রাজধানীর কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে নামার পর এক শিক্ষার্থী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এ ঘটনায় আজ সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন শিক্ষার্থীরা।
গতকাল রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর কুর্মিটোলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ওই ছাত্রী বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালের (ঢামেক) ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসাধীন বলে জানা গেছে।
ধষর্ণের ঘটনায় তার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীরা সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন রাজু ভাষ্কর্যের পাদদেশে প্রতিবাদ সমাবেশ করবে।
ছাত্রলীগ গভীর রাতে বিক্ষোভ মিছিল করে ধর্ষকের শাস্তি দাবি করেছে। ছাত্রদল আজ দুপুর সাড়ে বারোটায় মিছিল করবে।প্রতিবাদ সমাবেশের জন্য একটি ইভেন্টও খোলা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। যাতে এখন পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার ব্যক্তি প্রতিবাদ সমাবেশটিতে যোগ দেবেন বলে আশাব্যক্ত করেছেন, যাদের মধ্যে ছয় শতাধিক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ধর্ষণের শিকার ওই শিক্ষার্থীর দেহে নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। ধর্ষণের শিকার হওয়া ওই তরুণী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
সহপাঠীদের কাছ থেকে জানা যায়, সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটার দিকে শেওড়া যাওয়ার উদ্দেশে ঢাবির বাসে ওঠেন ওই শিক্ষার্থী। সন্ধ্যা ৭টার দিকে কুর্মিটোলায় বাস থেকে নামার পর অজ্ঞাত ব্যক্তি তার মুখ চেপে তাকে পার্শ্ববর্তী একটি স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে অজ্ঞান করে ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়। পরে তার ১০টার দিকে জ্ঞান ফিরলে তিনি নিজেকে নির্জন স্থানে অবিষ্কার করেন। পরে সেখান থেকে সিএনজি যোগে নিজ গন্তব্যে পৌঁছালে তাকে রাত ১২টার দিকে ঢামেক হাসপাতালের ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারে ভর্তি করা হয়।
এদিকে ছাত্রীকে ধর্ষণের প্রতিবাদে গভীর রাতে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে তারা। একইসঙ্গে বিচার না হওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।
আজ সোমবার রাত আড়াইটার দিকে এই মিছিল বের করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। মিছিলটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে শুরু হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে এসে শেষ হয়। মিছিল পরবর্তী সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তারা।
সমাবেশে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনসহ কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় `আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকের ঠাই নাই; ধর্ষকের কালো হাত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও স্লোগান দেয় তারা। সমাবেশে সোমবার সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যে প্রতিবাদী মানববন্ধনের ডাক দেয় সংগঠনটি।
এই বিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। একজন নারীর ধর্ষণের ঘটনা গোটা জাতির জন্য লজ্জাজনক। এই ঘটনায় ধর্ষকের শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ছাত্রলীগ আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস বলেন, কিছু মানুষরূপী নরপিশাচ এই ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা এসব নরপিশাচদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
এই বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমরা নারীর ওপর নিপীড়নমুক্ত পৃথিবী দেখতে চাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বোনের নিপীড়নের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার বেদনাহত। এই ঘটনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জেগে থাকবে। ঘটনার প্রতিবাদে সকাল সাড়ে দশটায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আমরা প্রতিবাদী মানবন্ধনের ডাক দিয়েছি। বিচার প্রত্যাশী সকলকেই অংশ নেওয়ার আহবান জানাচ্ছি।
এছাড়াও এই ঘটনায় তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। মিছিলটি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়।
এদিকে আজ সোমবার দুপুর ১২ টায় মধুর ক্যান্টিন থেকে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। সোমবার বেলা ১২টায় মধুর ক্যান্টিন থেকে ছাত্রদল প্রতিবাদ মিছিল বের করবে বলে জানিয়েছেন ছাত্রদলের নেতারা।
ঢাকা মেডিকেলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ছাত্রদল নেতারা বলেন, আপনারা জানেন, ‘এমনতিইে আমরা ক্যাম্পাসে বাধামুক্তভাবে প্রবেশ করতে পারি না। কিন্তু আমাদের সহপাঠি বোনের ওপর যে অত্যাচার হয়েছে, সেই অপরাধীর শাস্তির দাবিতে আমরা মাঠে নামবো। দুপুর বারোটায় মধুর ক্যান্টিন থেকে ছাত্রদল প্রতিবাদ মিছিল বের করবে।’