেওয়ার সব আয়োজন এক মুহূর্তে স্তব্ধ হয়ে গেল। উল্লেখ করা নিষ্প্রয়োজন যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়।
তত্কালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মতিন চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর আগমন উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ৪২ সদস্যের একটি অভ্যর্থনা কমিটি গঠন করেন, নিয়োজিত করেন স্বেচ্ছাসেবী দল এবং বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তার জন্য যথাযথ পুলিশ পাহারার ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়। এসব সত্ত্বেও সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে ১৪ আগস্ট দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে ও সায়েন্স অ্যানেক্স ভবনের সম্মুখে দুটি বোমা বিস্ফোরিত হয়। অধিকন্তু জগন্নাথ হলের উভয় গেট ও শামসুন্নাহার হলের বেষ্টনীপ্রাচীরের গায়ে পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস পালন এবং মুসলিম বাংলা প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়ে হাতে লেখা কয়েকটি পোস্টার লাগানো হয়েছিল। এ ধরনের অশনিসংকেতকে বিশেষ আমলে না আনলেও যাতে নাশকতামূলক কোনো ঘটনা না ঘটে, সেজন্য সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। বঙ্গবন্ধুর নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর উদ্দেশে লেখা মানপত্র ও তার জন্য প্রস্তুত কয়েকটি স্মারক-বস্তু অদৃশ্য হয়ে যায়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুকে দেওয়ার জন্য যে মানপত্রটি তৈরি করা হয়েছিল সেটিসহ একটি রুপার ট্রে, একটি ক্যাসকেট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম-সংবলিত ক্রেস্ট, একটি ভেড়ার চামড়ার রুমাল। দীর্ঘ ৩৪ বছর পর ২০০৯ সালের ২ ডিসেম্বর (বুধবার) রেজিস্ট্রারের সিন্ধুকে পাওয়া যায়। তত্কালীন সহকারী রেজিস্ট্রার আমির হোসেন তার ব্যক্তিগত নথি খোঁজার সময় এগুলো পেয়ে ফাইলের নিচে রেখে দেন; পরে তার কথার সূত্র ধরে পরবর্তী উপ-রেজিস্ট্রার জীবন কুমার মিশ্র উল্লিখিত সামগ্রী উদ্ধার করেন। বঙ্গবন্ধুর আগমন উপলক্ষ্যে তৈরি সেদিনের আমন্ত্রণপত্রটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও ডাকসু সংগ্রহশালায় রয়েছে। এসব বিরল স্মৃতিসামগ্রীর চিত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সৌজন্যে প্রাপ্ত।
লেখক : ড. আয়শা বেগম, অনারারি প্রফেসর, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়